এক নকশা দিয়েই হচ্ছে সকল জেলার গ্রামীণ সড়ক

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ২৮, ২০২১, ০৮:০৪ পিএম

এক নকশা দিয়েই হচ্ছে সকল জেলার গ্রামীণ সড়ক

অঞ্চলভেদে সড়কের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও এলাকায় চলাচলরত যানবাহন ও ট্রাফিক ব্যবস্থার বিবেচনা না করেই একই নকশায় চলছে দেশের বিভিন্ন গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নের কাজ। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প ২ এর আওতায় এমন কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে। এ ছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নকারী বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহারেও সক্ষম নয়। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে আসে।

প্রকল্পের সড়ক নির্মাণ কাজে একই নকশা ব্যবহার করা হয়েছে। যার ফলে গ্রাম ও এলাকাভেদে সড়কের অবস্থা পরিবর্তন হলেও রাস্তা একই হয়েছে। সড়ক নির্মাণে গুরুত্ব পায়নি রাস্তার মাটির ধরণ ও আবহাওয়ার বিষয়গুলো। এজন্য এলাকা ভেদে সড়কগুলোর স্থায়িত্ব কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছে। এছাড়া এলাকা ভিত্তিক যানবাহন ও ট্রাফিক ব্যবস্থা আলাদা হওয়ার কারণে অনেক অঞ্চলের সড়ক নির্মাণের আগেই নষ্ট হতে শুরু করেছে।

জুলাই ২০১৫ থেকে জুন ২০১৯ সাল পর্যন্ত সংসদ সদস্যদের জন্য বরাদ্দ এই প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয় ৬ হাজার ৭৬ কোটি টাকা। তবে করোনার অজুহাতে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। প্রকল্পের আওতায় ৬৩ টি মার্কেটের পাশাপাশি উপজেলা সড়ক উন্নয়ন ৬৬৪ কিলোমিটার, উপজেলা সড়কে ব্রিজ/কালভার্ট নির্মাণ ১,০৬৩ মিটার, ইউনিয়ন সড়ক উন্নয়ন ১,৩৮২ কিলোমিটার; গ্রাম সড়ক উন্নয়ন ৭,৪৭৬ কিলোমিটার অন্যান্য সড়কে অবকাঠামো নির্মাণ (ব্রিজ/কালভার্ট) ১৪,৪৭১ মিটার; গ্রামীণ সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ ২,১৩০ কিলোমিটার; গ্রামীণ সড়কে ব্রিজ/কালভার্ট রক্ষণাবেক্ষণ ৬৩৬ মিটার বাস্তবায়ন করার কথা।

প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা নিয়ে শুরু থেকেই জটিলতা দেখা দেয়। গ্রামীণ মাঠ, ঘাট, সড়ক ইত্যাদি ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে থাকলেও সংস্কারের কাজ এলজিইডি’র আওতায় থাকায় তা বাস্তবায়ন নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগেরই ভারী যন্ত্রপাতি না থাকার কারণে তাদের যথাসময়ে এলজিইডি বিভাগ ভাড়া দিতে পারে নি। যার ফলে দ্রুত সময়ে যথাযথভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায়নি।

গ্রামীণ সড়কের গড় মাপ নিয়েই প্রকল্পের ডিপিপিতে নকশা করা হয়েছে। যার ফলে প্রকল্প বাস্তবায়ন যথাসময়ে হয়েছে বলে জানায় এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী আব্দুর রশীদ খান। তিনি আরও বলেন, গ্রামের সড়কগুলো তুলনামূলকভাবে একই রকম। তাই ডিপিপিতে কাজের সুবিধার্থে একটি নকশা দেয়া হয়। তবে ভারী যন্ত্রপাতি না থাকার কারণে প্রকল্প বিলম্ব হওয়ার কোন অভিযোগ এখনও পাওয়া যায়নি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ব্রিজ কালভার্ট ও সংযোগ সড়কে পানির প্রবাহ ঠিক রাখার জন্য জমি অধিগ্রহণ না করায় মাটি কর্তন ও ভরাটে ব্রিজ ও কালভার্টের পানির প্রবাহ ঝুঁকির মধ্যে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া নির্মাণ উপকরণ প্রাপ্তিতে বিলম্ব ও সঠিক সময়ে যন্ত্রপাতি ভাড়া না পাওয়ায় অনেক এলাকার কাজের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেছেন, সকল সড়ক একই ধাঁচের থাকে না। উপকূল অঞ্চলের মাটিতে লবনাক্ততা বেশি থাকে আবার অন্য অঞ্চলে মাটি ভিন্ন। তাই একই নকশায় কখনও সারাদেশে রাস্তা প্রস্তুত করলে তা টেকসই থাকবে না। যার পরিস্থিতি আমরা বাস্তবেই দেখছি। বর্তমানে গ্রামীণ রাস্তাগুলো একবছরও স্থায়ী হয়না এই কারণে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নকশা যে এক হতে হবে সেটা বাধ্যতামূলক না। কিন্তু ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো নকশার জন্য আলাদা ব্যয় করতে চায় না। আবার নকশার জন্য আলাদা বরাদ্দ দিলেও সেটা বাস্তবায়ন হবে কিনা সে নিয়ে সংশয় থেকে যায়।

Link copied!