মিয়ানমানের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জোরালো চাপ না থাকায় দেশটি থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া লাখো রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। সীমান্তে হত্যা বাংলাদেশের জন্য দুঃখের, ভারতের জন্য লজ্জার বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
লন্ডনে বিবিসি বাংলার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে পররারাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয়।
বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাতকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমার ছাড়াও আফগানিস্তানের তালেবান প্রশাসন, ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক, কোভিডের কারণে বাংলাদেশ থেকে ব্রিটেনে ভ্রমণে অসুবিধাসহ নানা প্রশ্নের জবাব দেন।
সীমান্তে প্রায়ই ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের গুলিতে বাংলাদেশি হত্যার ঘটনা ঘটছে। বিবিসি বাংলার সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত প্রশ্নে হতাশা ব্যক্ত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) গুলিতে বাংলাদেশিদের মৃত্যুর ঘটনা বাংলাদেশের জন্য দুঃখের, ভারতের জন্য লজ্জার।
আফগানিস্তানে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের বিষয়টিও সাক্ষাৎকারে উঠে আসে।এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সবসময় বিশ্বাস করে জনগণের সরকার হওয়া উচিত। রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যে সরকারই আসে আমরা তাদের সমর্থন দেই। কিন্তু আফগানিস্তানে কী হচ্ছে আমরা ঠিক জানি না। আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি।
তালেবান সরকারকে স্বীকৃতির ব্যাপারে অন্য কোনো দেশের পরামর্শে বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত জানাবে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কারও লেজুড় নয় এবং নিজেই তার পররাষ্ট্রনীতি স্বাধীনভাবে নির্ধারণ করে। তালেবানের নীতি ও আচরণের ওপর নির্ভর করবে বাংলাদেশ তাদের স্বীকৃতি দেবে কিনা।
মিয়ানমানের সেনাবাহিনীর নির্যাতনে দেশটি থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া লাখো রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে ব্যর্থতা স্বীকার করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা সত্যি যে গত চার বছরে একজন রোহিঙ্গাও ফিরে যায়নি। মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক কোনো চাপ না থাকায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্ভব হচ্ছে না বলেও তিনি দাবি করেন।
কোভিড ভ্রমণ সংক্রান্ত যুক্তরাজ্যের লাল তালিকায় বাংলাদেশের নাম থাকা প্রসঙ্গে ড. মোমেন বলেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে ব্রিটেন সরকারের কাছে উদ্বেগ জানিয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বেশ কয়েকজন ব্রিটিশ এমপির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমি তাদের বলেছি, ব্রিটেনের লজ্জা হওয়া উচিত তাদের প্রায় চার-পাঁচ হাজার নাগরিক বাংলাদেশে গিয়ে আসতে পারছে না। তারা আটকা পড়ে আছে।’ ব্রিটিশ নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়া উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেন।