মশা মারতে এবার ঢাকার জলাশয়ে ব্যাঙ ছাড়তে শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। এরই মধ্যে একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প হিসেবে দশটি জলাশয়ে হাজার দশেক ব্যাঙাচি অর্থাৎ ব্যাঙের পোনা ছাড়া হয়েছে। কিন্তু ঢাকার দূষিত পানিতে ব্যাঙের পোনা বেঁচে থাকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
ব্যাঙের পোনা ছাড়ার পরিকল্পনা কেন?
মশায় অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। বিগত বছরগুলোর তুলনায় সম্প্রতি মশার পরিমান বেশি বিধায় পরীক্ষামূলকভাবে অনেক চিন্তা করা হয়। ২০১৭ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ঢাকার নর্দমাগুলোতে গাপ্পি মাছের পোনা ছাড়া হয়েছিল। গাপ্পি মাছগুলো এখনো বেঁচে আছে কি না এ বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য নেই দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে। ২০২০ সালে ঢাকার তিনটি জলাশয়ে ছাড়া হয়েছিল তেলাপিয়া মাছ এবং হাঁস। হাঁসগুলোর মধ্যে কয়েকটি মারা গেছে। যার ফলে জৈবিকভাবে মশা মারতে ব্যাঙ ছাড়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী বলেন, "ব্যাঙের পোনাগুলোকে জলাশয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে, আমরা আশা করছি আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এই পোনা পূর্ণাঙ্গ ব্যাঙে রূপান্তরিত হবে তখন তারা মশার লার্ভা খেয়ে ফেলতে শুরু করবে।’’দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যাঙের পোনা সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
মশা দমনের উপায়গুলো:
সিটি কর্পোরেশন মূলত চারভাবে মশা নিধন করে। মশার জন্মের উৎস ধ্বংস করে, জৈবিক পদ্ধতিতে মানে অন্য কোন প্রাণীকে দিয়ে লার্ভা নির্মূলের ব্যবস্থা করে, ওষুধ ছিটিয়ে এবং ফগার মেশিন দিয়ে ধোঁয়া ছিটিয়ে।
এর মধ্যে জৈবিক পদ্ধতি হচ্ছে, খাল, জলাশয়, নালাসহ বিভিন্ন বদ্ধ জলাশয়ে অন্য প্রাণী বিচরণের ব্যবস্থা করা। যাতে ওই সব প্রাণী যারা ছোটখাট পোকামাকড় খেয়ে জীবনধারণ করে, তাদের খাবারের তালিকায় মশা ও তাদের লার্ভা যুক্ত হলে, মশা বংশবিস্তার করতে পারবে না। ফলে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতেই মশা নিধন হবে।
বদ্ধ জলাশয়ে পানিপ্রবাহ খুব একটা না থাকায় এসব স্থানে দ্রুত মশার বংশবিস্তার ঘটে। ঢাকা দক্ষিণে সরকারি জলাশয়ের সংখ্যা ১০টি, তার সব কটিতেই ব্যাঙ ছাড়া হয়েছে। এ কার্যক্রমে সফল হলে পরবর্তীতে বেসরকারি জলাশয়েও ব্যাঙ ছাড়া হবে।
ব্যাঙের জীবন নিয়ে সংশয়?
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক কবিরুল বাশার বলেন, "পরীক্ষামূলকভাবে যে কোন কিছুই করা যেতে পারে। তবে গবেষক হিসেবে আমি মনে করি ঢাকা শহরের পানি প্রচণ্ড দূষিত। এতে ব্যাঙের পোনা বেঁচে না থাকারই কথা। আর যদি বেঁচেও থাকে তার পরে সেগুলো মশা মারার জন্য কতটা সক্ষম থাকবে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।"
তিনি বলেন, কার্যকরভাবে মশক নিধনের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করে কার্যক্রম নিলে তা ফলপ্রসূ হতে পারে।
মশার বংশ বিস্তার গত কয়েক বছর ধরেই বাড়ছে। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বিগত বছরের তুলনায় এবার ঢাকায় মশার ঘনত্ব চার গুণ বেড়েছে। গত কয়েক বছর ধরে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন মশা মারার জন্য বিভিন্ন অভিনব পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে।