নারায়ণগঞ্জের গ্লোব এডিবল অয়েল লিমিটেড থেকে ৬০ ড্রাম খোলা সয়াবিন কিনে কিশোরগঞ্জে মশিউর রহমান। পথিমধ্যে কিছু বুঝে ওঠার আগেই ট্রাকভর্তি তেল ডাকাতরা লুট করে নেয়। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পোশাক পরে ট্রাক থামিয়ে পৃথক কয়েকটি ঘটনায় কয়েকশ ব্যারেল খোলা ভোজ্যতেল লুট করা হয়। ভোজ্যতেলের উচ্চমূল্য থাকার কারনে বর্তমানে ডাকাতদের মূল লক্ষ্যই থাকে তেলবাহী ট্রাক ও পিকআপ।
ডাকাতি হয়েছে ৬ কোটি টাকার তেল
এক সপ্তাহের মধ্যে টাঙ্গাইল, কালীগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী ও নরসিংদীর শিবপুরে মহাসড়কে ভোজ্যতেল লুটের ঘটনা ঘটে। এখন পর্যন্ত যে হিসাব আছে তাতে লুণ্ঠিত তেল ও সরঞ্জামের মূল্য ৬ কোটি টাকার বেশি বলে জানায় ভুক্তভোগীরা। সম্প্রতি তেলের মূল্য বৃদ্ধি এর পেছনের কারণ বলে ধারণা করছেন অনেকে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শিবপুর উপজেলার ঘাসিরদিয়া এলাকায় র্যাব পরিচয়ে ট্রাক ভর্তি ৬০ ড্রাম সয়াবিন তেল ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ট্রাক ভর্তি ৬০ ড্রাম সয়াবিন তেল ডাকাতির মামলায় আন্তজেলা ডাকাত দলের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ বিষয়ে নরসিংদী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইন চার্জ মোহাম্মদ আবুল বাসার পিপিএম (বার) বলেন, আমাদের কাছে প্রযুক্তিগত তদন্তে চক্রটির সঙ্গে অনেকের দীর্ঘদিনের গোপন যোগাযোগের তথ্য-উপাত্ত মিলেছে। গ্রেফতারকৃত আসামি বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় সবকিছু স্বীকারও করেছেন। ঘটনাটির বিস্তারিত তদন্ত হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে সক্রিয় তেল ডাকাত দল
গত শুক্রবার (৪ মার্চ) দিবাগত রাত পৌনে চারটার দিকে শরীয়তপুরের সদর উপজেলার আংগারিয়া বাজারে দুইটি দোকানের ১১ ব্যারেল তেল নিয়ে যায় একটি চোর চক্র। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে আংগারিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আকুল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, 'আমরা সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করছি। ক্ষতিগ্রস্তদের মামলা করার জন্য আহ্বান করেছি।'
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হাফিজ আল আসাদ জানান, রাজধানীতে চোরাই তেল চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে। আগে গ্রেফতারও হয়েছে কয়েকটি চোরাই চক্র।
দোকান থেকেও ক্রেতাদের চুরি বাড়ছে
তেলের দামের প্রভাবে অভাবে স্বভাব নষ্ট করার মতন কাজ করছেন অনেকে। অনেকে তেলের দরদাম নিয়ে ঝগড়ায় জড়াচ্ছেন বিক্রেতার সঙ্গে আবার কেউ দর কষাকষির সুযোগে তেলের বোতল নিয়ে উধাও হচ্ছেন কেউ কেউ। কাওরান বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, দোকানে অনেক মানুষ আসে কেউ কিনেন কেউ কিনেন না। দাম জিজ্ঞাসা করেন সবাই। গতকাল এক ক্রেতা দাম জিজ্ঞাসা করলে আমি তাকে দাম বলে অন্য আরেকজনের সঙ্গে কথা বলছিলাম। সেই ব্যক্তি আমার অন্য দিকে খেয়ালের সুযোগে দুই লিটারের একটি তেলের বোতল নিয়ে চলে গেছে।
গত কয়েকদিন ধরে রাজধানী ও এর আশেপাশের বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে জানা যায়, বেশির ভাগ দোকানেই খোলা সয়াবিন ও পাম সুপার তেল নেই। গত বুধবার সচিবালয়ে আন্তমন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে বিপণনকারী কোম্পানিগুলো সয়াবিন তেলের দাম আরও ১২ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করে। তবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী বলেন, সামনে রমজান মাস। তাই এখন সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো যাবে না। এখন খোলা সয়াবিনের নির্ধারিত দর লিটারপ্রতি ১৪৩ টাকা, যা কোম্পানিগুলো ১৫৭ টাকা করতে চায়। পাম সুপার তেল ১৪৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে করতে চায় ১৫০ টাকা। বোতলজাত সয়াবিন তেলের পাঁচ লিটারের বোতলের নির্ধারিত দর এখন ৭৯৫ টাকা, যা ৮৭০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এমন প্রস্তাবের খবরে বাজারে হঠাৎ তেলের সংকট তৈরি হয়। যার প্রভাব দামের উপরেও পড়ে।