রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু হবে, আশাবাদী ঢাকা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

আগস্ট ১৪, ২০২২, ১০:২৭ এএম

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু হবে, আশাবাদী ঢাকা

রবিবার (১৪ আগস্ট) চার দিনের সরকারি সফরে ঢাকা সফরে এসেছেন  জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচলেট। সফরকালে তিনি কক্সবাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন ও রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। এছাড়া, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। তার এই সফরের পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া জোরদার হবে বলে আশাবাদী কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক মহল।

ঢাকা সফরে এসেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচলেট। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতিসংঘের কোনো মানবাধিকার প্রধানের এটিই হচ্ছে প্রথম কোনো সরকারি সফর।  মিশেলের ঢাকা সফর সামনে রেখে অবশ্য এর আগে গত ২১ জুলাই ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে জানানো হয়, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‌্যাব এবং এর সাবেক ও বর্তমান ছয় কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ এ সফরকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেবে।

মিশেল ব্যাচলেটের এই সফরের পর ঝিমিয়ে পড়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবসন প্রক্রিয়ায় গতি আনতে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জোরালো চাপ করবে-এমন সম্ভাবনা দেখছেন কূটনীতিক মহল।

এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ মানবাধিকার লংঘনের গুরুতর অভিযোগগুলো নিয়ে আলোচনা এবং বাংলাদেশের সর্বজনীন মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় তার এই সফর বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। তার মতামত ও পর্যালোচনায় র‌্যাব ও সংস্থাটির কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠাতে মার্কিন প্রশাসনকে দ্বিতীয়বার ভাবার ক্ষেত্র তৈরি করে দিতে পারে।’

একই মত পোষণ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান বলেন, ঢাকা সফরকালে মিশেল ব্যাচলেটের কক্সবাজার সফর করার কথা রয়েছে। সেখানকার প্রকৃত অবস্থা, রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় তার মতামত আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের অধিবেশনে গুরুত্বের সাথে স্থান পেতে পারে।

জাতিসংঘ গঠিত দ্য ইনডিপেনডেন্ট ইনভেস্টিগেটিভ মেকানিজম ফর মিয়ানমার’র (আইআইএমএম) বার্ষিক প্রতিবেদনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর এই সাবেক বিশেষ দূত বলেন, রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া লাখো রোহিঙ্গা তাদের নিজ দেশে ফিরতে চায়। তবে নির্যাতন ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জন্য সেনাবাহিনীকে জবাবদিহিতার আওতায় না আনতে পারলে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় মানবাধিকার হাইকমিশনারের ঢাকা সফরের অভিজ্ঞতা ও সরেজমিনে তার পর্যালোচনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়ে মিয়ানমারের প্রতি জোরালো চাপ সৃাষ্টির সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, মিশেল ব্যাচলেট ঢাকা সফরকালে ধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অন্যান্য মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এছাড়া, তিনি জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, সুশীল সমাজ সংস্থার প্রতিনিধি এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারের সঙ্গেও দেখা করবেন। রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানেও বক্তব্য দিবেন।

মিশেল ব্যাচলেটের এই সফরকে গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে ঢাকা। শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের জনগনের মানবাধিকার রক্ষা ও প্রচারে সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টাকে তুলে ধরার গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ হয়ে উঠবে তাঁর এই চার দিনের সফর।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে একই মত পোষণ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ। দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে তিনি বলেন, জাতিসংঘে মানবাধিকার বিষয়ক বৈঠকগুলিতে মহাসচিবের প্রতিনিধিত্ব করেন মিশেল ব্যাচেলেট। আমাদের দেশ কীভাবে মানবাধিকার সমুন্নত রেখে উন্নয়নের দিকে যাত্রা করছে সেই ব্যবস্থা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করবেন সফররত জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান। এতে ভাল কিছু আশা ঢাকা করতেই পারে।”

তিনি বলেন,জাতিসংঘ গঠিত দ্য ইনডিপেনডেন্ট ইনভেস্টিগেটিভ মেকানিজম ফর মিয়ানমার’র (আইআইএমএম) বার্ষিক প্রতিবেদন নিয়ে সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের অধিবেশনে আলোচনা হবে। ওই আলোচনা সভায় ঢাকা সফর, কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন ও রোহিঙ্গা নেতাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য সম্পর্কে মিশেল ব্যাচলেট তার পর্যালোচনা তুলে ধরতে পারেন। ব্যাচলেটের মতামত ও পর্যালোচনা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ জোরালো হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

Link copied!