নভেম্বর ২৮, ২০২১, ০৭:৫৩ পিএম
জাতির পিতাকে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল সেই জিয়া, এরশাদ বা খালেদা জিয়া কেউই দেশকে উন্নত করতে চায়নি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার(২৮ নভেম্বর) একাদশ জাতীয় সংসদের পঞ্চদশ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে তিনি একথা বলেন।
বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হতো উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের দুর্ভাগ্য জাতির পিতাকে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল সেই জিয়া, এরশাদ বা বেগম জিয়া কেউই দেশকে আসলে উন্নত করতে চায়নি। ক্ষমতা ছিল তাদের কাছে ভোগের বস্তু।”
তিনি বলেন, “তাদের ক্ষমতা মানে নিজের জীবনকে বিলাস- ব্যসনে ব্যস্ত রাখা এবং ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে একটি এলিট শ্রেণি কৈরী করা এবং কিছু লোককে দলে টানা। কাজেই দেশের সাধারণ মানুষ যে তিমিরে সেই তিমিরেই রয়ে যায়।”
জাতীয় সংসদের সংসদ নেতা বলেন, “জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করার প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হওয়া দেশের জন্য একটি ‘একটা অনন্য উত্তোরণ’ এবং ‘বিরল সম্মান অর্জন’।”
বর্তমান সরকারের অগ্রগতির জন্য পরিকল্পিত নীতি এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রার বাস্তবায়নকে কৃতিত্ব দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “তারা ‘রূপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়নে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করাই এখন মূল লক্ষ্য।”
শেখ হাসিনা বলেন, “২০২০ থেকে ২০২১ সাল জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী অর্থাৎ মুজিববর্ষ এবং ২০২১ সাল আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। এই সময়ে এই অর্জন আমাদের জন্য অনেক গৌরবের। কারণ জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী যখন আমারা উদযাপন করছি সেই সময় এই যুগান্তকারি অর্জন বাংলাদেশ পায়। বাঙালি জাতির জন্য এটা একটা বিরল সম্মান অর্জন। বিশ্বসভায় বাংলাদেশ এবং বাঙালি জাতির জন্য একটা অনন্য উত্তোরণ।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ ঘোষিত ‘রুপকল্প-২০২১’ এবং এরই আলোকে আমরা যে পরিকল্পনাগুলো পর পর নিয়েছি সে সময় অনেকে ধারণাই করতে পারেননি বাংলাদেশের এ ধরণের উত্তোরণ ঘটতে পারে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা এবং পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা নিয়ে পরিকল্পিতভাবে এগিয়েছি বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।” “সে সময় অনেক সমালোচনা সহ্য করতে হলেও তাঁর বিশ্বাস ছিল তার সরকারের এই পরিকল্পিত প্রচেষ্টার একটা সুফল বাংলাদেশ পাবে” বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “এই দেশটাকে তিনি চেনেন এবং জানেন যে কারণে সমালোচনায় কান না দিয়ে অভিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করেই তাঁর সরকার আশু, মধ্য এবং দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে সরকার এগিয়েছে।”
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) ক্যাটাগরি থেকে চূড়ান্তভাবে বাংলাদেশের উত্তরণের ঐতিহাসিক রেজুলেশন গৃহীত হয়েছে। রেজুলেশনটি গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে পরবর্তী ধাপে (উন্নয়নশীল দেশে) উত্তরণের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করল। যুক্তরাষ্ট্র সময় ২৪ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রেজুলেশন গৃহীত হয়।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ সময় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছিলেন। সে সময় সৌদি পরিবহন মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার সালেহ নাসের আল জাসেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সংসদ অধিবেশনে পরিদর্শনে আসেন এবং অধিবেশন প্রত্যক্ষ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কেবল উন্নয়নশীল দেশ হয়েছে বলে নয়, সর্বক্ষেত্রেই বিশ্বে আজ বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। যা বাংলাদেশের জন্য একটা বিরাট অর্জন।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনেকরি যত সমালোচনাই করুক বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যই আমরা কাজ করে যাচ্ছি এবং আমরা কাজ করে যাব। তবে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাব, বাংলাদেশের এই গতি যেন আর কেউ রোধ করতে না পারে।”
তিনি বার বার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার মাধ্যমে তাঁদের সেবা করার সুযোগ দেয়ায় বাংলাদেশের জনগণের প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতা জানান।
আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা, হরতাল, অবরোধ- এসব কর্মকা- উন্নয়নের গতিকে বাধাগ্রস্থ করেছে- এমন অভিমত ব্যক্ত করে তিনি বলেন, “বিএনপি’ আহুত অবরোধ আজ পর্যন্ত প্রত্যাহার করা হয়নি।”
তিনি বলেন, “উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টির জন্য নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হয়েছে। একইসঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে করেছে। এরপরে এই কোভিড-১৯ মহামারিও আমাদের মোকাবিলা করতে হয়েছে। বিশ্বের অর্থনীতির চাকা যখন স্থবির তখন আমরা তা সচল রেখেছি। এর ফলে দেশের অর্থনীতি গতিশীল রেখে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। দেশের মানুষকে সুন্দর জীবন দেয়ায় আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করা।”
২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তোরণ সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও করোনা ভাইরাস মহামারীর মধ্যে যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে বাংলাদেশ জাতিসংঘের কাছে আরো দুই বছর সময় চেয়ে নিয়েছে বলেও সংসদে জানান প্রধানমন্ত্রী।
২০২৬ সাল থেকে বাংলাদেশ পরিপূর্ণভাবে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে তার সব ধরনের কাজ করতে পারবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “এলডিসি থেকে আমরা যেই উত্তোরণ পেয়েছি এটা বাংলাদেশের জন্য অনেক সুযোগ সৃষ্টি করেছে। অর্থাৎ আমরা মনে করি বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে আরেকটি মাইলফলক। বাংলাদেশকে সারাবিশ্বের কাছে ব্রান্ডিং করার একটা সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতি উদীয়মান, বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের বাজার সৃষ্টির সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে এমন একটা বার্তা এখন বিশ্বব্যাপী পাবে। বিশ্ববাসীর কাছে আমরা সেটা পৌঁছাতে পারবো।”
বৃটেনের গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিক এ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর) এর বরাত দিয়ে তিনি বলেন, “অর্থনৈতিক বিকাশ অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৩ তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ।”
তিনি বলেন, “বৈশ্বিক শান্তি সূচক ২০২০ অনুযায়ি শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান ৭ ধাপ উন্নীত হয়েছে। দারিদ্রের হার যা ৪০ ভাগ ছিল আজকে তা ২০ দশমিক ৫ ভাগে নামিয়ে এনেছি। আমাদের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৫৪ মার্কিন ডলার উন্নীত হয়েছে। জিডিপি আমরা ৮ ভাগে নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু করোনার কারণে সেটা আর ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। বিশ্বব্যাপী করোনার কারনে সব কিছু বন্ধ থাকার পরও বাংলাদেশ ৫ দশমিক ৪৩ ভাগ জিডিপি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্ব্বোচ্চ।”
সূত্র: বাসস