চট্টগ্রামের রাউজানে গত ২০শে নভেম্বর পূর্বগুজরা ইউনিয়নের সিকদারঘাটায় উদ্ধার হওয়ার নারীর লাশের পরিচয় ও হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে স্থানীয় থানা পুলিশ। একই সঙ্গে ওই নারীর খুনের সঙ্গে জড়িত তিন খুনিকে সোমবার আটক করে মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডের শিকার ওই নারীর নাম আমেনা বেগম ওরফে শারমিন (২২)। তিনি কক্সবাজার সদর পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কুতুবদিয়া পাড়ার নুর হোসেনের কন্যা। চট্টগ্রামের উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন শারমীন।
রাউজান থানা পুলিশ জানিয়েছে, ভিকটিমের সঙ্গে নিজ পাড়ার আবদুল শুক্কুরের ছেলে প্রভাবশালী নুরুল ইসলামের সঙ্গে শারমিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে তিনি গর্ভবতী হয়ে পড়েন। এই অবস্থায় নুরুল ইসলাম আবারো বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারমিনকে গর্ভপাত ঘটাতে বাধ্য করেন। এত ভিকটিম ও তার পরিবার নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক গর্ভপাত ঘটানোর অভিযোগে ২০১৯ সালের ১১ই নভেম্বর কক্সবাজার সদর থানায় মামলা করে। ওই মামলায় নুরুল ইসলাম কারাভোগ করেন।
পরে জামিনে এসে শারমীন ও তার পরিবারকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেয় অভিযুক্ত নুরুল ইসলাম।ব্যর্থ হয়ে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে পরিবারের অজান্তে শারমিনকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসে। সেখানে ইপিজেড থানা এলাকার একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যায়। পরে ১৯শে নভেম্বর চট্টগ্রামে ফিরে যাওয়ার আগে নুরুল ইসলাম সুযোগ বুঝে শারমিনকে হত্যা করে। তাকে সহায়তা করে বেয়াই (বোনের দেবর) আকতার হোসেন (৩৫) ও ট্যাক্সি চালক মেহেরাজ প্রকাশ মিরাজ (২৩)।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল হারুন হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে গণমাধ্যমে বলেন, “আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি আশা করছেন আদালতে জবানবন্দিতে একই ধরনের স্বীকারোক্তি প্রদান করবে।”
যেভাবে শারমীনকে হত্যা করা হয়
নুরুল ইসলাম ও তার বেয়াই আকতার হোসেন এবং মিরাজ-এই তিনজন শারমীনকে হত্যার পরিকল্পনা করে।পরিকল্পনা অনুযায়ি গত ১৯শে নভেম্বর হোটেল থেকে শারমিনকে নিয়ে ট্যাক্সিতে করে কাপ্তাইয়ের বিভিন্ন স্পটে বেড়াতে বের হয়। তারা কাপ্তাই রোড ধরে চট্টগ্রাম শহরের দিকে আসার পথে রাউজানের পাহাড়তলি এলাকা পার হয়ে নিরিবিলি জায়গায় এলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে অভিযুক্ত নুরুল ইসলাম ও আক্তার শারমিনকে প্রথমে গলা চেপে ধরে। পরে গলায় ওড়না পেঁচয়ে হত্যা করে গাড়ির ভেতর।
পরে গাড়িটি নোয়াপাড়া পথেরহাট থেকে উত্তরমুখী রাউজান-নোয়াপাড়া সেকশন-২ পথের প্রায় চার কিলোমিটার ভিতরে গিয়ে নিরিবিলি স্থানের পূর্বগুজরা ইউনিয়নের সিকদার ঘাট সংলগ্ন স্থানে লাশটি ফেলে চলে যায়। তখন বাজে রাত সাড়ে ৮টা। পরদিন ২০শে নভেম্বর দুপুর ১২টার রাউজান থানা পুলিশ মৃত আমেনা আক্তারের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্যে মর্গে পাঠায়।