শীতপ্রধান দেশের ফুল টিউলিপ। ফলে আমাদের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশে কখনো এরকম ফুলের দেখা মেলে না। কিন্তু শীতপ্রধান দেশ না হলেও এ দেশের মাটিতে সেই টিউলিপ ফুল ফুটিয়ে রীতিমত অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কেওয়া পূর্বখণ্ড গ্রামের ফুল চাষী দেলোয়ার হোসেন। তার বাগানজুড়ে এখন রাজসিক ফুল টিউলিপ হাসছে।
উপহার থেকে চাষ শুরু
টিউলিপ ফুল চাষের নায়ক দেলোয়ার হোসেন তার বাগানের নাম দিয়েছেন মৌমিতা ফ্লাওয়ারস গার্ডেন। শুধু এ বছরই নয়, গত বছরও তিনি বাগানে টিউলিপ ফুটিয়েছেন। তার টিউলিপ চাষের খবরে পুরো দেশে হইচই ফেলে দেয়। কীভাবে এই অসম্ভবকে সম্ভব করা হলো জানতে চাইলে দেলোয়ার হোসেন দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, আমি ২০১৬-১৭ সালের দিকে ওরিয়েন্টাল লিলি নিয়ে কাজ করতাম। আমরা যখন ওরিয়েন্টাল লিলি নিয়ে কাজ করছি, তখন নেদারলেন্ডসের কোম্পানি ২০১৯ সালের দিকে টিউলিপের কিছু বাল্ব আমাদের উপহার দেয়। বাল্বগুলো আমরা আমাদের এখানকার বাগানে লাগানোর পর দেখলাম তাদের ট্রিটমেন্ট অনুযায়ী ফুলগুলো ফুটেছে। ফোটার পর আমরা তাদের সাথে যোগাযোগ শুরু করলাম। পাশাপাশি টিউলিপ নিয়ে পড়াশুনাও শুরু করলাম। কীভাবে কী করতে হবে, কী সার ব্যবহার করতে হবে, সবকিছু জানলাম।
এসব তথ্য জানার পরে আমি আরো ২০ হাজার বাল্ব কিনে আনলাম। আনার পর দেখি এটা আরো বেশি সমৃদ্ধ। এরপর আমরা এ বছর আরো ৭০ হাজার বাল্ব কিনেছি।
বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসে দর্শনার্থী
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দেলোয়ারের টিউলিপ ফুল দেখতে ছুটে আসেন অসংখ্য দর্শনার্থী। টিউলিপের ওই বাগানে প্রবেশ করতে কোন টিকেটের প্রয়োজন হয় না। শুধু খেয়াল রাখতে হয় জাতে কোন ফুল নষ্ট না হয়। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ আসে ওই বাগান দেখার জন্য।
এমনই একজন সম্রাট হোসেন। বন্ধুদের সাথে ঢাকার ধানমন্ডি থেকে এসেছেন দেলোয়ারের টিউলিপ বাগান দেখার জন্য। তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, এখানে এসে ভীষন ভালো লাগা কাজ করছে। মনে হচ্ছে নেদারলেন্ডসে এসে পড়েছি। পরিবেশটাও বদলে গেছে। এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগগুলো আরো বেশি করে নেওয়া উচিত।
বৃষ্টি বড় সমস্যা
টিউলিপ ফুল যেহেতু শীতপ্রধান দেশের জন্য তাই এর জন্য প্রয়োজন হয় বিশেষ ধরনের পরিচর্যা। বৃষ্টির পানি পরলেই এই ফুলের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই এই ফুলকে বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষার জন্য উপরে ছাউনির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরেই এ বাগানে কাজ করে আসছেন রমজান আলী। ফুলের পরিচর্যা নিয়ে তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, এ ফুল চাষে অনেক পরিচর্যার বিষয় আসে। কারণ বৃষ্টি হলেই ফুল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা আছে। তাই আমরা পর্যাপ্ত ছাউনি ব্যবহার করি।
নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে তাপমাত্রা
টিউলিপ ফুল ফুটতে সাধারণত প্রয়োজন হয় ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার। কিন্তু আমাদের দেশে অনেক সময় দিনের বেলাতেই ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকে। ফলে অনেক ধরনের প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়তে হয় তাদের।
দেলোয়ার হোসেন বলেন, কিছু কিছু সমস্যা আমাদের ফেস করতে হয়। সব সময় ফুলগাছের রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়। আমরা তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু কৃত্রিম বস্তু তৈরি করছি। টিউলিপের জন্য প্রয়োজন ৯-১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। সেখানে সকালেই তাপমাত্রা দেখা যায় ২০-২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তারপরও আমরা সেটা কাটানোর চেষ্টা করছি। পাশাপাশি আমরা আমাদের স্বপ্ন পূরণ করতে সক্ষম হয়েছি। এখন ঠিকমত বাজারজাতকরণ করতে পারলেই আমরা স্বপ্নপূরণের দিকে এগিয়ে যেতে পারব।