ভোলা সদর উপজেলার কাঠিরমাথা এলাকার মেঘনা নদীতে ১১ লাখ লিটারেরও বেশি তেল নিয়ে পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ‘সাগর নন্দিনী-২’ নামে একটি জাহাজ ডুবে গেছে। জাহাজের ক্রুদের নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে। নদীতে ছড়িয়ে যাওয়া থেকে তেল সংগ্রহ করতে দেখা গেছে স্থানীয়দের।
রোববার (২৫ ডিসেম্বর) ভোর ৪টার দিকে বলগেটের ধাক্কায় ডুবে যায় জ্বালানি তেলবাহী জাহাজটি। সোমবার কাজ শুরু করবে বিআইডব্লিউটিএ।
কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা কে এম শাফিউল কিঞ্জল জানান, 'সাগর নন্দিনী-২' নামক জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১১ লাখ লিটার জ্বালানি নিয়ে চাঁদপুরের পদ্মা ডিপোতে আসছিল। তবে রোববার নদীতে ঘন কুয়াশা থাকায় রাত ৪টায় তুলাতলী মাঝের চরে আরেকটি নৌযানের সাথে জাহাজটির সংঘর্ষ ঘটে। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান কোস্টগার্ডের সদস্যরা। তারা নদী থেকে তেল অপসারণের চেষ্টা করছে।
বর্তমানে অর্ধ-নিমজ্জিত জাহাজটির সার্বিক নিরাপত্তায় কোস্ট গার্ডের দুটি দল কাজ করছে বলে জানান বাহিনীর দক্ষিণ জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা কে এম শাফিউল কিঞ্জল বলেন, ছড়িয়ে পড়া তেল মেঘনা নদীর জীব-বৈচিত্র্যে কোনো প্রভাব ফেলতে না পারে, সেজন্য কোস্ট গার্ডের ল্যামোর সংযোজিত অত্যাধুনিক বোটের মাধ্যমে পানিতে নিঃসৃত তেল আলাদা করা হয়েছে।
স্থানীয়রা তেল নেওয়ার চেষ্টা করলে কোস্ট গার্ডের উপস্থিতি টের পেয়ে সবাই সরে যায় বলে জানান এই কোস্ট গার্ড কর্মকর্তা।
পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের বরিশালের ডিপো ব্যবস্থাপক মো. লোকমান বিকেলে বলেন, ‘বিআইডব্লিউটিএ ডুবন্ত জাহাজটির উদ্ধার কাজ পরিচালনা করবে। এ জন্য খুলনা ও চট্টগ্রাম থেকে উদ্ধারকারী নৌ-যান রওয়ানা দিয়েছে। ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা সময় লাগবে।’
মো. লোকমান আরও বলেন, ‘জাহাজে ১১ লাখ লিটার ডিজেল ও অকটেন ছিল। এর মধ্যে ডিজেল আট লাখ ৯৮ হাজার লিটার এবং দুই লাখ ৩৪ হাজার লিটার অকটেন ছিল। অজ্ঞাত বলগেটের ধাক্কায় ডুবে যাওয়া ট্যাংকার থেকে কিছু ডিজেল বের হয়েছিল। কোস্ট গার্ডের সহায়তায় ডিজেল বের হওয়া বন্ধ করা হয়েছে।’
শনিবার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জ্বালানি তেল লোড করে জাহাজটি চাঁদপুরের উদ্দেশে রওনা হয়। সেখানে পদ্মা অয়েল কোম্পানির ডিপোতে যাওয়ার কথা ছিল। ভোরে ঘন কুয়াশার মধ্যে তোলাতুলির কাঠিরমাথা এলাকায় বালুবাহী একটি বলগেটের সঙ্গে জাহাজটির সংঘর্ষ হয়। এতে জাহাজটি তলা ফেটে পানি ঢুকতে থাকে এবং একপর্যায়ে সেটি ডুবে যায়।
জাহাজে মোট ১৩ জন স্টাফ ছিলেন। পরে তাদের চিৎকার শুনে অন্য একটি বলগেট এসে তাদের উদ্ধার করে। জাহাজের স্টাফরা অভিযোগ করেন, সকাল থেকে স্থানীয় জেলেরা এসে জাহাজের তেল সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। কিছু তেল মেঘনায় ছড়িয়েও পড়ে।
এক ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, জাহাজটি ডুবে যাওয়ার পর সকালে স্থানীয় জেলেরা ছোট ছোট নৌকা নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন। তাদের প্রত্যেকের হাতে তেলের ছোট-বড় ড্রাম ও অ্যালুমিনিয়ামের পাত্র ছিল। জাহাজ থেকে তেল ছোট ছোট পাত্র দিয়ে তুলে বড় ড্রাম ও অ্যালুমিনিয়ামের পাত্রে রাখা হয়। পরে সেগুলো ট্রলারে তুলে নিয়ে যায় স্থানীয়রা। এ সময় সেখানে কোলাহল হয়।