গত ১১ ডিসেম্বর দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপির সাতজন সংসদ সদস্য পদত্যাগ করেন। শূন্য হয় দেশের চার জেলার ৬টি সংসদীয় আসন। আসনগুলো হলো- ঠাকুরগাঁও-৩, বগুড়া-৪ ও ৬, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ও ৩ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২। বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে আসনগুলোতে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ভোট জালিয়াতি এড়াতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
ছয়টি আসনে সংসদ সদস্য হওয়া লড়াইয়ে নেমেছেন ৪০ জন প্রার্থী। প্রায় ২২ লাখ ৫০ হাজার ভোটারের ভোট পেতে স্বতন্ত্র প্রার্থিতা করছেন বেশির ভাগ প্রার্থী। যেখানে ১০টি রাজনৈতিক দল মিলিয়ে ২৩ জন প্রার্থী সেখানে ১৭ জন লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে।
এই নির্বাচনে সবার নজর থাকছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ)আসনে। নিজের ছেড়ে আসা আসনে প্রার্থিতা করছেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ও পাঁচবারের সংসদ সদস্য উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া। দলীয় সিদ্ধান্তে পদত্যাগ করার পর আবার নির্বাচনে দাঁড়ানোয় বিএনপি থেকে বহিস্কার করা হয় তাঁকে।
বিএনপি থেকে বহিস্কৃত এই নেতাকে সমর্থন জানিয়ে নিজেদের সব প্রার্থী সরিয়ে নেয় আওয়ামী লীগ। তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নির্বাচন লড়তে বাকি থাকেন আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু আসিফ আহমেদ।
তবে নির্বাচনের লড়াইয়ে মাঠে নেই আবু আসিফ। জানা যায়, গত ২৭ জানুয়ারি (শুক্রবার) বিকালে তিনি মোবাইল ফোন বাসায় রেখে বেড়িয়ে আর বাসায় ফেরেননি। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন তিনি।
আবু আসিফের অনুপস্থিতিতে তাঁর স্ত্রী মেহেরুন নিছা মেহেরীন নির্বাচন সম্পর্কিত সকল দায়িত্ব পালন করছেন। স্বামীর সন্ধান পেতে ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক ও উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার নিকট লিখিত দরখাস্ত দিয়েছেন তিনি। এছাড়াও প্রধান নির্বাচন কমিশনার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার, আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, আশুগঞ্জ থানার ওসি ও স্থানীয় প্রেসক্লাবে এ দরখাস্তের অনুলিপি পাঠিয়েছেন।
এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি আবু আসিফের নির্বাচনী প্রচারণাপ্রধান ৮০ বছর বয়সী মুসা মিয়াকে উঠিয়ে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ। গ্রাম্য ঝগড়ার মীমাংসিত ঘটনার একটি মামলায় এলাকার স্বনামধন্য এই সালিশকারককে গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হয়। সেদিন থেকেই নিখোঁজ থাকেন নির্বাচনী প্রচারণার সমন্বয়ক আবু আসিফের শ্যালক শাফায়াত সুমন। পরে গত সোমবার রাতে বাসা ফিরে আসেন তিনি।
এরপর সবার দৃষ্টি আবারও আকর্ষণ করেছেন আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম। মনোনয়ন বারবার বাতিল হওয়ার পরও হাইকোর্ট পর্যন্ত আপিল করে ফিরে পেয়েছেন প্রার্থিতা। লড়ছেন বগুড়াতে জয়ের জন্য। বিগত নির্বাচনেও বড় রকমের হার হয় তার।
বগুড়ার দুই আসন বগুড়া-৬ (সদর) ও বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে লড়ছেন তিনি। এই দুই আসনে মোট ২০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে বগুড়া-৬ আসনে ১১ জন এবং বগুড়া-৪ আসনে ৯ জন।
বগুড়া-৬ (সদর) আসনে নৌকা প্রতীকে লড়ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু। জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম ওমর লড়ছেন লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মান্নান আকন্দ, হিরো আলমসহ ১১ প্রার্থী আসনটিতে লড়াই করার মনোনয়ন পেয়েছেন।
অন্যদিকে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে মহাজোটের শরিক দল জাসদ নেতা রেজাউল করিম তানসেন মশাল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। এছাড়া জাতীয় পার্টির ফারুক, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আলোচিত হিরো আলম, কামরুল হাসান সিদ্দিকী জুয়েল, মোশফিকুর রহমান কাজলসহ ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ইতিমধ্যে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বগুড়ার ২৫৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৫৮টিকেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এ কারণে ১৬ প্লাটুন বিজিবিসহ সাড়ে ৪ হাজার নিরাপত্তা কর্মী কাজ করছেন।
ঠাকুরগাঁও-৩ (পীরগঞ্জ-রানীশংকৈল) আসনে নির্বাচনে লড়ছেন ছয় জন। পীরগঞ্জ ও রানীশংকৈল উপজেলার দুটি পৌরসভাসহ ১৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ঠাকুরগাঁও-৩ আসন। বিএনপি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মো. জাহিদুর রহমান পদত্যাগ করায় এই আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। প্রার্থীরা হলেন- ১৪ দলীয় জোট থেকে ওয়ার্কার্স পার্টির অধ্যাপক ইয়াসিন আলী (হাতুড়ি), বাংলাদেশ ন্যাশনাল ফ্রন্টের (বিএনএফ) সিরাজুল ইসলাম (টেলিভিশন), জাতীয় পার্টির হাফিজ উদ্দীন আহম্মেদ (লাঙল), জাকের পার্টির এমদাদ হোসেন (গোলাপ ফুল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) সাফি আল আসাদ (আম) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ গোপাল চন্দ্র রায় (একতারা)।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে চার লাখ পাঁচ হাজার ৪৫০ জনের ভোট পেতে লড়ছেন ৬ জন। অন্যদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে চার লাখ ১১ হাজার ৪৯৫ জন ভোটারের ভোট পেতে লড়ছেন ৩ জন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ হারুন ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (গোমস্তাপুর, ভোলাহাট, নাচোল) আসনের বিএনপির সংসদ সদস্য আমিনুল ইসলাম পদত্যাগ করায় এ আসন দুটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।