বাস ধর্মঘটে চরম ভোগান্তিতে যাত্রীরা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

নভেম্বর ৫, ২০২১, ১০:০৭ এএম

বাস ধর্মঘটে চরম ভোগান্তিতে যাত্রীরা

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে শুক্রবার (৫ নভেম্বর) ভোর ৬টা থেকে সারাদেশে চলছে পরিবহন ধর্মঘট। সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ ট্রাক-বাস মালিক অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির ডাকে এই পরিবহন ধর্মঘট চলছে।

ধর্মঘটের কারণে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রাজধানীসহ সারাদেশের সাধারণ যাত্রীরা। রাজধানীর প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিতি যাত্রাবাড়ী, গাবতলীসহ রাজধানীর প্রায় প্রতিটি বাসস্টপেজে দেখা গেছে গাড়ির জন্য অপেক্ষমায় থাকা যাত্রীদের ভিড়। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা পরীক্ষার্থীরা। সকাল ১০টায় এই পরীক্ষা শুরু। সাত কলেজের নিয়ন্ত্রক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা আগেই জানিয়েছিলেন পরিবহন ধর্মঘট চললেও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।  

রাজধানীর মাতুয়াইল বাসস্টপেজে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন বেশ কয়েকজন পরীক্ষার্থী। তাদের পরীক্ষার কেন্দ্র ঢাকা কলেজে। তারা দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে জানান, হঠাৎ গণপরিবহন বন্ধ হওয়ায  বেশ বিপাকে পড়তে হয়েছে তাদের। প্রায় এক ঘন্টা ধরে  গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে তারা কিন্তু কোন গাড়ি পাচ্ছে না। রিক্সা ও সিএনজি কয়েকগুণ বেশি ভাড়া চাচ্ছে। এখন বাধ্য হয়ে তাদের অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে হচ্ছে।

মতিউর রহমান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, “মাতুয়াইল থেকে ঢাকা কলেজে যেতে সিএনজি ভাড়া সাধারনত ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকার মতো। এখন তারা ৬০০ টাকা ভাড়া চাইছে।”

আনিসুর রহমান নামে আরেক পরীক্ষার্থী বলেন, তেলের দাম বৃদ্ধির সময় সরকারের  উচিত ছিল বাস ভাড়ার বিষয়টি সমাধান করা। তেলের মূল্য বাড়লেতো  পরিবহন মালিকরা বাসভাড়া স্বাভাবিক ভাবেই বাড়াতে চাইবে। তবে হঠাৎ করে এভাবে পরিবহন ধর্মঘট ডেকে আমাদের মতো সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তিতে ফেলা তাদের উচিত হয়নি।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে জানিয়েছেন, ‘ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির মালিকেরা জানাচ্ছেন, তারা শুক্রবার থেকে গণপরিবহন চালাবেন না। কারণ এতে মালিকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই কঠোর ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এই (ধর্মঘট প্রত্যাহারের) বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো প্রস্তাব আসেনি। তবে আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে রবিবার বৈঠক ডেকেছে সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। ওই বৈঠকে একটা সমাধান আসতে পারে বলেও তিনি জানান।

প্রসঙ্গত, বুধবার (৩ নভেম্বর) ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটার প্রতি ১৫ টাকা বাড়ায় সরকার। বুধবার রাতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অক্টোবরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বিভিন্ন গ্রেডের জ্বালানি পণ্য বর্তমান মূল্যে সরবরাহ করায় মোট ৭২৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, বর্তমান ক্রয় মূল্য বিবেচনা করে ডিজেলে লিটার প্রতি ১৩.০১ টাকা এবং ফার্নেস অয়েলে লিটার প্রতি ৬.২১ টাকা কমে বিক্রয় করায় প্রতিদিন প্রায় ২০ কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে বিপিসি।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেশেও ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়িয়েছে সরকার। লিটার প্রতি এক লাফে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়েছে। সে হিসাবে দাম এক লাফে বাড়ল ২৩ শতাংশ। নতুন দাম ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে।

মূলত ডিজেল ও কেরোসিন তেলের দাম বাড়ানোর ফলে বাসভাড়া বাড়ানোর দাবিতে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয় সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন।

Link copied!