করোনা মহামারীতে কঠোর বিধি-নিষেধের ফলে কর্মসংকট, চাকরি হারানোর পাশাপাশি প্রবাস ফেরত যুবকরা দেশে কৃষিখাতে সাফল্য লাভ করেছে। কৃষি খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির পাশাপাশি সরাসরি বাজারজাত করার পদ্ধতি ইত্যাদির কারনে কৃষি কাজ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এই দুই বছরে দেশে প্রায় নতুন করে ৩ লাখ কৃষি উদ্যোক্তার সৃষ্টি হয় বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা। ১২ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) বিশ্ব যুবক দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য হল ‘খাদ্য ব্যবস্থার রূপান্তর: মানুষের জন্য যুব উদ্ভাবন’।
করোনায় নতুন কৃষি উদ্যোক্তা প্রায় ৩ লাখ
বাংলাদেশ পল্লী ও কর্মসংস্থান ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) অর্থায়নে কৃষির বিভিন্ন খাতে প্রায় ২২ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষি উদ্যোগকে অর্থায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে নতুন ধরণের ফসল ও পণ্য উৎপাদনে যুক্ত হয়েছেন প্রায় তিন লাখ উদ্যোক্তা। তাঁদের গড় বয়স ৩৫। গোলমরিচ, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ, টমেটো ও ড্রাগন ফলের মতো নিশ্চিত মুনাফা আছে এমন খাতগুলোতে এই তরুণেরা বিনিয়োগ করছেন।
বৈচিত্র্যময় ফসলে যুবকদের আগ্রহ
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেবে, দেশের কৃষিকাজ এখন তারুণ্যনির্ভর। এখন কৃষিকাজে জড়িতদের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী। তরুণদের এই অংশগ্রহণের ফলে কৃষিকাজেও আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে বলে মনে করছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো আসাদুল্লাহ ।
তিনি বলেন, যুবকরা মূলত বৈচিত্র্যময় কৃষিপণ্যতে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে। এই সব ফসলের দাম ও চাহিদা বেশি থাকায় প্রথম মৌসুম থেকেই লাভের মূখ দেখছে। তবে এক্ষেত্রে ফল উৎপাদনে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে যুবকরা।
ফল উৎপাদনের সাফল্যের পেছনে তরুণ উদ্যোক্তাদের ভূমিকা যে ব্যাপক তা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ফলচাষিদের তালিকা থেকে জানা যায়। মূলত ধনী কৃষকদের পরবর্তী প্রজন্ম নানা ধরণের ফল চাষের দিকে বেশি ঝুঁকছে। স্ট্রবেরি, মাল্টা, কমলা, ড্রাগন, রক মেলন,পার্সিমন,এ্যাভোক্যাডো ফল থেকে শুরু করে বাজারে নতুন ওঠা কালো তরমুজ চাষেও এই তরুণদের প্রাধান্য বেশি দেখা যায়।
প্রবাস ফেরতরাও কৃষিতে
পিকেএসএফের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, এই তরুণ উদ্যোক্তাদের অনেকেই প্রবাস থেকে ফিরে এসেছেন। অনেকের পরিবারের কেউ কেউ প্রবাস থেকে যে অর্থ পাঠাচ্ছেন, তা এই ধরণের কৃষিভিত্তিক উদ্ভাবনী ও নতুন খাতে বিনিয়োগ করছেন। দেশের ভেতরে সুপারশপ ও উচ্চবিত্ত এলাকার বাজারগুলোতে এসব নতুন ধরণের পণ্য বিক্রি বাড়ছে বলেও সংস্থাটির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে। এ ব্যাপারে পিকেএসএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল কাদেরের মতে, তরুণদের হাত ধরে দেশের কৃষিখাত পারিবারিক চাহিদা মেটানোর পর্যায় থেকে দ্রুত বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। তবে এই বদল ধরে রাখতে হলে কৃষকদের ধনী হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। উদাহরণ তৈরি করতে হবে যে, উচ্চশিক্ষা শেষে কৃষিতে এলে চাকরির চেয়েও ভালো ভবিষ্যৎ আছে।
দেশের কৃষি এখন প্রযুক্তি নির্ভর। এ কারণে সবজি উৎপাদনে তৃতীয় এবং মাছ চাষে পৃথিবীর চতুর্থ স্থানে বাংলাদেশ। বায়োফ্লেক্সে মাছ চাষ ও গরু মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়ায় যুবকরা ব্যাপক অংশগ্রহণ করছে।
উপজেলা ভিত্তিক কৃষি পদকের দাবি
পরিবেশ আন্দোলন বাংলাদেশের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, কৃষিতে যুবকদের সম্পৃক্ত বাড়াতে হবে। কৃষিকে লাভজনক পেশা হিসেবে গড়ে তুলতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রয়োজনে কৃষকের জন্য পেনশন স্কিম চালু করতে হবে, যাতে তরুণরা এই খাতকে সন্মান করে।
এজন্য পবার পক্ষ থেকে তরুণদের কৃষি পেশাকে বিশেষ সুবিধা ও মর্যাদা দিতে তরুণদের জন্য জাতীয় ও স্থানীয় জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি পদকের ব্যবস্থা করতে হবে, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও তৈরীতে তরুণদের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ এবং কৃষি উৎপাদনের জন্য তাদের সহজ শর্তে ঋণের সুবিধা আর্থিক সুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে, ইউনিয়ন পর্যায়ে শস্য সংরক্ষাণাগার তৈরি করতে হবে, জাতীয় বাজেটে যুবদের কৃষি কাজে যুক্ত হওয়ার জন্য আলাদাভাবে বরাদ্দ রাখতে হবে, কৃষিপণ্যের অনিশ্চিত ন্যায্যবাজার রুখতে হবে, অঞ্চল ভিত্তিক জাতীয় তরুণ কৃষি নীতি চালু করতে হবে এবং গ্রাম ও শহরের যুবদের জন্য বিদ্যমান নাগরিক সুবিধার যে বিরাট বৈষম্য রয়েছে তা কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে।