ডিসেম্বর ২৫, ২০২২, ০৫:৩৫ পিএম
আজ ২৫শে ডিসেম্বর-ক্রিসমাস ডে, অনেকের কাছে বড়দিন হিসেবে পরিচিত। যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন উপলক্ষে এই উৎসব পালিত হয়ে থাকে। এই দিন মানেই কেক, উপহার, সুন্দর করে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো আরও অনেক কিছু।
খ্রিষ্টান ধর্মের প্রবর্তক যিশু খ্রিষ্ট মানবজাতির উদ্ধারকর্তা হিসেবে এই তারিখে পৃথিবীতে আবির্ভাব হয়েছিলেন। হিংসা বিদ্বেষপূর্ণ মানুষকে সুপথে আনার জন্যই তার আগমন হয়েছিল বলে মনে করেন এ সম্প্রদায়ের মানুষ।
এটিকে বাংলায় "বড়দিন" নামকরণের ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, "মর্যাদার দিক থেকে এটি একটি বড়দিন।যিশু যেহেতু বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য ধর্ম ও দর্শন দিয়ে গেছেন, বিশ্বব্যাপী বিশাল অংশের মানুষ তার দেয়া ধর্ম ও দর্শনের অনুসারী। যিনি এতো বড় ধর্ম ও দর্শন দিলেন ২৫শে ডিসেম্বর তার জন্মদিন। সে কারণেই এটিকে বড়দিন হিসেবে বিবেচনা করে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ।"
ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ এ বিষয়ে আরও বলেন, "আঠারো ও উনিশ শতকে ইউরোপীয়রা এসে এ অঞ্চলে খ্রিস্ট ধর্ম প্রচার করে। যারা ধর্মটি গ্রহণ করেছেন তাদের কাছে এটি আরও মহিমান্বিত বিষয়। বাঙালি যারা খ্রিস্টান তাদের অধিকাংশই এই ধর্মে রূপান্তরিত হয়েছেন। তারা ভাবেন যিশু এমন একজন যিনি তাকে ধর্ম দিয়েছেন। তাই তার জন্মদিনটাই তারা সব আবেগ দিয়ে পালন করেন। এ কারণেই দিনটি তাদের কাছে বড়দিন হিসেবে বিবেচিত।"
খ্রীষ্ট ধর্মের এক বিরাট উৎসব হলেও দেশ-কাল-সীমানা-ধর্মের গণ্ডি পেরিয়ে বড়দিন আজ সারা বিশ্বের মানুষের কাছে এক বিশেষ উৎসবে পরিণত হয়েছে। তাইতো বড়দিন এলে লাল পোশাক, লাল টুপি পরা সাদা ধবধবে দাড়ি-ভ্রু-ওয়ালা সান্তা ক্লজ আর ক্রিসমাস ট্রি নিয়ে বেশ আগ্রহ দেখা যায়, বিশেষ করে শিশুদের।
সান্তা ক্লজ কে ছিলেন?
ধারণা করা হয়, সেন্ট নিকলাস নামে একজন ধনী লোক ছিলেন এশিয়ার মাইনরে বর্তমানে তুরস্কের পাতারা নামক স্থানে।তিনি সবসময় গরীবদের সাহায্য করতেন, গোপনে উপহার রেখে চলে যেতেন।
কথিত আছে, একদিন তিনি জানতে পারেন এক গরীব লোকের তিনটি মেয়েকে অর্থের অভাবে বিয়ে দিতে পারছিলেন না। ফলে দাস হিসেবে বিক্রি করে তে চান। নিকলাস জানতে পেরে ওই লোকের বাড়ির সামনে সোনা ভর্তি তিনটি থলে রেখে যান।
ঘটনাক্রমে আগের দিন রাতে গরীবলোকটি মোজা শুকাতে দিয়েছিলেন।সকালে মোজা আনতে গিয়েই সোনা ভর্তি পরপর তিনটি ব্যাগ পান।লোকটি ভাবেন এতা হয়তো ঈশ্বরের পাঠানো উপহার।
এটাই ছিল মূলত মূল গল্প। পরে অবশ্য লোকটি নিকোলাস এর সন্ধান পেয়েছিলেন, তবে তিনি একথা কাউকে জানাতে নিষেধ করেছিলেন।নিকোলাসের গোপনে সাহায্য করার এই প্রক্রিয়া চলতেই থাকে।ধিরে ধিরে এই নিকলাস ফাদার নিকলাস বা সান্তা নামে পরিচিত হতে থাকে।
যিনি সবসময় সাহায্য প্রার্থীকে সাহায্য করেন।তিনি ছিলেন বরফ ডাকা মেরু প্রদেশের বাসিন্দা।যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিনে তিনি স্লেজে চড়ে পৌঁছে যেতেন সবার বাড়িতে,রেখে যেতেন উপহার।
তাইতো এখনও পর্যন্ত খ্রিস্টান ধর্মীয় লোকেরা আগেরদিন রাতে মোজা ঝুলিয়ে রাখেন,বিশ্বাস করেন চুপিচুপি সান্তা আসবেন এবং তাদের জন্য উপহার রেখে যাবেন। এই জনপ্রিয় বিষয়টি শেষ পর্যন্ত উৎসব আকারে পালিত হতে থাকে যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিনে।
ডাচ ভাষায় সেন্ট নিকোলাসকে সংক্ষিপ্তভাবে সিন্টার ক্লাস নামে ডাকা হতো। এই সিন্টার ক্লাস থেকেই সান্তা ক্লজ নামটির উৎপত্তি হয়েছে।
তবে আজকের সান্তা ক্লজের যে রূপ চোখে পড়ে, সেটি ১৮২২ সালে ক্লেমেন্ট ক্লার্ক মুর নামে এক মার্কিন কবির লেখা An Account of a Visit from St. Nicholas – কবিতা থেকে এসেছে।
জনপ্রিয় সেই কবিতায় ফুটে উঠেছিল - ৮টি হরিণ টানা স্লেজ গাড়িতে উড়ে উড়ে লাল পোশাক, কালো বেল্ট সাদা বর্ডার দেওয়া লাল টুপি পরা সাদা দাড়িওয়ালা এক ব্যক্তি ছোটদের বাড়ি গিয়ে উপহার দিচ্ছেন।
যেভাবে ক্রিসমাস ট্রি’র প্রচলন
বড়দিনটিকে আরও উৎসব মুখর করে তুলতে চেরি ট্রি কে বিভিন্ন লাইটিং দিয়ে সাজিয়ে রাখে ঘরের এককোণে যাকে আমরা ক্রিস্টমাস ট্রি বলে থাকি। ধারণা করা হয়ে থাকে, হাজার হাজার বছর আগে উত্তর ইওরোপে প্রথম ক্রিসমাস ট্রি-র প্রথা শুরু হয়। সেখানকার মানুষ বিশ্বাস করতেন যে বাড়িতে চিরসবুজ এই ফার গাছ লাগালে অশুভ শক্তি দূরে সরে যায়।
এ অনুষ্ঠানে শিশুদের উপহার দেয়ার প্রচলন রয়েছে। বর্তমানে কেক কেটে, উপহার আদান প্রদান করে বর্ণাঢ্য ভাবে যিশু খ্রিষ্টের অনুসারীরা এই দিনটি পালন করে থাকে।