কুয়াশা ও অতিরিক্ত গতির কারণে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ৯ ভাই-বোনকে দেখতে না পেরে তাদের চাপা দেন পিকআপ চালক সাহিদুল ইসলাম ওরফে সাইফুল। পরে পিকআপ থেকে নেমে নিহতদের দেখতে এলেও মালিকের ছেলে তারেকের নির্দেশে তিনি দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় পিকআপ ভ্যানের চাপায় আপন পাঁচ ভাই নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া চালক সাইফুল জিজ্ঞাসাবাদে এসব কথা বলেন।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
গ্রেপ্তারকৃত চালক সাইফুলের বরাত দিয়ে ওই র্যাব কর্মকর্তা জানান, নিহতদের কেউই গ্রেপ্তারকৃত চালকের পূর্বপরিচিত নন। ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলেও ২ বছর ধরে পিকআপ, চান্দের গাড়ি চালিয়ে আসছিলেন তিনি। দুর্ঘটনার পর পিকআপ মালিকের নির্দেশে পালিয়ে থাকার উদ্দেশ্যে আত্মোগোপনে যান সাইফুল।
সাইফুলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি জানান, ঘটনার সময় তারেক ও রবিউল নামে ২ জনকে নিয়ে চকরিয়া থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে সবজি বোঝাই পিকআপ নিয়ে রওনা দেন সাইফুল। তারেক পিকআপের মালিক মাহমুদুল করিমের ছেলে এবং রবিউল তার ভাগিনা। কুয়াশার মধ্যেও দ্রুত সবজি ডেলিভারির উদ্দেশ্যে ৬৫-৭০ কিলোমিটার গতিতে পিকআপ চালাচ্ছিলেন সাইফুল।
কুয়াশা ও অতিরিক্ত গতির কারণে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ৯ ভাই-বোনকে দেখতে না পেরে তাদের চাপা দেন সাইফুল। এরপর তিনি পিকআপ থেকে নেমে নিহতদের দেখতে এলেও মালিকের ছেলে তারেকের নির্দেশে তিনি দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।
পরবর্তীতে চালক সাইফুল পিকআপ মালিককে ফোন করে দুর্ঘটনার বিষয়টি জানান। গাড়িটির মালিক তাকে পিকআপটি কোনো এক স্টপেজে রেখে লোকাল বাসে করে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। মালিকের নির্দেশনা অনুযায়ী সাইফুল ডুলাহাজরায় পিকআপটি রেখে বাসে করে চকরিয়ায় গিয়ে মালিকের সঙ্গে দেখা করেন।
এ সময় পিকআপের মালিক মাহমুদুল তাকে অন্তত এক বছর আত্মগোপনে থাকার পরামর্শ দিলে তিনি প্রথমে বান্দরবানের লামার রাবার বাগানে আত্মগোপনে যান। পরে জানাজানি হয়ে যাওয়ার ভয়ে অন্যত্র আত্মগোপনের উদ্দেশ্যে ঢাকায় আসেনে। এরমধ্যেই মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রাথমিকভাবে সাইফুল জানিয়েছেন, নিহতদের পরিবারের কেউ তার পূর্বপরিচিত নন। মালিকের সঙ্গে এই পরিবারের কোনো পরিচয় আছে কিনা সাইফুল বলতে পারেনি। পিকআপের মালিক ও তার ছেলে, ভাগিনা বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি যদি মনে করেন ঘটনায় আরও কারও সংশ্লিষ্টতা বা অন্য কোনো মোটিভ রয়েছে তাহলে তিনি বিষয়টি দেখবেন।
র্যাবের কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, দুর্ঘটনার এক সপ্তাহ আগে ওই পিকআপটি দৈনিক ৫০০ টাকা মজুরিতে চালানো শুরু করেন। এর আগে তিনি বান্দরবানের লামায় রাবার বাগানে চাকরি করতেন।
প্রসঙ্গত, গত ৩০ জানুয়ারি কক্সবাজারের চকরিয়ায় মারা গিয়েছিলেন ওই ৫ ভাইয়ের বাবা সুরেশ চন্দ্র সুশীল। গত মঙ্গলবার তার শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। ধর্মীয় আচার শেষে স্থানীয় একটি মন্দির থেকে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন সুরেশ চন্দ্রের ৫ ছেলে। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলা অংশের মালুমঘাট এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনায় সুরেশ চন্দ্র শীলের ছেলে অনুপম (৪৬), নিরুপম (৪০), দীপক (৩৫), চম্পক (৩০)এবং পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর আরেক সন্তান স্মরণ (২৫) মারা যান। আহত রক্ষিমকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (চমেক) থেকে নিয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে।
এ ঘটনায় রাতেই নিহতদের আরেক ভাই প্লাবন চন্দ্র শীল বাদী হয়ে অজ্ঞাত পিকআপ ভ্যান চালককে আসামি করে চকরিয়া থানায় মামলা করেন। ঘটনার পর পিকআপ ভ্যানটি জব্দ করা গেলেও চালক তিনদিন ধরে পলাতক ছিলেন।