ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে দেশের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত টিকা না পাওয়ার আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রস্তুতকার প্রতিষ্ঠান ‘জনসন অ্যান্ড জনসন’ থেকে করোনার প্রতিষেধক টিকা কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। জাতিসংঘের সংস্থা ইউনিসেফের মাধ্যমে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে এ টিকা কেনা হবে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্ভাবিত এ টিকা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে কেবল এক ডোজ ব্যবহারেই সর্বোচ্চ কার্যকরিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। টিকাদান কার্যক্রমে ধীরগতি ও দীর্ঘ সময়ের অবস্থা থেকে উত্তরণে এই সিদ্ধান্ত বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে। তাছাড়া এই ভ্যাকসিন ফাইজার বা মডার্নার মতো ফ্রিজারে খুব কম তাপমাত্রায় রাখার দরকার হয় না। সাধারণ ফ্রিজে রাখলেই হয়। ফলে এই টিকা দিতে খরচও কম হবে।
গত সপ্তাহে ভারত টিকা রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এ টিকা আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. হেলাল উদ্দিন জানান, জনসনের টিকা কেনার বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে এর প্রক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি। এ জন্য সময় লাগবে।
বর্তমানে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি টিকা দেশের বেক্সিমকো ফার্মার মাধ্যমে আমদানি করছে সরকার। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে তিন কোটি ডোজ টিকা আমদানির চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। এরই মধ্যে ৭০ লাখ ডোজ টিকা দেশে এসেছে। তবে ভারতের নিজস্ব প্রয়োজন মেটানোর পর রপ্তানি করা হবে- এমন সিদ্ধান্তের কারণে সময়মতো টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
যদিও এর আগে একবার ভারত টিকা রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলেও বাংলাদেশ টিকা পেয়েছে। সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকায় সফরকালে জানান বাংলাদেশে টিকা সরবরাহে কোনো অসুবিধা হবে না।
এদিকে, ভারত রপ্তানি বন্ধ রাখার কারণে কোভ্যাক্স থেকে যে টিকা পাওয়ার কথা ছিল, তাও সময়মতো পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ, কোভ্যাক্স ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে টিকা নিয়ে সরবরাহ করবে। এ বৈশ্বিক উদ্যোগের প্রথম দফার টিকা মার্চের প্রথম সপ্তাহে পাওয়ার কথা থাকলেও তা এখন মে মাসে পাওয়া যাবে।
মে মাসে কয়েকটি ধাপে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি ১ কোটি ৯ লাখ ৮০ হাজার টিকা আসবে। তবে সরকার টিকা পাওয়ার জন্য একটি মাত্র উৎসের ওপর নির্ভর করতে চাইছে না। এ জন্য বিকল্প উৎস হিসেবে জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আরেকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভারত টিকা রপ্তানি বন্ধ করার পর কোভ্যাক্স ই-মেইলে বাংলাদেশকে জানিয়েছে, ভারত রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশকে ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হবে। টিকার সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় বাংলাদেশের চলমান টিকাদান কর্মসূচি ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ প্রেক্ষাপটেই অক্সফোর্ডের টিকার বিকল্প হিসেবে জনসনের টিকা আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
ওই কর্মকর্তা বলেন, দেশের কোনো মানুষ যাতে টিকাদান কর্মসূচির বাইরে না থাকে, সে জন্য আরও তিন কোটি ডোজ টিকা আমদানি করতে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই নির্দেশনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আগে থেকেই জনসনের টিকা কেনার বিষয়ে আলোচনা শুরু করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
ভারত ২৫ মার্চ টিকা রপ্তানি বন্ধ করার পর জনসনের টিকা কিনতে সরকারি উদ্যোগে গতি বেড়েছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, অর্থ মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্নিষ্ট সব পক্ষ জনসনের টিকা কেনার বিষয়ে একমত হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী সেপ্টেম্বর নাগাদ জনসনের টিকা পাওয়া যাবে।