কানাডায় তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যু: হত্যার অভিযোগে মামলা করতে চান দীপ্তর পরিবার

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৩, ০১:০৯ এএম

কানাডায় তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যু: হত্যার অভিযোগে মামলা করতে চান দীপ্তর পরিবার

দীপ্তর স্বপ্নগুলোর এমন মৃত্যু হবে এমন কথা কেউ দুঃস্বপ্নেও ভাবেনি। আর তাই তো দীপ্তর পরিবারকে এখন বারবার যন্ত্রণা দিচ্ছে সেই ইচ্ছেগুলো। স্বপ্ন পূরণে পরিবার ছেড়ে দূরে যাওয়া যে শেষ যাত্রা হবে তা কে জানতো! 

রেজিনা সুলতানা ও এটিএম আলমগীর দম্পতির ছোট ছেলে আরিয়ান দীপ্ত। চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হওয়ার ইচ্ছে নিয়ে পড়তে গিয়েছিলেন কানাডায়। হতে চাইতেন ব্যবসায়ীও। গত সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) কানাডার টরন্টোয় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় আরও দুই বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সাথে নিভে যায় তাঁর জীবন প্রদীপ। 

পুত্রশোকে কান্না ও বিলাপকে যেন জীবনের চিরসঙ্গী করতে বাধ্য হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী রেজিনা সুলতানা। রাজধানীর নাখালপাড়ার বাসায় তাঁকে সান্ত্বনা ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে গিয়েছিলেন তাঁর কয়েকজন বন্ধু। পুত্রশোকে বিধ্বস্ত রেজিনাকে দেখে আর নিজেদের ধরে রাখতে পারলেন না। রেজিনার কষ্টতে বাসার পরিবেশ আরও ভারি হয়ে ওঠে। পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন সবাই এই কষ্টে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন।

বন্ধুদের সাথে বিলাপ করতে করতে রেজিনা বলতে থাকেন, ‘ওরে আমার আব্বা রে, আমি কোথায় পাই রে। ও আমার দীপ্ত রে। ১১ ফেব্রুয়ারি আমার ছেলের জন্মদিন ছিল। ও মারা যাওয়ার ১০ ঘণ্টা পরে শুনছি মারা গেছে। এর মধ্যে আমি ছেলেকে ম্যাসেজ দিছি। আমি বলি, কি রে; ও আমাকে রিপ্লাই দেয় না ক্যান?’

রেজিনা সুলতানা আর বলেন, ‘সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিতের ছেলে নিবিড় কুমার এবং আমার ছেলে দীপ্ত একসঙ্গে এক বাসায় অনেকদিন ছিল। ওখানে কী হয়েছে, তা আমাকে বলেনি। শুধু বলেছিল, সে আর থাকতে পারবে না ওখানে। ওরা (দীপ্ত, কুমারসহ তাঁদের বন্ধুরা) ৩১ ডিসেম্বর একটি পার্টিতে যায়। সেখানে তাদের এক মেয়ে বন্ধুও ছিল। তাদের মধ্যে কোনো একটি বিষয় নিয়ে আর্গুমেন্ট হয়েছিল। পুলিশও এসেছিল।’

dipto family

বোন অনন্যার বিয়ের অনুষ্ঠানে বাবা-মায়ের সাথে দীপ্ত (পেছনে দাঁড়িয়ে)। ছবি: সংগৃহীত

রেজিনা সুলতানা আর বলেন, ‘যেদিন দুর্ঘটনা ঘটে, সেদিন কুমারসহ অন্যরা আমার ছেলেকে ওর বাসা থেকে আনতে যায়। আমার ছেলে যেতে চায়নি। এসব ঘটনা তার দুবাইয়ের বন্ধুকে জানিয়েছিল আমার ছেলে। ওই বন্ধু বিষয়টি আমাদের জানিয়েছে। সেসব কথার প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। এসব ঘটনা কেন ঘটল? তদন্ত করা হোক। আমি বিচার চাই।’

মায়ের বিলাপ যখন কোনো বাঁধই মানছে না তখন বাবা আলমগীর আরিয়ান দীপ্তের ছবি দেখিয়ে কতশত স্মৃতি তুলে ধরছিলেন সবার কাছে।

dipto

শৈশব বেলায় বাবা-মায়ের সাথে দীপ্ত। ছবি: সংগৃহীত

বন্ধুদের সাথে আলমগীর বলছিলেন, ‘বুকটা আমার ফেটে যাচ্ছে। আমার যে আর কেউ নেই! কীভাবে থাকব আমরা? এতদিন শুনিনি, আজ দুবাইতে থাকা দীপ্তের বন্ধু ফয়সালের কাছ থেকে অনেক ঘটনা শুনলাম। ঘটনার দিন আরিয়ানের অনিচ্ছা সত্ত্বেও জোর করে বাসা থেকে কেন নিয়ে যাওয়া হলো। এর পেছনে কী কোনো কারণ থাকতে পারে, এটা জানার দরকার।’

Canada Accident car

কানাডার সড়কে দুর্ঘটনা কবলিত দীপ্তদের বহনকারী গাড়ি। ছবি: সংগৃহীত

দীপ্তর শোকগ্রস্ত বাবা বলেন, ‘কানাডায় মারা যাওয়া শাহরিয়ার খানের বাবা শরীফ খানের সাথে আমার কথা হয়েছে। আমরা এ ঘটনায় নিবিড় কুমারের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একই ঘটনায় নিহত অ্যাঞ্জেলা বাড়ৈর বাবার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। আমরা আইনজীবীর সাথে কথা বলে যে প্রক্রিয়াতে মামলা করার সুযোগ থাকে, আমরা মামলা করব।’

তিনি আরও জানান, আগামী সোমবার স্থানীয় একটি মসজিদে দীপ্তের জানাজা হবে। বুধবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের উদ্দেশে মরদেহ পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এর আগে-পরেও আসতে পারে।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি কানাডার টরন্টোয় স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১১টার দিকে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী নিহত হন। গুরুতর আহতাবস্থায় টরন্টোর সেন্ট মাইকেল হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন আছেন আরেক শিক্ষার্থী নিবিড় কুমার। দেশটির ডান্ডাস স্ট্রিট ওয়েস্টের ৪২৭ নম্বর মহাসড়কের দক্ষিণমুখী র‍্যাম্পে এই দুর্ঘটনা ঘটে। জানা যায়, সে সময় গাড়িটি খুব দ্রুতগতিতে চালাচ্ছিলেন নিবিড় কুমার। 

Link copied!