বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠপুত্র শেখ রাসেলের ৫৮তম জন্মদিন আজ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ বছর থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ছেলে শেখ রাসেলের জন্মদিন ‘শেখ রাসেল দিবস’ হিসেবে উদযাপিত হবে।
শেখ রাসেল ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর সাথে নিষ্পাপ রাসেলকেও নির্মমভাবে হত্যা করেছিল।
শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ রাসেল এক ভালোবাসার নাম : রাষ্ট্রপতি
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, দেশের শিশু-কিশোর ও তরুণ প্রজন্মের কাছে শেখ রাসেল এক ভালোবাসার নাম।
‘শেখ রাসেলের জন্মদিন’ উপলক্ষে এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, রাসেল আজ দেশের আনাচে-কানাচে এক মানবিক সত্ত্বা হিসেবে সবার মাঝে বেঁচে আছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ছেলে শহীদ শেখ রাসেলের শুভ জন্মদিন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
আবদুল হামিদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শিশুদের খুবই ভালোবাসতেন। তিনি জানতেন সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে হলে নতুন প্রজন্মকে সোনার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। শৈশব থেকেই তাদের মধ্যে চারিত্রিক গুণাবলির উন্মেষ ঘটাতে হবে। জ্ঞান-গরিমা, শিক্ষা-দীক্ষা, সততা, দেশপ্রেম ও নিষ্ঠাবোধ জাগ্রত করার মাধ্যমে তাদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন, শিশুদের মধ্যে স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে তুলে ধরতে সংশ্লিষ্ট সবাই আন্তরিক প্রয়াস অব্যাহত রাখবে।
শেখ রাসেল বেঁচে থাকলে একজন আদর্শ নেতা পেতাম : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শেখ রাসেল যদি বেঁচে থাকত, তাহলে হয়তো একজন মহানুভব, দূরদর্শী ও আদর্শ নেতা আজ আমরা পেতাম, যাকে নিয়ে দেশ ও জাতি গর্ব করতে পারত।
‘শেখ রাসেলের শুভ জন্মদিন’ উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাসেল আজ বেঁচে থাকলে কী করত- এই ভাবনাটা আমাকে প্রায়ই ভাবায়। আজ এত বছর পরও শেখ রাসেলকে জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে। কারণ, রাসেল তার মহানুভবতা ও ব্যবহারে ছিল অমায়িক।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘বিভীষিকাময় সেই রাতের প্রতিটি ক্ষণ, প্রতিটি মুহূর্ত এখনও গভীর শোকের সঙ্গে স্মরণ করি। এখনও ভাবি, কারো বিরুদ্ধে শত্রুতা থাকতেই পারে, কিন্তু সেই ক্ষোভ একজন কোমলমতি শিশুকে কেন কেড়ে নিবে? এই শিশু কী দোষ করেছিল? সে তো কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। সে কেন এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের অংশ হবে? এতসব স্মৃতি স্মরণ করতে কষ্ট হয়। বুকে পাথর বেঁধে সেসব স্মৃতির সাগরে ডুব দেই। কারণ সেদিন ঘাতকের বুলেট যে কোমলমতি শিশুটির প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল, সে ছিল নির্দোষ-নিষ্পাপ।’
শেখ হাসিনা বলেন, শেখ রাসেল ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর ঢাকার ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বাসায় জন্মগ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অত্যন্ত প্রিয় লেখক ছিলেন খ্যাতনামা দার্শনিক ও নোবেলজয়ী লেখক বার্ট্রান্ড রাসেল। জাতির পিতা বার্ট্রান্ড রাসেলের বই পড়ে বঙ্গমাতাকে ব্যাখ্যা করে শোনাতেন। তাই বঙ্গবন্ধু আর বঙ্গমাতা দুজনে মিলে শখ করে তাঁদের আদরের ছোট ছেলের নাম রেখেছিলেন ‘রাসেল’। রাসেল নামটি শুনলেই প্রথমে যে ছবিটি সামনে আসে তা হলো- হাস্যোজ্জ্বল, প্রাণচঞ্চল এক ছোট্ট শিশুর দূরন্ত শৈশব; যে শিশুর চোখগুলো হাসি-আনন্দে ভরপুর। মাথাভর্তি অগোছালো চুলের সুন্দর একটি মুখাবয়ব, যে মুখাবয়ব ভালোবাসা ও মায়ায় মাখা।’
প্রধানমন্ত্রী ‘শেখ রাসেল দিবস ২০২১’ উপলক্ষে গৃহীত সব কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।
শহীদ শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আজ সকাল ৮টায় বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত শেখ রাসেলসহ ১৫ আগস্টে নিহত শহীদদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে।
এ ছাড়া ‘শেখ রাসেল দিবস’ উপলক্ষে ১৯ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৩টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠন এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।