করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে বা নিয়ন্ত্রণে আনতে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের পাশপাশি টিকা নেওয়ার বিকল্প নেই। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের করোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ওইসব দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এর প্রধান কারণ ওইসব দেশের জনগণকে ব্যাপকভাকে টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনা গেছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণে দৈনিক মৃত্যু ও শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আমাদের দেশের জনগণও টিকা নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠছে।
দেশে করোনায় নতুন শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকায় সবার মধ্যে টিকা নিতে আগ্রহ দেখা গেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর এরই ধারাবাহিকতায় টিকা নিবন্ধনে বেশ সাড়া পড়েছে। তাইতো নিবন্ধনের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে চলতি বছরের জানুয়ারিতে শুরুর পর থেকে গত ৬ জুলাই পর্যন্ত করোনা টিকার জন্য নিবন্ধন করেছিলেন ৭২ লাখ ৯৩ হাজার ২৫৮ জন। ভারত থেকে টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা তৈরি হলে মাঝে অবশ্য ২ মাস টিকা নেওয়ার জন্য নিবন্ধন কর্মসূচি বন্ধ ছিল। গত মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) পর্যন্ত সারা দেশে ১ কোটি ৩০ লাখ ৬৫ হাজার ৭১৭ জন টিকা নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন। অর্থাৎ মাত্র ২১ দিনে টিকা নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন ৫৭ লাখ ৭২ হাজার ৪৫৯ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়,দুই মাস বন্ধ থাকার পর দ্বিতীয় দফায় করোনাভাইরাসের টিকা নিবন্ধনের শুরুতে এ পর্যন্ত ৫৭ লাখ ৭২ হাজার ৪৫৯ জন যুক্ত হতে পেরেছেন। দেশে গত ২৬ জানুয়ারি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার জন্য নিবন্ধন শুরু হয়। পরে হঠাৎ টিকা অপ্রতুল হওয়ায় মে মাসের প্রথম সপ্তাহে নিবন্ধন বন্ধ করে দেয়া হয়। ওই সময় পর্যন্ত প্রায় ৭৩ লাখ মানুষ টিকা নিতে নিবন্ধন করেন।
টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম দফায় অগ্রাধিকার তালিকা ছাড়া ৪০ বছরের বেশি বয়সীরা শুধু নিবন্ধন করতে পেরেছিলেন। পরবর্তীতে সরকার টিকা দিতে সাধারণ জনগণের বয়সসীমা ৩০ বছরে নামিয়ে আনে। এর ফলে ৩০ বয়সের বেশি সবাই টিকার জন্য নিবন্ধন করতে পারছেন। যদিও ৩০ বছরের নিচে ফ্রন্টলাইনাররা এখন নিবন্ধন করতে পারছেন না। তবে আগামী ৭ আগস্ট থেকে দেশব্যাপী এনআইডি (জাতীয় পরিচয় পত্র) কার্ড দেখে টিকাদান কর্মসূচি চালু করা হবে বলে মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) জানানো হয়েছে। এটি চালু হলে দেশের জনগণ ব্যাপকহারে টিকা নিতে পারবেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, কোভ্যাক্স থেকে ফাইজার ও মর্ডানার এবং চীন থেকে কেনা সিনোফার্মের প্রথম চালান এলে গত ৭ জুলাই দ্বিতীয় দফায় টিকা নিবন্ধন শুরু হয়। এদিকে ১৭ জুলাই থেকে দেশের সিটি করপোরেশন এলাকায় মডার্নার টিকাদান কর্মসূচি চালু হয়েছে। আগের দিন ১৬ জুলাই দেশব্যাপী সিনোভ্যাক টিকা চালু করা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশে এ পর্যন্ত মোট ১ কোটি ২৩ লাখ ৩৪ হাজার ৪৭৯ ডোজ টিকাদানের মধ্যে প্রথম ডোজ হিসেবে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৫৮ লাখ ২০ হাজার ৩৩টি, ফাইজার-বায়োএনটেকের ৫০ হাজার ৫২৩টি, সিনোফার্মের ১৬ লাখ ৮৪ হাজার ১২২টি এবং মডার্নার ৪ লাখ ৮১ হাজার ৭১৫টি ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। গত ২৭ জুলাই পর্যন্ত অক্সফোর্ডের টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪২ লাখ ৯৮ হাজার ৮৬ জন।