অভিনেতা ফারুক: খেলাপি ঋণ ঠিক সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা নয়

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মে ১৬, ২০২৩, ১০:৫২ পিএম

অভিনেতা ফারুক: খেলাপি ঋণ ঠিক সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা নয়

সম্প্রতি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে-ঢাকাই চলচ্চিত্রের সদ্য প্রয়াত চিত্রনায়ক ফারুকের কাছে ব্যাংক ঋণ রয়েছে পাঁচ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা। এমন তথ্যে বিভ্রান্তিতে পড়েছেন অনেকে। অনেকে অবিশ্বাস্য বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন। ঋণের বিষয়টি গুজব বলেও অনেকে দাবি করছেন।

তবে প্রকৃত তথ্য হলো-মুক্তিযোদ্ধা, অভিনয়শিল্পী ও সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ফারুক সরকারি সোনালী ব্যাংকের কাছ থেকে প্রায় ৫৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। সেই ঋণের বিপরীতে খেলাপীর পরিমাণ হয়েছিল প্রায় ১০০ কোটি টাকা। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকবার তার সাথে যোগাযোগ করেও অর্থ আদায় করতে পারেনি। এরই বিপরীতে মামলা চলমান রয়েছে। সোনালী ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

চলমান রয়েছে মামলা

সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়ের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মো. রেজাউল করিম দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, দুদিন ধরে শুনে আসছি তার নাকি সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ খেলাপী রয়েছে। আসলে আমাদের ব্যাংক থেকে তিনি ৫৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। সেটি বিভিন্ন সময়ে সুদ আসলে ১০০ কোটি টাকা হয়েছে। তবে তার ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছিল। এখনও মামলা চলমান রয়েছে। তাই আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালে ফারুক ডাইং এন্ড নিটিং প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে তিনি ৫৬ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। যদিও বিভিন্ন সময়ে এই ঋণের পরিমাণকে ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ বলে জানিয়েছিলেন তিনি। আর এই ঋণের বিপতীতে সুদসহ প্রায় শতকোটি টাকা খেলাপী হয়েছিলেন তিনি। ২০১৩ সালে এই ঋণ আদায়ের জন্য সোনালী ব্যাংক মামলা করলেও কোন কিস্তি পরিশোধ করেননি তিনি। ২০১৬ সালে সোনালী ব্যাংকের শীর্ষ ঋণ খেলাপীর তালিকায় ছিলেন সদ্য প্রয়াত এই অভিনেতা। এছাড়া, খেলাপী ঋণ থাকা সত্ত্বেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় ওই সময় তার ওপর দিয়ে সমালোচনা ও বিতর্কের ঝড় বইয়ে যায়।  এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে তার প্রার্থীতা বৈধ কিনা তা জানতে চেয়ে রিট করা হয়। সেই রিটে তাকে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ খেলাপী উল্লেখ করা হয়েছিল।

ব্যাংকের একাধিক সূত্র জানায় ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে চিত্রনায়ক ফারুকের ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়। যার ফলে ঋণ খেলাপীর তালিকায় নাম না থাকায় নির্বাচনে অংশ নিতে আইনী বাধা ছিল না। এই ঋণের বোঝা বহন করেই তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

মওকুফের আবেদন সন্তানদের

 

এদিকে বেশ কয়েকবার ঋণ মওকুফের আবেদনও করেছেন বলে জানায় সোনালী ব্যাংকের জিএম রেজাউল করিম। তিনি বলেন, বেশ কয়েকদফা ঋণ মওকুফের আবেদন করেছে তার সন্তানেরা। তবে এ নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।

এদিকে চিকিৎসা বাবদ ১৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। একজন ঋণ খেলাপী ব্যাংকের অর্থ পরিশোধ না করে বিদেশে চিকিৎসায় অর্থ ব্যয় করতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে তিনি যে সব খাত থেকে অর্থ নিয়েছে সেগুলো ব্যাংকের কাছে বন্ধকী ছিল না। তাই আমরা আইনীভাবে বাধা দিতে পারি না।

এদিকে, চিত্রনায়ক ফারুকের নামে ঋণখেলাপি হওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে সেটাকে ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেছেন প্রযোজক সমিতির সাবেক সভাপতি, চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্য ও প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু। আর চিত্রনায়ক ফারুকের সন্তান রওশন হোসেন এই বিষয়ে এখন মন্তব্য করতে রাজী হননি।

Link copied!