মধ্যরাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় আলোচিত কুড়িগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীনকে দেয়া ‘লঘুদণ্ড’ মওকুফ করেছেন রাষ্ট্রপতি। গত ২৩ নভেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কে এম আলী আজম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
এর আগে, অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তার দুই বছরের বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করা হয়েছিল। সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে অভিযুক্ত সুলতানা পরভীনকে এই শাস্তি দেয়া হয়েছিল। পরে, গত ৬ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সমীপে আপিল আবেদন পেশ করেন সুলতানা পারভীন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মোছা: সুলতানা পারভীন (পরিচিতি নম্বর-৬৮৮৪), প্রাক্তন জেলা প্রশাসক, কুড়িগ্রাম বর্তমানে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (উপসচিব), জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক জেলা প্রশাসক, কুড়িগ্রাম হিসেবে কর্মকালে বাংলা ট্রিবিউন অনলাইনভিত্তিক ওয়েব পোর্টালের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে মধ্যরাতে ধরে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা প্রদানের পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩(খ) অনুযায়ী ‘অসদাচরণে’র অভিযোগে রুজুকৃত ০৫.১৮০.২৭.০২.০০.০০২.২০২০ নম্বর বিভাগীয় মামলায় গত বছরের ১৮ মার্চ ৯৭ নম্বর স্মারকের মাধ্যমে তাকে কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয় এবং যেহেতু অভিযুক্ত কর্মকর্তা মোছা: সুলতানা পারভীন ২৫ জুন লিখিত জবাব দাখিলপূর্বক ব্যক্তিগত শুনানির প্রার্থনা করলে ওই বছরের ৯ আগস্ট ব্যক্তিগত শুনানি গ্রহণ করা হয়।
তার লিখিত জবাব ও ব্যক্তিগত শুনানিতে প্রদত্ত মৌখিক বক্তব্য সন্তোষজনক বিবেচিত না হওয়ায় ন্যায়বিচারের স্বার্থে বিভাগীয় মামলাটি তদন্ত করার জন্য তদন্ত বোর্ড গঠন করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়, তদন্ত বোর্ডের আহ্বায়ক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো: আলী কদর গত ২ মে দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদনে মোছা: সুলতানা পারভীনের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩(খ) অনুযায়ী আনীত ‘অসদাচরণে’র অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে মর্মে উল্লেখ করেন। তদন্ত বোর্ডের তদন্ত প্রতিবেদন ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রাদি পর্যালোচনান্তে অভিযুক্ত কর্মকর্তা মোছা: সুলতানা পারভীনকে গুরুদণ্ড প্রদানের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৭(৯) মোতাবেক গত ৮ জুন দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়। তিনি ২২ জুন লিখিতভাবে দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর জবাব দাখিল করলে দাখিলকৃত জবাব ও তদন্ত প্রতিবেদনসহ অভিযোগের গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিক প্রশাসনিক বিষয়াদি বিবেচনা করে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৪(২)(খ) বিধি অনুসারে তাকে দুই বছরের জন্য বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখা নামীয় লঘুদণ্ড প্রদান করা হয়।
মোছা: সুলতানা পারভীন তার ওপর আরোপিত উল্লিখিত লঘুদণ্ডাদেশ মওকুফের জন্য গত ৬ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি সমীপে আপিল আবেদন পেশ করলে রাষ্ট্রপতি সদয় হয়ে তার আপিল আবেদন বিবেচনা করে পূর্বে প্রদত্ত দুই বছরের জন্য বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখা নামীয় আদেশ বাতিল করে তাকে অভিযোগের দায় হতে অব্যাহতি প্রদান করেছেন।
ফলে তার বিরুদ্ধে রুজুকৃত বিভাগীয় মামলায় ‘দুই বছরের জন্য বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখা নামীয় লঘুদণ্ড প্রদান করে জারিকৃত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গত ১০ আগস্টের ০৫.১৮০.০২৭.০২.০০.০০২.২০২০-১১২ নম্বর প্রজ্ঞাপনটি বাতিলপূর্বক তাকে অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো। জনস্বার্থে জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।