ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৩, ০২:৩৭ পিএম
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ ধামে চলছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তিন দিনের শিবচতুর্দশী মেলা। শনিবার মধ্যরাতে হঠাৎই গুজব ওঠে- পাহাড় থেকে নামার সিঁড়ি ভেঙে দুজন মারা গেছেন। এ কথা ছড়িয়ে পড়লে পুণ্যার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। বন্ধ করে দেয়া হয় পাহাড়ে ওঠা-নামা। তারপর ভোর হলে অন্য পথে নামার অনুমতি দেয়া হয়। সে সময় আতঙ্কিত পুণ্যার্থীরা হুড়োহুড়ি করে নামতে থাকলে পড়ে গিয়ে পাঁচজন আহত হন। এ ছাড়া মানুষের চাপাচাপিতে গত ২৪ ঘণ্টায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অন্তত ২ হাজার ২০০ তীর্থযাত্রী।
রোববার সকালে মেলা কমিটির অতিরিক্ত সম্পাদক দুলাল দে জানান, কোথাও সিঁড়ি ভাঙার খবর তাঁদের কাছে নেই। রাত আড়াইটার দিকে স্বয়ম্ভুনাথ মন্দিরের ঢোকা বন্ধ করে দেওয়ার পর জটলা অসহনীয় হয়ে পড়ে। ফলে ওঠানামা বন্ধ হয়ে যায়। ভোরে বিকল্প পথে তীর্থযাত্রীদের নামানোর কাজ করছেন তাঁরা। এ ছাড়া ঠেলাঠেলিতে ওঠার পথে কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তীর্থযাত্রীর সমাগম অতীতের রেকর্ড ভেঙেছে। অতীতে এত মানুষ আর হয়নি। তীর্থযাত্রীদের নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
সঞ্জয় চৌধুরী নামের এক পুণ্যার্থী বলেন, রাত তিনটার দিকে চন্দ্রনাথ ধাম পরিক্রমা শেষে খাড়া সিঁড়ি বেয়ে কিছু দূর নেমেছিলেন তিনি। এরপর তাঁরা শুনতে পান, নামার পথের ৪০০ ফুট নিচে দুটি সিঁড়ি ভেঙে খাদে পড়ে দুই তীর্থযাত্রী নিহত হয়েছেন। এরপর ওই পথে নামা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ওপরের মানুষের চাপের কারণে ওপরের দিকেও উঠতে পারছিলেন না তাঁরা। ফলে সারা রাত একটি সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনিসহ পাঁচ আত্মীয়। ভোরে ইকোপার্কের রাস্তা (বিকল্প পথ) দিয়ে চলাচল উন্মুক্ত করার পর উল্টো পাহাড়ে উঠে বিকল্প পথ ধরে নামতে শুরু করেন। এর আগে রাত নয়টার দিকে সমতল থেকে পাহাড়ের চূড়ায় থাকা চন্দ্রনাথ ধামের দিকে রওনা দেন তাঁরা। ৩০০ ফুট পথ পাড়ি দিতে রাত সাড়ে ১২টা বেজে যায়।
সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদ বলেন, এত মানুষের চাপ আগে কখনো হয়নি। পাহাড় থেকে নামার পথে খাড়া সিঁড়ি বেয়ে নামতে হয়। ফলে দুর্ঘটনা এড়াতে তাঁরা নামার পথ বন্ধ করে দেন। পরে সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক হয়ে বিকল্প পথে পুণ্যার্থীদের নামিয়ে আনা হচ্ছে।
পাহাড়ে মানুষের চাপ কমাতে রাত আড়াইটার পর পাহাড়ের ৪০০ ফুট ওপরে থাকা পানিঘাটা এলাকায় ওঠার পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে ভোররাতে মানুষের জটলায় ওপর থেকে নিচের দিকে চাপের ঢেউ লাগে। এই চাপাচাপিতে পড়ে যান ৫ পুণ্যার্থী। গুরুতর আহত হন তারা।
আহত ৫ পুণ্যার্থীরা হলেন- বীনা দাস (৫০), লিপি কর্মকার (৩২) কমলা কর্মকার (৪০), সুশেন দাস (৩০) ও চম্পা হাওলাদার (৪৪)।
লিপি কর্মকারের স্বামী নান্টু কর্মকার বলেন, ভোররাতে তাঁরা চন্দ্রনাথ ধামের দিকে উঠছিলেন। হঠাৎ ওপর থেকে নিচের দিকে মানুষ চাপ দেয়। ফলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাঁর স্ত্রী মাটিতে পড়ে গেলেও একটুর জন্য খাদে পড়েননি। তবু তাঁর হাতে ১০টি সেলাই দিতে হয়েছে। তাঁর আত্মীয় কমলা কর্মকারের মাথা জখম হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নুর উদ্দিন রাশেদ বলেন, পাঁচ-ছয়জন গুরুতর আহত পুণ্যার্থীকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। এ ছাড়া মেলা এলাকায় তাঁদের অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্পে গত ২৪ ঘণ্টায় চিকিৎসা নিয়েছেন ১ হাজার ৭০০ জন। তাঁদের বিনা মূল্যে ওষুধ দেওয়া হয়েছে।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, জন্মাষ্টমী পরিষদ, হিন্দু মহাজোটসহ কয়েকটি সংস্থা মেলা এলাকায় বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে । তারাও ৫০০ রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছে বলে জানা গেছে।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার ২০০ ফুট ওপরে পাহাড়ের চূড়ায় থাকা চন্দ্রনাথ ধামকে ঘিরে গত শুক্রবার থেকে সীতাকুণ্ডে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় তীর্থ শুরু হয়। প্রতিবছর এ মেলা তিন দিনের হলেও এবার তিথির কারণে চার দিন মেলা চলবে। গতকাল ছিল এ মেলার দ্বিতীয় দিন। এ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অন্তত ১০ লাখের বেশি পুণ্যার্থীর সমাগম হয়। তাঁদের সাথে যোগ দেন ভারতসহ উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পুণ্যার্থীরা।