এপ্রিল ২৯, ২০২২, ০৮:১৫ পিএম
নাড়িছেড়া ধন হারিয়ে গেলে কতটা কষ্ট লাগতে পারে একজন মায়ের? তাও অন্য কোনো কারণে নয়, সাধারন একটি মাথাগোঁজার ঠাঁইয়ের অভাবে! পৃথিবীর কোনো বাটখাড়া নেই সেই সন্তান হারাবার কষ্ট মাপার।
‘বৃদ্ধা আলেয়া বেগম প্রায় তিন যুগ ধরে বরগুনা শহরের ভাড়ানি খালের মাছ বাজার ব্রিজের নিচে একটি ছাউনি তুলে তাতে বসবাস করে আসছেন। ব্রিজের নিচে ময়লার ভাগাড়ের পাশেই কাঠের তক্তা পেতে কোনোমতে একটি খুপরি ঘর করেছেন তিনি। এখানেই একে একে নয়টি সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন আলেয়া। কিন্তু এই সন্তানদের সবাইকে হারিয়েছেন তিনি। সন্তান হারাবার শোকে এখন তিনি পাথর। কীভাবে এই সন্তানদের তিনি হারিয়েছেন? তার মুখ থেকেই শোনা গেল সেই শোকগাঁথা।
আলেয়ার কষ্টের সংসারে স্বামী-স্ত্রী দুজনকে জীবন যুদ্ধে নামতে হতো। শিশু সন্তানদের খুপরি ঘরে ঘুমিয়ে রেখে জীবিকার তাড়নায় বাজারে কাজে যেতেন তিনি; এসে দেখতেন খাট থেকে গড়িয়ে খালে পড়ে পানিতে ডুবে মরে গেছে নাড়িছেঁড়া ধনটি। একটি নয়, এভাবে তার নয় নয়টি সন্তানই মারা যায়! শুধু একটি ঘর ছিল না বলে আলেয়ার জীবনে আলো করে আসা সন্তানগুলো মারা গেছে!
এই আলেয়ার মতো এ দেশে বহু আলেয়া আছেন, যাদের একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই না হওয়ায় বহু কষ্ট, লাঞ্ছনা বঞ্চনার জীবন কাটে। কারো কারো সন্তানহারাও হতে হয়। এদের কথা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে শহরের মিডিয়ায় উঠে আসে না।
এমনই এক আলেয়ার খবর পেয়ে সরকারের তরফ থেকে তাঁকে ঘর করে দেওয়া হয়েছে। সেই ঘর পেয়ে অশ্রুজলে ভেসেছেন আলেয়া। এই অশ্রু আনন্দাশ্রু।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহকারী প্রেস সচিব-১ এম এম ইমরুল কায়েস তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে সেই আলেয়া সম্পর্কে আরও অনেক তথ্য তুলে ধরেছেন।
ইমরুল কায়েস লিখেছেন, ‘অবশেষে, বরগুনা সদরের খাজুরতলা আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে এবার ঠাঁই হলো ৬৫ বছরের আলেয়া বেগমের। এরকম লাখ লাখ আলেয়াদের দোয়া ও আশীর্বাদে, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য হাজার বছর বেঁচে থাকুন আপনি, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।’
ইমরুল কায়েস বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৬ এপ্রিল তৃতীয় পর্যায়ে সারা দেশে ৩২ হাজার ৯০৪টি অনগ্রসর-ছিন্নমূল পরিবারের কাছে ঈদ উপহার হিসেবে জমিসহ ঘর হস্তান্তর করেন। এ উপলক্ষে টিভি-প্রিন্ট-অনলাইন মিডিয়ার ২১ সদস্যের একটি টিম নিয়ে গত ২৫ এবং ২৬ এপ্রিল কাজ করেছি বরগুনা শহরে। ঘুরে ঘুরে স্বচক্ষে দেখেছি, প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ঘর পাওয়া দুস্থ-নিঃস্ব মানুষের পরিবর্তিত নতুন জীবন আর শুনেছি তাদের দিন বদলের গল্প; অবলোকন করেছি তৃতীয় পর্যায়ে অর্থাৎ এবারে ঈদ উপহার পাওয়া ভূমিহীন-গৃহহীনদের আনন্দ অশ্রু।
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের তৃতীয় ধাপে ৬৫ হাজার ৬৭৪টি একক ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। তৃতীয় ধাপের বাড়িগুলোকে আরও টেকসই ও জলবায়ু-সহনশীল করতে সরকার খরচ বাড়িয়েছে এবং নকশায় পরিবর্তন এনেছে। এখন ভূমিহীন ও গৃহহীনেরা ২ দশমিক ২ শতাংশ জমিসহ উন্নত মানের আবাস পাবেন। আরও টেকসই ও দর্শনীয় করতে বাড়িপ্রতি খরচ ১ লাখ ৯১ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছে।
মুজিব বর্ষে একটা মানুষও ভূমিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না’—প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন ঘোষণার পর সারা দেশের ভূমি-গৃহহীন পরিবারকে জায়গাসহ ঘর করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের এই ঘর পেয়ে আলেয়া বেগমের মতো শতসহস্র গৃহহীন আলেয়া তাদের চোখে আবার স্বপ্ন বুনছেন।