‘বন্দুকযুদ্ধ’ নয়, এবার র‌্যাবের সাথে ‘ধস্তাধস্তিতে’ একজনের মৃত্যু!

নিজস্ব প্রতিবেদক

জানুয়ারি ২, ২০২২, ০৯:১৫ এএম

‘বন্দুকযুদ্ধ’ নয়, এবার র‌্যাবের সাথে ‘ধস্তাধস্তিতে’ একজনের মৃত্যু!

‘বন্দুকযুদ্ধ’ নয়, এবার র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন—র‌্যাবের সাথে ‘ধস্তাধস্তিতে’ একজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার রাতে গাজীপুরের টঙ্গীতে। নিহত ব্যক্তির নাম আসাদুল ইসলাম আসাদ (৪৫)। আসাদ মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি থানার হাসাইল গ্রামের মৃত আব্দুল হাইয়ের ছেলে। তিনি এরশাদনগর ৫নং ব্লকে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন এবং একটি গাড়ির গ্যারেজ কাজ করতেন।

তবে র‌্যাব দাবি করছে, আসাদ মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন। ধস্তাধস্তির সময় দুই র‌্যাব সদস্যও আহত হয়। আসাদকে হাসপাতালে নেওয়ার ২০ মিনিট পর তিনি মারা যান।

টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক নুসরাত বলেন, হাসপাতালে আনার পূর্বেই তার মৃত্যু হয়েছে। এ সংক্রান্ত বিষয়ে এখনই বিস্তারিত কিছু বলা যাবে না।

আসাদের স্ত্রী জেসমিন আক্তারের ভাষ্যমতে, দুপুর দেড়টার দিকে র‌্যাব পরিচয়ে ৬-৭ জন ব্যক্তি এরশাদনগর ৫নং ব্লকের কবরস্থান সংলগ্ন তাদের টিনশেড বাড়িতে প্রবেশ করে। পরে মাদক আছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে পুরো বাড়িতে তল্লাশি চালায় র‌্যাব সদস্যরা। এর কিছুক্ষণ পর র‌্যাবের পোশাক পরা আরও একটি দল বাড়িতে প্রবেশ করে। মাদকের তথ্য জানতে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ঘরের ভেতর আসাদকে আটকে রেখে পিটিয়ে নির্যাতন করে। বারবার পানি চাইলেও এক ফোঁটা পানি দেয়নি র‌্যাব সদস্যরা। আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।

নিহত আসাদের ছেলে নিহাদ বলেন, বাবাকে যখন মারধর করা হচ্ছিল তখন আমাকে পাশের রুমে আটকে রাখা হয়। র‌্যাব সদস্যরা আমাকে মেরে ফেলবে— এমন হুমকি দিয়ে বাবার কাছ থেকে তথ্য জানতে চায়। কিন্তু আমার বাবা বরাবরই মাদকের সঙ্গে জড়িত না বলে র‌্যাব সদস্যদের জানায়। এ সময় র‌্যাব সদস্যরা পাশের রুম থেকে আমাকে চিৎকার করার পরামর্শ দেয় যেন বাবা ভয়ে স্বীকারোক্তি দেয়। কিছুক্ষণ পরপরই বাবাকে নির্যাতন চালায় তারা। নির্যাতনের এক পর্যায়ে সন্ধ্যা ৬টার দিকে অচেতন অবস্থায় বাবাকে র‌্যাবের গাড়িতে উঠিয়ে হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার পথেই বাবা মারা গেছেন।

আসাদের মরদেহ হাসপাতালে আনা হলে স্বজন ও এলাকাবাসী বিক্ষোভ করে র‌্যাব সদস্যদের বিচার দাবি করেন।

রাত ৯টায় হাসপাতালে আসেন র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) আব্দুল্লাহ আল মোমেন। এ সময় তিনি নিহতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি জানান, নিহত আসাদ মাদক কারবারে জড়িত— এমন খবরে র‌্যাব সদস্যরা তার বাড়িতে অভিযান চালায়। পরে সেখানে র‌্যাব সদস্যদের সঙ্গে তার ধস্তাধস্তি হয়। এ সময় দুই র‌্যাব সদস্যসহ তিনি আহত হন। আহত অবস্থায় আসাদকে হাসপাতালে নিয়ে আসার ২০ মিনিট পর তিনি মারা যায়।

আসাদের বিরুদ্ধে আগের কোনো মাদক মামলা আছে কিনা— এমন প্রশ্নে মোমেন বলেন, এ বিষয়টি খতিয়ে দেখছি, পরে বিস্তারিত জানানো হবে।

Link copied!