প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এ দেশে চলচ্চিত্রের যাত্রাও শুরু হয় তাঁর হাত ধরে। সেটি দেশ স্বাধীনের আগেই! ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল প্রাদেশিক আইন পরিষদের অধিবেশনের শেষ দিন তিনি পূর্ব পাকিস্তান চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থার বিল উপস্থাপন করেন। বিল উপস্থাপনের পর পরিষদের সদস্যরা কিছু সংশোধনী আনেন এবং বিলটি পাসও হয়। ঐতিহাসিক সেই বিলের প্রস্তাবক শেখ মুজিবুর রহমান। যাকে এ দেশের মানুষ ভালবেসে নাম দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।
বঙ্গবন্ধু চলচ্চিত্রকে শুধু ভালোই বাসতেন তা নয়, দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলন তথা চলচ্চিত্রকে উৎসাহী করতে নিজে অভিনয়ও করেছিলেন একটি সিনেমায়। সিনেমাটির নাম ছিল ‘সংগ্রাম’। সিনেমাটিতে কিছুক্ষণের জন্য আলোকিত উপস্থিতি ছিল তাঁর। সিনেমাটি নির্মাণ করেছিলেন প্রয়াত পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম। সুচন্দা, খসরু প্রমূখ শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেছিলেন সিনেমাটিতে। সিনেমাটি মুক্তি পায় ১৯৭৪ সালে।
সংগ্রাম সিনেমার চিত্রনাট্যের শেষ দিকে ছিল মুক্তিযুদ্ধের পর সদ্য স্বাধীন দেশের সামরিক বাহিনী বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে স্যালুট প্রদান করছেন। কিন্তু এই দৃশ্য কীভাবে ধারণ করা যায়, তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম। কারণ, বঙ্গবন্ধু তখন এতটাই জনপ্রিয় এক নেতা যে, তার সামনে গিয়ে এমন একটি প্রস্তাব দেওয়া রীতিমত দুঃসাহসের এক কাজ। সে সময় অনেক ভেবেচিন্তে বুকে সাহস নিয়ে এই প্রস্তাবটি বঙ্গবন্ধুকে দিতে যান সিনেমাটির নায়ক কামরুল আলম খান খসরু। যাঁকে সিনেমা জগত চেনে খসরু নামেই।
সেই প্রস্তাবে বঙ্গবন্ধু প্রথমে ‘না’ করলেও পরে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মান্নানকে দিয়ে সুপারিশ করিয়ে অভিনয়ের জন্য বঙ্গবন্ধুকে রাজি করানো হয়। এভাবেই সিনেমা ইতিহাসেরও অংশ হয়ে যান সর্বকালের শ্রেষ্ঠ এই বাঙালি।