বিএনপির সাবেক মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার ১১তম মৃত্যৃবার্ষিকী আজ। ২০১০ সালের এই দিনে ক্যান্সারে আক্রান্ত এই রাজনীতিবিদ চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে মারা যান।
এ উপলক্ষে আবদুল মান্নান ভূঁইয়া পরিষদের পক্ষ থেকে শিবপুর উপজেলার ধানুয়া গ্রামে তার সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং স্বাস্থ্য বিধি মেনে সংক্ষিপ্ত মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
আবদুল মান্নান ভূঁইয়া ১৯৪৩ সালের ১ মার্চ মনোহরদী উপজেলার চন্দনবাড়ী ইউনিয়নের আসাদনগর গ্রামে নানা সৈয়দ আলী পণ্ডিতের বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পৈতৃক বাড়ি শিবপুর উপজেলার মাছিমপুর ইউনিয়নের মাছিমপুর গ্রামে।
শিবপুর হাই স্কুল থেকে এসএসসি ও নরসিংদী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে ইতিহাস বিভাগে অনার্স এবং মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির পাশাপাশি তিনি এলএলবি ডিগ্রিও অর্জন করেছিলেন।
স্কুলজীবনেই রাজনীতির সাথে যুক্ত হন মান্নান ভূঁইয়া। কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন তিনি। ছাত্র ইউনিয়নের সাথে সম্পৃক্ততার মধ্য দিয়ে তার ছাত্র রাজনীতির যাত্রা শুরু।
১৯৬৪-৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে কার্যনির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ততার অভিযোগে অনার্স পরীক্ষার আগে তাকে গ্রেপ্তার করে আইয়ুব সরকার। ছাত্রজীবন শেষে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ-এ যোগ দেন মান্নান ভূঁইয়া।
ন্যাপ থেকে মান্নান ভূঁইয়া ১৯৭৮ সালে ইউনাইটেড পিপলস পার্টির (ইউপিপি) সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮০ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৮৮ সালে তাকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব দেয়া হয়। ১৯৯৬ সালের ২৬ জুন তিনি দলের মহাসচিব হিসেবে মনোনীত হন। টানা ১১ বছর মান্নান ভূঁইয়া বিএনপির মহাসচিব ছিলেন।
১/১১-এর রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর জরুরি অবস্থার সময় দলের পক্ষ থেকে সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপন করলে বেগম জিয়া ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মহাসচিব পদ এবং দল থেকে মান্নান ভূঁইয়াকে বহিষ্কার করেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তিনি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে তিনি বিএনপির অন্যতম রূপকারও ছিলেন।
১৯৯১ সালে তিনি বিএনপি সরকারের শ্রম ও জনশক্তি এবং পরে কৃষি ও খাদ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে জোট সরকারের তিনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ছিলেন।
স্ত্রী অধ্যাপক মরিয়ম বেগম ছিলেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ। এছাড়াও ভূঁইয়া আনিন্দ মোহায়মেন রাজন এবং ভূঁইয়া নন্দিত নাহিয়ান সজন নামে তার দুই ছেলে বর্তমান।
মান্নান ভূঁইয়া পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে টানা চারবার নরসিংদী-৩ শিবপুর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। সর্বশেষ ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে পরাজিত হন।
বিএনপি থেকে বহিষ্কারের ২২ মাস পর দুরারোগ্য ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর পর তাকে শিবপুর শহিদ আসাদ কলেজ-সংলগ্ন ধানুয়া নিজ বাড়িতে সমাহিত করা হয়।