আজ ১০ মহররম, বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর পবিত্র আশুরা। কারবালার শোকাবহ ও হৃদয়বিদারক ঘটনার এই দিনটি ধর্মীয়ভাবে বিশ্বের মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের কোটি কোটি মুসলিম এ দিনটি পালন করছে।
করোনাভাইরাসের কারণে গত দুই বছর স্বল্প পরিসরে হলেও এ বছর ব্যাপক আয়োজন ও কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করছে মুসলমান জনগণ। বিশেষ করে রাজধানীতে থাকা শিয়া সম্প্রদায়ের উদ্যোগে এবার ব্যাপক আয়োজনে শুরু হয় ঐতিহাসিক তাজিয়া মিছিল।
রাজধানীর ইমামবাড়া হোসেনী দালান থেকে সকাল ১০টায় এ তাজিয়া মিছিল শুরু হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে এবারের তাজিয়া মিছিল আজিমপুর, নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, সাইন্সল্যাব, জিগাতলা ও ধানমন্ডি ২ প্রদক্ষিণ করে। অন্য একটি তাজিয়া মিছিল পুরান ঢাকা থেকে শুরু হয়ে বকসীবাজার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাস, শাহবাগ, বাংলা মোটর হয়ে ধানমন্ডি-২ প্রদক্ষিণ করে। তাজিয়া মিছিলে উপস্থিত বেশিরভাগই কালো পাঞ্জাবি পরে ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ মাতম করতে দেখা গেছে।
এদিকে পবিত্র আশুরা উপলক্ষে রাজধানীর হোসেনি দালান ইমামবাড়া, বড় কাটারা ইমামবাড়া এবং এর আশেপাশের শিয়া সম্প্রদায় কেন্দ্রিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও ঐতিহ্যবাহী তাজিয়া (শোক) মিছিলকে ঘিরে নেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আর এই নিরাপত্তা জোরদারে কাজ করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
সকালে রাজধানীর হোসানী দালান ইমামবাড়া, বড় কাটারা ইমামবাড়া ও এর আশেপাশের শিয়া সম্প্রদায়ের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সতর্কাবস্থানে রয়েছেন। নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন র্যাব সদস্যরাও।গোয়েন্দা সদস্যরাও সতর্কাবস্থানে রয়েছেন।
তবে হোসেনি দালান ছাড়াও মোহাম্মদপুর, মিরপুর, বকশিবাজার, লালবাগসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকেও তাজিয়া মিছিল বের হয়।
অপরদিকে, সুষ্ঠুভাবে তাজিয়া মিছিল সম্পন্ন করতে দা, ছোরা, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি, লাঠি বহন নিষিদ্ধ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। একই সঙ্গে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
হিজরী ৬১ সনের ১০ মহররম (এই দিন) মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) ও তার পরিবার এবং অনুসারীরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়ে ইরাকের ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে শহীদ হন। কারবালার ঘটনা স্মরণ করে বিশ্বের মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটি পালন করে থাকে।
কোরআন, সুন্নাহ ও ইসলাম বিষয়ক মনীষীদের ভাষ্য মতে, পৃথিবীর শুরু লগ্ন থেকে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলআহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত বহু গুরুত্বপূর্ন ঘটনার অবতারনা হয়েছে এই আশুরার দিনে। হযরত আদম আলাইহিস সালামের সৃষ্টি, আল্লাহ তায়ালার নিকট তাঁর তওবা গ্রহণ, হযরত নূহ আলাইহিস সালামের মহাপ্লাবন থেকে যুদি পাহাড়ে অবতরন, ফেরাউনের কবল থেকে হযরত মুসা আলাইহিস সালামের মুক্তি, হযরত আইউব আলাইহিস সালামের কুষ্ট রোগ থেকে আরাগ্য লাভ, এমনকি এই দিনে কিয়ামত সংগঠিত হওয়ার বর্ননাসহ অনেক কারণে এ দিবসকে মুসলিমরা গুরুত্ব দিয়ে ইবাদাত বন্দেগির মধ্যে অতিবাহিত করে থাকেন। এ দিনের রোজার অনেক সওয়াব।