আইএমএফ এর কাছে আমাদের নীতি সার্বভৌমত্ব আত্মসমর্পণ করা হয়েছে: ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

এপ্রিল ২৯, ২০২৩, ০৯:৩৪ পিএম

আইএমএফ এর কাছে আমাদের নীতি সার্বভৌমত্ব আত্মসমর্পণ করা হয়েছে: ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন আন্তর্জাতিক মূদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর কাছে দেশের নীতি প্রনয়নের সার্বভৌমত্ব আত্মসমর্পণ করে ঋণ নেয়া হয়েছে।

বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত 'ট্যাক্সিং দি ডিজিটাল ইকোনোমি: ট্রেড অফস এন্ড অপরচুনিটিজ' শীর্ষক এক সংলাপে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, "আমরা, অর্থনীতিবিদরা, রাজনৈতিক প্রভূরা, ব্যবসায়ীরা -কেউই সংস্কার কর্মসূচি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারিনি। এখন আইএমএফ কর্তৃক দেয়া সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করে আমরা টাকা নিয়েছি। এখন তা বাস্তবায়ন করতে হবে! এর মাধ্যমে কিছুটা হলেও আমাদের 'নীতি সার্বভৌমত্ব' আত্মসমর্পণ করা হয়েছে।"

শনিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, "আইএমএফের অন্তত তিনটি শর্ত আজকের আলোচনার সাথে মিল আছে। এক, কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে হবে। প্রতিবছর জিডিপির দশমিক ৫ শতাংশ হারে অতিরিক্ত কর আদায় করতে হবে। দুই, কর ছাড় যৌক্তিক করতে হবে। এই দুটি শর্ত আদেশ দিয়ে করা যাবে। আর তৃতীয় শর্তটি হলো, কর আদায়ে প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি। এটা আদেশ দিয়ে হবে না। এটা বিদ্যুতের দাম নয়, এটি সারের দাম নয়, আদেশ দিলাম, আর বেড়ে গেল। এসব শর্ত পূরণ করতে অনেক পরিশ্রম করতে হবে। এটাই বাস্তবতা।"

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, আইএমএফের ঋণ নেওয়ার বিষয়টি সরকার অনুমোদন দিল। কিন্তু এ নিয়ে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হলো না। এমনকি মন্ত্রিসভার অর্থনীতিবিষয়ক উপকমিটিতে আলোচনা হয়নি। স্থায়ী কমিটি কিংবা কেবিনেট সম্পৃক্ত ছিল না। জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তারা সই করলেন। তিনি প্রশ্ন রাখেন, বিদ্যুৎ-সারের দাম বেড়েছে, এর দায়িত্ব কে নেবে? জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ ছাড়া এ ধরনের সংস্কার কীভাবে এগিয়ে যাবে?’

সংলাপে বক্তারা কর আদায়ে ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউ (এনবিআর) এর অদক্ষতার নানা দিক তুলে ধরে তীব্র সমালোচনা করে বলেন, এনবিআর এর অদক্ষতার কারনে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, কর আদায়ে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করতে ব্যবস্হা নিতে হবে। সকল ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কর আদায়ে সাম্য প্রতিষ্ঠা এবং যারা কর আওতার বাইরে আছে তাদেরকে কর জালে আনতে পরামর্শ দেন তিনি।

তিনি বলেন, দেশে আউটসোর্সিং এ লাখ লাখ যুবক কাজ করছে। প্রত্যন্ত জেলা ঠাকুরগাঁও এ কাজ করে প্রায় ১ হাজার ৫ শ তরুন। এদের গড় মাসিক আয় ১০ হাজার। এদেরকে ট্যাক্সের আওতায় আনা হবে কি না, সেটা উচিত হবে কি না -এ ব্যপারে নীতি সহায়তা দিতে হবে।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, ডিজিটাল অর্থনীতি সম্প্রসারিত হচ্ছে, আরও হবে। এটিকে যথাযথভাবে চিন্হিত করে করারোপের নীতি গ্রহন করার উপযুক্ত সময় এখনই।

এর আগে এফবিসিসিআই সহ সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু এনবিআর এর আন্তরিকতায় ঘাটতি আছে অভিযোগ করে বলেন, এনবিআর এফবিসিসিআই এর ডাকে সাড়া দেয় না। এনবিআর এর দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এফবিসিসিআই এর গবেষণা বলছে দেশে ৬ কোটি লোক হোল্ডিং ট্যাক্স দেয়। তাহলে কর আদায় কেনো এতো অল্প সংখ্যক হবে? এই ৬ কোটির কি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নাই।

তিনি প্রশ্ন করেন, কেনো ইনসেন্টিভ দেয়া হবে সরকারী কর্মকর্তাদের ট্যাক্স আদায়ের জন্য? তারা কি বেতন নেয় না?

তিনি এনবিআর এ বিসিএস ক্যাডার নিয়োগ দিতে সুপারিশ করেন।

বাবু বলেন, ব্যবসা বানিজ্যের জন্য ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে দেশে। এখন পলিসি সাপোর্ট দরকার। ২০২৫ সাল নাগাদ আইসিটি ও আউটসোর্সিং খাতে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের টার্গেট। এক্ষেত্রে নীতি সহায়তা দরকার। বর্তমানে এখাত থেকে বৈদেশিক মূদ্রা আসছে ১ বিলিয়ন ডলারের একটু বেশী।

মূল প্রবন্ধ উপস্হাপন করেন সিপিডি'র বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ভারতে সবক্ষেত্রেই 'আধাঁর' ব্যবহার হয়। আমাদের এনআইডি এ কাজে বিবেচিত হতে পারে। এছাড়া কর আদায়ে যৌথ মূলধনী কোম্পানী নিবন্ধন অধিদপ্তর বা আরজেএসসি'র ডাটাবেইজ এনবিআর এর সাথে শেয়ার করলে হয়। এজন্য খুব বেশী খরচ করতে হয় না। শুধু নীতি সহায়তা দরকার হয়। তাহলে রাজস্ব আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করতে এনবিআর এর সুবিধা হবে।

সংলাপে অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) পরিচালক হাবিবুল্লাহ নেয়ামুল করিম, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সহসভাপতি মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন ও বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান তানজিবা রহমান। 

সংলাপ পরিচালন ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

Link copied!