অন্তরালে থেকে বঙ্গবন্ধুকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করতেন বঙ্গমাতা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

আগস্ট ৮, ২০২১, ১২:০৮ এএম

অন্তরালে থেকে বঙ্গবন্ধুকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করতেন বঙ্গমাতা

জাতির পিতা সম্পর্কে আমরা সবাই কম-বেশি জানি। যদিও এত বিশাল ব্যক্তিত্বকে সম্পূর্ণরুপে জানা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু আমার মা সম্পর্কে মানুষ খুব সামান্যই জানে। কারণ তিনি রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন না। তবে, তিনি অন্তরালে থেকে আমার বাবাকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করতেন। বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন সময় যখন জেলখানায় থাকতেন তখন তার অবর্তমানে সংগঠন পরিচালনার প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা তিনিই করতেন।

মা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেছিলেন। রবিবার (৮ আগস্ট) বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯১ তম জন্মবার্ষিকী।

১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্ম বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের। তার ডাকনাম ছিলো রেণু। পিতা শেখ জহুরুল হক ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমানের জ্ঞাতি সম্পর্কের চাচা এবং গ্রামের বর্ধিষ্ণু কৃষক পরিবার।

শৈশবেই বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের পিতা ও মাতা দুজনই মারা যান। তার দাদা তখন বঙ্গবন্ধুর বাবাকে ডেকে তাদের বিয়ে সম্পর্কে আগ্রহ প্রকাশ করেন। শৈশবকালেই তাদের দুজনের বিয়ের রেজিস্ট্রি করা হয়।

তখন থেকেই বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত এবং রাজনৈতিক জীবনের অতন্দ্র সহচর হয়ে ওঠেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন কাজের পেছনে তিনি অনুপ্রেরণাদাতা হয়ে ওঠেন। স্ত্রী হিসেবে তাঁর জীবনকালে কখনো স্বামীকে একনাগাড়ে দুই বছর কাছে পাননি। কিন্তু কোনো দিন কোনো অভিযোগ ছিল না। যত কষ্টই হোক কখনো ভেঙে পড়তে দেখা যায়নি তাঁকে।

বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে পদে পদে তিনি আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করার ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে গেছেন। বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ছয় দফা ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধু যখন বারবার পাকিস্তানি শাসকদের হাতে বন্দি জীবন-যাপন করছিলেন, তখন আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের কাছে ছুটে যেতেন।

বঙ্গমাতা সে সময় তাদেরকে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা পৌঁছে দিতেন। একই সাথে তিনি বঙ্গবন্ধুর সহকারীদের লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা যোগাতেন।

১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু যখন পাকিস্তানে কারাবন্দি ছিলেন, সে গভীর অনিশ্চয়তা ও শঙ্কার মাঝেও তিনি অসীম ধৈর্য, সাহস ও বিচক্ষণতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন।

মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে চারপাশের ভঙ্গুর অবস্থার মধ্যেও বঙ্গমাতা দেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে কাজ করেছেন। সাহায্য করেছেন গরিব, এতিম ও অসহায় মানুষদের। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তিনি বীরাঙ্গনাদের বিয়ের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে তাদেরকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্বও পালন করেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাত্রিতে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে স্বাধীনতা বিরোধীরা। খুনিদের বুলেটের আঘাতে নির্মমভাবে শহীদ হন ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।

আগামীকাল তার ৯১ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই মহীয়সী নারীর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।

তিনি বলেন, বঙ্গমাতা কেবল জাতির পিতার সহধর্মিণীই ছিলেন না, বাঙালির মুক্তিসংগ্রামেও তিনি ছিলেন অন্যতম অগ্রদূত। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের নেপথ্যেও ছিলেন তিনি। তাঁরই পরামর্শে বঙ্গবন্ধু হৃদয় থেকে উৎসারিত অলিখিত এ ভাষণ প্রদান করেন। দেশ ও জাতির জন্য অপরিসীম ত্যাগ, সহমর্মিতা, সহযোগিতা ও বিচক্ষণতা তাঁকে বঙ্গমাতায় অভিষিক্ত করেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব যে আদর্শ ও দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন, তা যুগে যুগে বাঙালি নারীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

তিনি আশা করেন, তাঁর জীবনি চর্চার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন, বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অনেক অজানা অধ্যায় সম্পর্কে জানতে পারবে।

দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগ সকাল ৯টায় বনানী কবরস্থানে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, কোরানখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করছে।

Link copied!