জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের ঐতিহাসিক মুহূর্তে শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ দক্ষিণ এশিয়া গড়ে তুলতে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে এক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (২৪ মার্চ) রাজধানীর প্যারেড গ্রাউন্ডে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এই আহবান জানান। অনুষ্ঠানে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় বিশ্বের এক তৃতীংশ মানুষের বসবাস। এই অঞ্চলে যেমন সমস্যা রয়েছে, তেমনি রয়েছে প্রচুর সম্ভাবনা। এই অঞ্চলের মানুষের রয়েছে অসম্ভব প্রাণশক্তি, উদ্ভাবন ক্ষমতা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগকে মোকাবিলা করে টিকে থাকার দক্ষতা।’
তিনি বলেন, পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে প্রাপ্ত সম্পদকে কাজে লাগিয়ে আমরা সহজেই দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন ঘটাতে পারি। আমরা যদি জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে সম্মিলিতভাবে কাজ করি তাহলে অবশ্যই দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে।
বাংলাদেশের সঙ্গে ভুটানের গভীর সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। কারো সাথে বৈরিতা নয়, সবার সাথে বন্ধুত্ব- এই কূটনৈতিক নীতি আমাদের দিয়ে গেছেন। আমরা সেই পথ ধরেই এগিয়ে যাচ্ছি। ভুটান আমাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী রাষ্ট্র। আমাদের রয়েছে প্রায় একই রকম সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। আমরা একে অন্যকে সবসময় সমর্থন ও সহযোগিতা করে যাচ্ছি। দুই দেশের জনগণের সম্পর্ক অনেক পুরনো।
মুক্তিযুদ্ধে ভুটানের অবদান স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, তখন ভুটানের তৃতীয় রাজা ও জনগণ স্বাধীনতাকামী বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়াতে সহযোগিতা করেন। ভারতের আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীরা ভুটানের মানুষ স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে পাশে পেয়েছিল।
ভুটানই প্রথম দেশ যারা বাংলাদেশে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃত দিয়েছিল-সেই স্মৃতিচারণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ওই দিনটির কথা আমি কখনো ভুলতে পারি না। কারণ আমরা পরিবারের সবাই তখন বন্দি ছিলাম। জয় তখন পাঁচ মাসের শিশু।
‘রেডিওতে প্রথম যখন শুনতে পেলাম ভুটান স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছে, সেটি আমাদের জন্য অনন্য একদিন ছিল। হাসি-কান্নার মধ্য দিয়ে সেই দিনটি আমাদের কেটেছিল। কাজেই ভুটানের কথা আমরা সব সময় স্মরণ করি।’
বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্যপর্যটন শিক্ষা ইত্যাদির সহযোগিতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভুটানের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী চিকিৎসা ক্ষেত্রসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে। আজকের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং ময়মনসিংহ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিকিৎসা বিদ্যায় গ্রাজুয়েশন করেছেন। কাজেই তিনি শুধু ভুটানের নয়, বাংলাদেশেরও। আমরা এজন্য অত্যান্ত গর্বিত।
ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়তে তার সরকার বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, এরই মধ্যে আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে মাথা উচু করে দাঁড়াবে ইনশাল্লাহ।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
মুজিব চিরন্তন শীর্ষক মূল প্রতিপাদ্যের দশ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার ৮ম দিনে বুধবার ভ্যাটিক্যান সিটি থেকে পোপ ফ্রান্সিস এবং ভারতের কংগ্রসের সভাপতি সোনিয়া গান্ধী ভিডিও বার্তা দেওয়ায় তাদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।