প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়ন প্রকল্পে একজনের বেশি পরামর্শক নিয়োগ পরিহার করার অনুশাসন দিয়েছেন। এছাড়া মোট জাতীয় উৎপাদন (জিডিপি)-এ নারীর গৃহস্থালি কর্মের আর্থিক মূল্য সংযোজন করার পরামর্শও দেন তিনি।
মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহি কমিটি (একনেক)'র সভায় তিনি এ অনুশাসন দেন বলে সভা-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
সংবাদ সমেলনে জানানো হয় একটি প্রকল্পে ২১ জন পরামর্শক নিয়োগের বিষয়ে অবগত হয়ে প্রধানমন্ত্রী বিস্ময় প্রকাশ করেন।
‘সিলেট-চারখাই-শেওলা মহাসড়ক উন্নয়ন’প্রকল্পের বিভিন্ন পরামর্শক সেবা খাতে মোট ১০৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকায় ২১ পরামর্শক নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়।
মাত্র ৪২.৯৮ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের জন্য এত বেশি পরামর্শক সেবার ক্রয়ের বিষয়টি যৌক্তিক নয় বলে সভায় মত দেওয়া হয়।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার ৮৭২ কোটি ৩২ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১ হাজার ২৬৮ কোটি ২৫ লাখ ৯১ হাজার টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ সহায়তা থেকে ২ হাজার ৬০৪ কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম ও পরিকল্পনা সচিব সত্যজিত কর্মকারও উপস্হিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, অর্থনীতিতে ঘরের কাজ বা গৃহস্থালী কাজের অবদান স্বীকার করতে হবে। নারীদের কাজের অবদান নির্ণয়ের জন্য বিআইডিএস’কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এটা করা গেলে আমাদের জিডিপি আরও বাড়বে। আসছে অর্থবছরের বাজেটে না হলেও পরেরবার বাজেট থেকে নারীদের অবদান হিসাব করে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হিসাব ধরা হবে।
এম এ মান্নান বলেন, "বর্তমানে রেমিট্যান্স বেড়ে যাওয়ার উল্লসিত না হয়ে সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, রোজা ও ঈদের কারণে এখন রেমিট্যান্স বেড়েছে। তবে আগামীতে এই ধারা থাকবে না। পরে কোরবানির ঈদে হয়তো আবারও বাড়তে পারে।"
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, হাওরে আর সড়ক হবে না, উড়াল সড়ক হবে। তবে আধা হাওরে (অর্ধেক পানি, অর্ধেক স্থল) সড়ক হতে হবে। পানির চাপে সড়ক ভেঙে যায়। যেখানে পানির চাপ বেশি সেখানে কালভার্ট নির্মাণ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী স্লুইস গেট নিয়েও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন বলে মন্ত্রী জানান।
একনেক-এর সভায় প্রায় ১৩ হাজার ৬৫৫ কোটি ৯৮ লক্ষ টাকা ব্যয় সম্বলিত ১১টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৩ হাজার ১২৯ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা এবং বৈদেশিক অর্থায়ন ১০ হাজার ৫২৬ কোটি ১১ লক্ষ টাকা।
অনুমোদিত প্রকল্পসমূহ হলো- (এক) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক্সপোর্ট কম্পিটিটিভনেস ফর জবস্ (২য় সংশোধন) প্রকল্প, শিল্প মন্ত্রণালয়ের “সার সংরক্ষণ ও বিতরণ সুবিধার্থে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৩৪টি বাফার
গুদাম নির্মাণ প্রকল্প, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের “বাংলাদেশ এনভায়রমেন্টাল সাসটেইনেবিলিটি এন্ড ট্রান্সফরমেশন (BEST) প্রকল্প, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের “বন্যা ব্যবস্থাপনা পুনর্গঠন জরুরী সহায়তা” প্রকল্প, স্থানীয় সরকার বিভাগের দুইটি প্রকল্প যথাক্রমে “এডিবি’র জরুরি সহায়তায় বন্যা ২০২২-এ ক্ষতিগ্রস্থ গ্রামীণ অবকাঠামো পুনর্বাসন” প্রকল্প এবং “বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার পুননির্মাণে জরুরি সহায়তা” প্রকল্প,
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের “সিলেট-চারখাই-শেওলা মহাসড়ক উন্নয়ন” প্রকল্প, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের “২০২২ সালের বন্যায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ বাংলাদেশ রেলওয়ের সিলেট ছাতকবাজার সেকশন (মিটারগেজ) পুনর্বাসন)” প্রকল্প, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের “পাকিস্তানের ইসলামাবাদে বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মাণ” (৪র্থ সংশোধন) প্রকল্প, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের “বাংলাদেশ ভূমি জরিপ শিক্ষার উন্নয়ন” (১ম সংশোধন) প্রকল্প এবং নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের “একসিলারেটিং ট্রান্সপোর্ট এন্ড ট্রেড কানেক্টিভিটি ইন ইস্টার্ন সাউথ এশিয়া (একসেস)-বাংলাদেশ ফেজ ১ (বিএলপিএ কম্পোনেন্ট)” প্রকল্প।
একনেক সভায় অংশগ্রহন করেন পরিকল্পনা কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, কৃষি মন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
সভায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব, এসডিজি’র মুখ্য সমন্বয়ক, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যবৃন্দ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহের সিনিয়র সচিব, সচিব এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।