মেয়ের সাথে প্রেম করায় কিশোরকে গলা কেটে মুখ এসিডে ঝলসে দেন বাবা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মে ১৪, ২০২৩, ০৩:০৫ এএম

মেয়ের সাথে প্রেম করায় কিশোরকে গলা কেটে মুখ এসিডে ঝলসে দেন বাবা

(সতর্কতা: খবরটিতে স্নায়ুক্ষয়ী হত্যার বর্ণনা আছে। আপনি যথেষ্ট মানসিক শক্তির অধিকারী না হলে খবরটি এড়িয়ে যান।)

কিশোর সিরাজ শেখ (১৬) প্রেমের সম্পর্ক গড়েছিল দেড় কিলোমিটার দূরের গ্রামের এক কিশোরীর সাথে। সেই সুবাদে সেই কিশোরী প্রেমিকার ফোনকল পেয়ে এক রাতে তার সাথে দেখা করতে যায় এসএসসি পরীক্ষার্থী সিরাজ শেখ। টের পেয়ে তাকে ধাওয়া করেন প্রেমিকার বাবা সবুর শেখ (৫৩)। এরপর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করেন সবুর। এখানেই ক্ষ্যান্ত হননি তিনি। লাশ গুম করতে কখনো পুকুরের কচুরিপানার নিচে রেখেছেন, কখনোবা গলা কেটে পৃথক করেছেন। শেষে তিনি লাশের মুখমণ্ডল এসিড দিয়ে ঝলসে দিয়েছেন।

ঘটনাটি ঘটেছে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার পল্লীতে। স্থানীয় গণমাধ্যমের সংবাদ থেকে এসব তথ্য জানা যায়।

নির্মম ওই হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে গতকাল শুক্রবার বিকেলে নড়াইলের লোহাগড়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারকের কাছে সিরাজ শেখকে হত্যার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন সবুর শেখ। তাঁর স্বীকারোক্তি মোতাবেক হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি ও রক্তমাখা কোদাল উদ্ধার করেছে পুলিশ। লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাসির উদ্দিন জবানবন্দির তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জবানবন্দিতে সবুর বলেছেন, পালাতে গিয়ে অন্ধকারের গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে সিরাজ। ওই অবস্থাই তাকে পেটান তিনি। এরপর মৃত ভেবে পুকুরে কচুরিপানার নিচে লুকিয়ে রাখেন তিনি। বাড়িতে ফেরার পর সন্দেহ হওয়ায় রাতেই পুকুর থেকে তুলে ছুরি দিয়ে গলা কাটেন। কিন্তু এবার ধরা পড়ার ভয় পেয়ে বসে তাঁকে। পরদিন লাশ তুলে দুই কিলোমিটার দূরে নিয়ে অ্যাসিড দিয়ে মুখমণ্ডল ঝলসে দেন তিনি।

নিহত সিরাজ লোহাগড়া উপজেলার ইতনা ইউনিয়নের চরদৌলতপুর গ্রামের ইকরাম শেখের ছেলে। সে চরদৌলতপুর সরস্বতী একাডেমি থেকে চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়।

জানা যায়, এর আগে সিরাজুল ইসলাম ওরফে সিরাজ শেখ নিখোঁজের চার দিন পর গত বুধবার (১০ মে) বিকেলে লংকারচর গ্রামের মিরু শেখের বাড়ির পাশের বাগান থেকে তাঁর বিকৃত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ইংরেজি দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষার আগের রাত অর্থাৎ ৬ মে রাতে নিখোঁজ হয় সিরাজ শেখ। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে একই গ্রামের সবুর শেখ (৫৩), তাঁর স্ত্রী শাহিনা বেগম (৪৭), ছেলে জাহিদুল শেখ (২০) এবং সিরাজ শেখের মেয়ে সেই প্রেমিকাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

তাদের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে ওসি জানান, ৬ মে রাত আনুমানিক ১০টার দিকে মোবাইল ফোনে প্রেমিকার কল পেয়ে বাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে দেখা করতে যায় প্রেমিক সিরাজ। ঘটনা জানতে পেরে সিরাজ শেখকে ধাওয়া করেন প্রেমিকার বাবা সবুর শেখ। দৌঁড়ে পালানোর সময় মেহগনিগাছের সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যায় সিরাজ। তখন কোদালের গোড়া দিয়ে সিরাজের মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করতে থাকেন সবুর শেখ। সিরাজ একসময় নিস্তেজ হয়ে পড়ে।

মারা গেছে ভেবে ওই রাতেই তাঁর নিথর দেহ সবুর শেখ ঘাড়ে করে বাড়ির পাশে পুকুরের কচুরিপানার নিচে ঢেকে রাখেন। পরে বাড়ি আসার পরও কিশোর বেঁচে আছে বলে সবুরের সন্দেহ হয়। কিছুক্ষণ পর ছুরি নিয়ে আবার সেখানে গিয়ে সিরাজের দেহ কচুরিপানার নিচ থেকে বের করে আনেন। এরপর মৃত্যু নিশ্চিত করতে গলা কাটেন সবুর।

পরের দিন ৭ মে (রবিবার) গভীর রাতে ঘরে থাকা ব্যাটারির অ্যাসিড নিয়ে সিরাজের মরদেহ পুকুর থেকে উঠিয়ে বিলের মধ্যে দিয়ে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে মিরু শেখের বাগানে নিয়ে যান। লাশটি যাতে কেউ শনাক্ত করতে না পারে সে জন্য মরদেহ বাগানে ফেলে ব্যাটারির অ্যাসিড ঢেলে সিরাজের মুখমণ্ডল ঝলসে দেন সবুর শেখ।

থানার ওসি মো. নাসির উদ্দিন আরও জানান, মামলার ১৫ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশের একাধিক টিম তদন্ত করে হত্যার রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয়। গ্রেপ্তারকৃত চার আসামিকে আদালতে হাজির করলে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে হত্যার কথা স্বীকার করেন সবুর শেখ। তাঁরা এখন কারাগারে।

Link copied!