বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল আসছে ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে। তৃণমূলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর কমিটি গঠন প্রক্রিয়া জাতীয় কাউন্সিলের আগেই শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের আরও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। বিরোধী দলের কোনো কর্মসূচিতেও বাধা দেবে না আওয়ামী লীগ।
শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র এসব বিষয়ে দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, দীর্ঘ প্রায় ছয় মাস পরে অনুষ্ঠিত দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সূচনা বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।সূচনা বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা যখন গ্রামীণ অর্থনীতি, তৃণমূলের অর্থনীতি শক্তিশালী করছি, তখন একটি পক্ষ আমাদের উৎখাত করতে চায়। আওয়ামী লীগের অপরাধটা কোথায়?”
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকুক চাইলেও একটি পক্ষ বিদেশ থেকে ক্ষমতায় যাওয়ার সিগন্যাল আসার অপেক্ষায় বসে থাকে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা চাই গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকুক। অনেকে অতি জ্ঞানী হলেও আসলে তারা কম বোঝে। তাকিয়ে থাকে কখন তারা ক্ষমতায় যেতে পারবে। বসে থাকে কখন সিগন্যাল আসবে। বিদেশে দেশের বিরুদ্ধে বদনাম করে। বিদেশ থেকে যেন ক্ষমতায় বসাবে। কিন্তু এখনকার এই বাংলাদেশ সেটা নয় “
ভোটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ কখনও পিছিয়ে ছিল না উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “ সব সময় আওয়ামী লীগের ভোটের পারসেন্টেজ বেশি ছিল। ষড়যন্ত্র করে আওয়ামী লীগকে পিছিয়ে রাখা হয়েছে। সব ষড়যন্ত্রকে পেছনে ফেলে আমরা এগিয়েছি।”
আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষের দল-মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “ আমরা সব সময় ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছি। কখনো পেছনের দরজা দিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসেনি।” নির্বাচনে প্রহসন ও ভোট কারচুপির কালচার (সংস্কৃতি) শুরু করেন জিয়াউর রহমান বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
বিদেশে দেশের বিরুদ্ধে বদনাম করে, অন্য দেশের সহায়তা একটি চক্র আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাত করতে চায় বলে দলীয় নেতা-কর্মীদের সতর্ক করেন আওয়ামী লীগ প্রধান।
শেখ হাসিনা ওই চক্রের সমালোচনা করে বলেন, “অনেকে অতিজ্ঞানী হলেও তারা কম বোঝে। তাকায় থাকে কখন তাদের ক্ষমতায় যেতে পারবে, বসে থাকে কখন সিগন্যাল আসবে, বিদেশে দেশের বিরুদ্ধে বদনাম করে,বিদেশ থেকে যেন ক্ষমতায় বসাবে।”
ভোট দিয়ে বারবার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য জনগণকে ধন্যবাদ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “জনগণকে ধন্যবাদ। বার বার ভোট দিয়েছে।টানা ৩ বার ক্ষমতায় রেখেছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “নানা ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও দেশ এগিয়েছে। এবার পবিত্র ঈদুল ফিতরে মানুষ স্বস্তিতে ও নির্বিঘ্নে গ্রামে যেতে পেরেছে।দেশের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। আমরা চাই গণতান্ক্রিক ধারা অব্যাহত থাকুক।”
ঈদের আগে গৃহহীনদের ঘর উপহার দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, “ঈদের আগে ৩৩ হাজার ঘর দিয়েছি। জুলাই মাসে আরও ৩৪ হাজার দিব। বাকি থাকবে ৪৫ হাজার, তাও দিয়ে দিলে দেশে ভূমিহীন কেউ থাকবে না।”
বিএনপি চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, “বিএনপির নেতৃত্ব কোথায়? দুজনই (চেয়াপরপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান) সাজা প্রাপ্ত। এদের সঙ্গে যান বাম অতিবাম এসে যুক্ত হয়েছে।” এ সময় দলীয় নেতাদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। তাদের (বিরোধীদের) কুকর্ম মানুষকে মনে করিয়ে দিতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কটূক্তির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গাজীপুর মহানগর শাখা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের মেয়র (সাময়িক বহিষ্কার) জাহাঙ্গীর আলমকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি গণভবনে সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সার্চ কমিটির কাছে নাম প্রস্তাবের বিষয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া সাংগঠনিক টিমগুলোকে জেলা সফর ও মেয়াদোত্তীর্ণ সাংগঠনিক কমিটিগুলোর সম্মেলন করার নির্দেশনা দেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা।