তিন থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে ওমিক্রন

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জানুয়ারি ৪, ২০২২, ০৭:৪৩ পিএম

তিন থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে ওমিক্রন

বাংলাদেশে আগামী ৩ থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশাঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিরাময় ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ আলমগীর হোসেন বলেছেন, “এখনও মানুষ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টেই বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন, কিন্তু ওমিক্রনের সংক্রমণ শক্তি বেশি হওয়ায় আরও বেশি সংখ্যক লোক আক্রান্ত হবে বলে তিনি ধারণা করছেন।”

রোগতত্ত্ব, রোগ নিরাময় ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ আলমগীর হোসেনও আশঙ্কা করছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশে ব্যাপকহারে ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়তে পারে।

তিনি বলছেন, “বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমরা দেখছি যে বাংলাদেশ বা আমাদের সাউথ এশিয়ান অঞ্চলে এখন পর্যন্ত ওমিক্রন সংক্রমণ তুলনামূলকভাবে কম। কিন্তু যেহেতু আমাদের দেশে ট্রাভেল আছে অনেক (অনেক মানুষ যাতায়াত করেন), তাই বন্দরে স্ত্রিনিং করে এটা আটকানো কঠিন।”

ভাইরাসটির পরিবর্তন হচ্ছে জানিয়ে আলমগীর হোসেন জানান, বাংলাদেশে এর মধ্যেই ১০টি সংক্রমণ পাওয়া গেছে। যেকোনো সময় এটা বেড়ে যেতে পারে।

বিশ্বব্যাপী তথ্য উপাত্ত এবং ওমিক্রণ ভাইরাসের দ্রুত বিস্তার ক্ষমতা, দুটি মিলিয়ে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করছেন যে, আগামী তিন থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে হয়তো ওমিক্রন সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

আলমগীর হোসেন বলছেন, “এখন আমরা পাচ্ছি একটা দুইটা করে। কিন্তু আলটিমেটলি হয়তো আমরা আগামী তিন থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে দেখবো যে, ব্যাপক করোনা পেশেন্ট ওমিক্রনে আক্রান্ত।”

ওমিক্রন বাড়লেও হাসপাতালে ভর্তির হার হবে কম

তবে ওমিক্রন সংক্রমণ বাড়লেও তাদের সবাইকে হয়তো হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে না বলে এই বিজ্ঞানী ধারণা করছেন।

“বৈশ্বিক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আমরা আশা করছি, ওমিক্রনে (আক্রান্ত হলেও) হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা কম হবে।”- জানিয়েছেন আলমগীর হোসেন।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওমিক্রন সংক্রমণের হার পর্যালোচনা করে তিনি জানান, অন্যান্য দেশে ওমিক্রনের মৃদু সংক্রমণ হলেও হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বা মৃত্যুর হার কম। কিন্তু একই সময়ে যদি অনেক বেশি রোগী হয়, সেটি দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপরও ব্যাপক চাপ তৈরি করবে।

আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আরও বলছেন, “আমরা এরকম মৃদু পেশেন্টের ক্ষেত্রে হোম আইসোলেশনের কথা বলি। কিন্তু বাংলাদেশে সকল মানুষের ক্ষেত্রে সেই সুযোগ নেই যে, বাসায় আইসোলেশনে থাকবে।”

তিনি বলছেন, “আরেকটি কথা হলো, ভাইরাস যতো মৃদু হোক না কেন, যাদের বয়স বেশি, যাদের বিভিন্ন ধরনের রোগ আছে, তাদের জন্য কিন্তু যেকোনো মৃদু ভাইরাস বিপজ্জনক হয়ে দেখা দিতে পারে। এজন্য বয়োজ্যেষ্ঠ জনগণ এবং যারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত, ওমিক্রন যেন তাদের আক্রমণ করতে না পারে, সেজন্য তাদের অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যতোই মৃদু হোক না কেন, এটা তাদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে দেখা দিতে পারে।”

এজন্য সতর্ক হওয়া, স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার ওপর জন্য তিনি পরামর্শ দিয়েছেন।

যেসব পদক্ষেপ নিতে বলছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওমিক্রন বাড়তে থাকায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যেসব সুপারিশ করেছে, তার মধ্যে যানবাহনে অর্ধেক আসনে যাত্রী পরিবহন, ঘরে-বাইরে মাস্ক পরা এবং সামাজিক অনুষ্ঠান সীমিত করার মতো পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

এদিকে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ওমিক্রন সংক্রমণ ঠেকাতে আগামী সাতদিনের মধ্যেই বিধিনিষেধ জারি করার জন্য সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সরকারের এসব ঘোষণা এলো।

তিনি আরও বলেন, “আমরা দেশকে নিরাপদে রাখতে চাই, দেশের অর্থনীতি স্বাভাবিক থাকুক। সবাইকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে কাজ করতে হবে।”

এর আগে, গত সোমবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছিলেন, ওমিক্রন ঠেকাতে প্রস্তুতিমূলক এই সভা থেকে বেশ কয়েকটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তারমধ্যে একটি হলো কোন রেস্টুরেন্টে গেলে টিকার সনদ সাথে নিতে হবে। যদি টিকার সনদ না নেয়া হয় তাহলে ঐ রেস্টুরেন্টকেও জরিমানা করা হবে।

মঙ্গলবার বাংলাদেশে নতুন করে করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হয়েছেন সাতশ জন। ফলে দৈনিক শনাক্তের হার ৪ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে ৭৭৫ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের।

এ নিয়ে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ১৫ লাখ ৮৭ হাজার ৯১৫ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ২৮ হাজার ৮৭ জনের।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

Link copied!