জানুয়ারি ১৪, ২০২৩, ১০:৩২ পিএম
দুই দিনের সফরে ঢাকায় ব্যস্ততম সময় পার করছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল (রা.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন তিনি।
দুদিনের সফরে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বৈঠক করবেন। রবিবার পৃথকভাবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী,পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে দেখা করবেন। একই দিনে তিনি আইনমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে পারেন।
এছাড়া,তিনি মার্কিন দূতাবাসের অনুষ্ঠানে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলবেন বলে জানা গেছে। এসব বৈঠকে মানবাধিকার পরিস্থিতি, গণতন্ত্র এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, গুম, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, শ্রম অধিকারসহ কয়েকটি এজেন্ডাকে গুরুত্ব দিতে পারে ওয়াশিংটনের দূত।
ডোনাল্ড লু ভারত সফর শেষ করেই ঢাকা এসেছেন। তার এই সফর ঘিরে ঢাকার কূটনীতিক পাড়া, সরকারের ভেতরে ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা। দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের নিরাপত্তা নিয়ে ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্যে তৈরি হওয়া শীতল সম্পর্কের মধ্যে এবং আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ডোনাল্ড লু’র ঢাকা সফরে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা থাকতে পারে বলে মনে করছেন কুটনীতিক পাগার অনেকে। বাইডেন প্রশাসনের কী বার্তা তিনি নিয়ে আসছেন তা জানতে বিভিন্ন মহলে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে।
তবে লু’র ঢাকা আসার আগে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে বাংলাদেশে পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করা, অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা এবং শ্রম ও মানবাধিকার বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি শোনার জন্য বৈঠক করবেন মার্কিন সহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এছাড়া, জ্বালানি, বাণিজ্য, নিরাপত্তা সহযোগিতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, শ্রম অধিকার ও মানবাধিকারসহ অগ্রাধিকারের ইস্যুতে বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করবেন বলে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মিডিয়া নোটে বলা হয়েছে।
তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক উচ্চ পর্যায়ের কূটনীতিক শনিবার সন্ধ্যায় দ্য রিপোর্ট ডটি লাইভকে বলেন, ‘ ডোনাল্ড লু’র ঢাকা সফরের সবকিছুই উল্লেখযোগ্য।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনও গতকাল শুক্রবার বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র বন্ধু দেশ, তারা গঠনমূলক কোনো পরামর্শ দিলে বাংলাদেশ তা গ্রহণ করবে।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, “আমি ডোনাল্ড লু’র সফরকে দুই পক্ষের মধ্যে নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে মনে করি। এমন অনেক ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে বাংলাদেশের কিছু প্রত্যাশা জড়িত। তেমনি বাংলাদেশের কাছে যুক্তরাষ্ট্রেরও প্রত্যাশা থাকতে পারে। আমরা দুই পক্ষই খোলাখুলি আলোচনা করবো।”
শনিবার (১৪ জানুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাপানি স্টাডিজ বিভাগের এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী একই কথা বলেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. আব্দুল মোমেন বলেন, “বন্ধু দেশ বলে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) আমাদের অনেক উপদেশ দেয়। আমরা এটাকে স্বাগত জানাই। বাংলাদেশ ভালো প্রস্তাব পেলে সেটা গ্রহণ করে। আমরা যেটা ভালো সেটা গ্রহণ করি। এতে করে আমাদের অর্জন বাড়ে।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, মার্কিন সহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র সঙ্গে রবিবারের বৈঠকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটলিয়নের (র্যাব) ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা বহাল ও রোহিঙ্গা ইস্যুকে প্রাধান্য দেবে ঢাকা।
এর পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফেরত, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি মোকাবিলা, শ্রম অধিকার ইত্যাদি বিষয়ে ঢাকার পক্ষ থেকে আলোচনা তোলা হবে বলে জানা গেছে।
সরকারের পাশাপাশি বিরোধী দল বিশেষ করে বিএনপি’র একটি প্রতিনিধি দল মার্কিন সহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে পারে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। ওই বৈঠকে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন,গুম, কর্মসূচিতে বাধা, নির্দলীয় নিরেপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে মত তুলে ধরাসহ নানা ইস্যু স্থাপন পাবে বলে দলটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির এক সদস্য জানিয়েছেন।
অঅন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া অঞ্চলে মার্কিন প্রশাসনের বিশিষ্ট নীতিনির্ধারকদের একজন হওয়ায় দুদেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারেন ঢাকা সফররত ডোনাল্ড লু। ঢাকা-ওয়াশিংটনের সম্প্রতি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মধ্যে যে সমস্যাগুলো তৈরি হয়েছে, তা কীভাবে নিরসন করা যায়, সে বিষয়ে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠক অব্যাহত রাখার বিষয়ে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকেরা।