ডিসেম্বর ৩১, ২০২২, ১০:১৭ এএম
দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে দাবি করেছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থাটি বলছে, নাগরিকের বাক্স্বাধীনতা ও রাজনীতিতে নিজস্ব মতামত প্রকাশ করার অধিকার খর্ব হচ্ছে।
গতকাল শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এমএসএফের বার্ষিক পর্যবেক্ষণে এ দাবি করা হয়। বেসরকারি এই সংস্থাটি আরও বলেছে, দেশের কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গবেষণা প্রতিবেদনে ২০২০ ও তার পরের বছর দারিদ্র্যের হার ঊর্ধ্বগতি বলা হলেও তা মানছে না সরকার। ফলে দেশে দারিদ্র্যের বর্তমান হার নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুলতানা কামাল স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, মানবাধিকারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সূচক পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২২ সালে রাজনৈতিক, নাগরিক ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে কার্যত কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি, বরং প্রায় সবক্ষেত্রে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর দেশে বিরাজমান সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতি ছিল উদ্বেগজনক।
এমএসএফ’র প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চলতি ২০২২ সালে মানবাধিকারের বিচারে অন্যতম উদ্বেগের বিষয় ছিল গায়েবি মামলা ও গ্রেপ্তার। এ ধরনের মামলায় সরকার বিরোধী ব্যক্তি ও দলের সদস্যরা আসামি হয়েছেন। বিশেষ করে বিএনপির বিরুদ্ধে কথিত গায়েবি মামলা এবং এসব মামলায় গ্রেপ্তারের সংখ্যা ক্রমশ মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়েছে। এ ছাড়া গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা, সাংবাদিক নির্যাতন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা, পুলিশ হেফাজত ও কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং নারী, শিশু ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ক্রমবর্ধমান হারে ঘটেই চলেছে।
অবহেলাজনিত কারণে এ বছরের ৪ জুন সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার টার্মিনালে অগ্নিকাণ্ড ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে কেমিক্যাল, প্লাস্টিক, জুতা, আতশবাজি গুদাম ইত্যাদিসহ মোট ৬১টি প্রতিষ্ঠানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, সেসব ঘটনায় ২৩ জন শ্রমিকের মৃত্যু ও ৮৯ জন গুরুতরভাবে দগ্ধ হয়েছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এ বছর রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৪১টি ও সভা সমিতিতে বাধার ৬৮টি ঘটনায় ৩৬ জন নিহত ও আহত হয়েছেন ৪ হাজার ৯২৮ জন। নিহতদের মধ্যে ১০ জন বিএনপির কর্মী ১৮ জন আওয়ামী লীগের এবং ৮ জনের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি।
২০২২ সালে ২২টি ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এ ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার ২৩টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৩০ জন অপহরণের শিকার হয়েছেন। কারা হেফাজতে ৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা বিগত বছরের তুলনায় ৪২ জন বেশি। বিগত চার মাসে ৫১টি অজ্ঞাতনামা মরদেহ উদ্ধার হয়েছে, যার মধ্যে ১৩ জন নারী এবং বাকিদের মধ্যে প্রায় সবাই যুবক।
প্রতিবেদনে সাংবাদিক নির্যাতনের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, এ বছর একজন নিহতসহ ২৬৬ জন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১ জন নিহত, ১১৬ জন আহত, ৭১ জন লাঞ্ছিত, ১৭ জনের ওপর আক্রমণ ও ৬১ জন হুমকির শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া ৫ জন সাংবাদিকের মরদেহ উদ্ধার ও ১ জন সাংবাদিক ইউএনওর গাড়ির চাপায় নিহত হয়েছেন।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৮২টি মামলা হয়েছে এবং গ্রেপ্তার হয়েছেন ৭৭ জন।
এমএসএফের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ বছরে ১১৩টি গণপিটুনি বা সংঘবদ্ধ পিটুনির ঘটনা ঘটেছে। যেখানে ৬১ জন নিহত হয়েছেন ও গুরুতর আহত হয়েছেন ২ জন নারীসহ ৭৬ জন।