শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগ দাবিসহ তাকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
সোমবার বেলা ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্ত্বরে শিক্ষার্থীরা এই ঘোষণা দেন। পাশপাশি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ও হল ছাড়ার নোটিস প্রত্যাখ্যান করে ক্যাম্পাসে থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সকাল ৮টা থেকেই ভিসিবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেয়। ‘দাবি মোদের একটাই, ভিসির পদত্যাগ চাই’, ‘যেই ভিসি বুলেট মারে, সেই ভিসি চাই না’, ‘যে ভিসি বোমা মারে, সেই ভিসি চাই না’, ‘এক দফা এক দাবি, ভিসি তুই এখন যাবি’, ‘ক্যাম্পাসে রক্ত কেন? প্রশাসন জবাব চাই’, ‘আমার ভাই এর রক্ত, বৃথা যেতে দেবো না’, ‘দাবী মোদের একটাই ভিসির পদত্যাগ চাই’, ‘ক্যাম্পাসে রক্ত কেন? প্রশাসন জবাব চাই’।এ ধরণের বিভিন্ন স্লোগানে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার ঘটনায় উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের কার্যালয়, প্রশাসনিক ভবন ও প্রত্যেকটি একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
তারা জানায়, যেই ভিসি শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে সেই ভিসি আমরা চাই না। এই ভিসিকে আমরা ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছি। মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন জানাচ্ছি যাতে নতুন শিক্ষার্থীবান্ধব ভিসি তিনি নিয়োগ দেন।
এর আগে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক ডা. রাশেদ তালুকদারকে প্রধান করে আট সদস্যের ওই কমিটি গঠন করা হয়। সোমবার সকালে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বিষয়টি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে নিশ্চিত করেছেন।
শাবিপ্রবি উপাচার্য বলেন, “এ ঘটনায় কোনো মামলা হবে না। এখন হল বন্ধ থাকবে। শিক্ষার্থীরা ঘরে ফেরারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে “
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওই নির্দেশ অমান্য করেই ভিসির পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধের ঘোষণা প্রত্যাহার এবং উপচার্যের পদত্যাগ দাবিতে তাদের আন্দোলন চলবে বলে তারা জানায়। এসব শিক্ষার্থীদের অনেকের অভিযোগ, উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদের নির্দেশেই রবিবার রাতে পুলিশ তাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা ও গুলি চালিয়েছে।
প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট জাফরিন আহমেদ লিজার দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ হওয়াসহ নানা অব্যবস্থাপনার কারণে গত ১৩ জানুয়ারি দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় আন্দোলনে নামেন হলের ছাত্রীরা। তারা হলের বাইরে অবস্থান নিয়ে হল প্রভোস্টের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবি জানান।
একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোরিয়াল কমিটির সদস্যেরা আন্দোলনকারী ছাত্রীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন।
পরে রাত আড়াইটার দিকে আন্দোলন প্রত্যাহার করেন বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের ছাত্রীরা।পরবর্তীতে ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে ফের আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরাও ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করে। এক পর্যায়ে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করলে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। এ সময় বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে উপাচার্যকে মুক্ত করে পুলিশ।
রবিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আইসিটি ভবনের সামনে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এ সময় শিক্ষার্থীরাও ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করে। এক পর্যায়ে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করলে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া।