মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও এর ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে জনগণের কষ্ট লাঘবে বর্তমান সরকার বসে না থেকে সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরও পড়তে পারেন-ধর্মে-বর্ণে বিভক্ত হলেও ঐতিহ্যে বাঙ্গালি এক, অভিন্ন: প্রধানমন্ত্রী
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। ভাষণের শুরুতে দেশবাসীকে তিনি পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা ও পবিত্র রমজানের মোবারকবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “করোনাভাইরাসের মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এই যুদ্ধের ফলে উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের দামে অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে পণ্য পরিবহণেও ভাড়া ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। এরফলে আমাদের দেশেও কিছু কিছু পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা কিন্তু চুপচাপ বসে নেই। আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি সাধারণ মানুষের জীবনযাপনে স্বস্তি নিয়ে আসার।”
সাশ্রয়ী দামে পণ্য দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “চলতি পবিত্র রমজান মাসে আমরা টিসিবি’র (ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ) মাধ্যমে ভর্তুকি দিয়ে প্রায় ১ কোটি পরিবারকে কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সাশ্রয়ী দামে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি। রাজধানী ঢাকায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রতিদিন ১৫টি ফ্রিজার ভ্যানে করে সাশ্রয়ী দামে মাংস, ডিম এবং দুধ বিক্রির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এরফলে, অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম ইতোমধ্যে কমে স্বাভাবিক পর্যায়ে এসেছে।”
এছাড়াও সরকার আসন্ন ঈদ উপলক্ষে ১ কোটি ৩৩ হাজার ৫৪টি ভিজিএফ কার্ডের বিপরীতে ১ লাখ ৩৩০ মেট্রিকটনের বেশি চালের বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
আরও পড়তে পারেন-মেগা প্রকল্পগুলো নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী
দ্রব্যমূল্য নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হচ্ছে দাবি করে সরকারপ্রধান বলেন, “কিছু কিছু গণমাধ্যমে এমনভাবে প্রচারণা চালানো হচ্ছে যেন দেশে দুর্ভিক্ষস্থা বিরাজ করছে। আমি দৃঢ়ভাবে আপনাদের জানাতে চাই যে, দেশে চাল-সহ কোন পণ্যের ঘাটতি নেই। সাশ্রয়ী দামে পণ্য কেনার জন্য টিসিবি’র দোকানে মানুষ ভিড় করবে- এটাই স্বাভাবিক। এটাকে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরার কী কারণ থাকতে পারে?”
জিডিপি ও রেমিটেন্স বৃদ্ধির বিষয়টি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “করোনাভাইরাসের মহামারির সময়ও ২০২০-২০২১ অর্থবছরে আমাদের জিডিপির শতকরা প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৯৪ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত অর্থবছর রেকর্ড ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিটেন্স এসেছে দেশে। এ বছরও আশানুরূপ রেমিটেন্স আসছে “
এসময় তিনি রপ্তানি আয়ের বিষয়টিও তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “গত বছর রপ্তানি আয় হয়েছে ৪৪ দশমিক দুই-দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে রপ্তানি আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৮ দশমিক ছয়-এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।” এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে এ বছর রপ্তানি আয়ে বাংলাদেশ নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আমাদের অর্থনীতির মূল শক্তি কৃষি উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, “আমাদের সরকারের কৃষি-বান্ধব নীতির ফলে চাল, শাক-সবজি, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ উৎপাদনে আমরা এখন স্বয়ং-সম্পূর্ণ। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চলতি বোরো মওসুমে ধানের বাম্পার ফলন আশা করা হচ্ছে।”
নববর্ষের শুভমুহূর্তে বাঙালি জাতীয়তাবাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় স্নাত হয়ে বাংলাদেশকে একটি সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।