‘আওয়াজ শুনে প্রথমে ভাবছিলাম বোমা বোধ হয়। কয়েক মিনিট ধোঁয়ায় পুরা এলাকা ঢেকে গেল। পরে দেখি, আহত লোকজনরে সরায়ে নিতাছে মানুষজন।’ এভাবেই বিস্ফোরণের ঘটনার বর্ননা দেন প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন।
পুরান ঢাকার গুলিস্তান এলাকার সিদ্দিক বাজারে ক্যাফে কুইন ভবনে যখন বিস্ফোরণ হয়, স্থানীয় দোকানি মোহাম্মদ বিজয়সহ বেশ কয়েকজন তখন আসরের নামাজে দাঁড়িয়েছেন। যা ঘটে গেছে, এখনও যেন তাদের বিশ্বাস হচ্ছে না।
মঙ্গলবার বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে নর্থ সাউথ রোডের ১৮০/১ হোল্ডিংয়ে ওই সাত তলা ভবনে বিস্ফোরণ ঘটলে ধোঁয়ায় ঢেকে যায় চারপাশ। বিকট আওয়াজে আতংক ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা এসে উদ্ধারকাজ শুরু করে। একে একে বাড়তে থাকে ইউনিটের সংখ্যা। স্থানীয়রাও হতাহতদের উদ্ধারে এগিয়ে আসেন।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে এ ঘটনায়, আহত হয়েছেন শতাধিক। ভবনের বেজমেন্টেও অনেকে আটকা পড়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিজয়সহ অন্যরা সাংবাদিকদের বলেন, সাত তলা ভবনটির তৃতীয় তলায় ক্যাফে কুইন খাবার হোটেল। ওই নামেই স্থানীয়রা ভবনটি চেনেন। ভবনের নিচের দুটো তলায় স্যানিটারি সামগ্রী আর গৃহস্থালী সামগ্রীর বেশ কয়েকটি দোকান ও গুদাম। বেজমেন্টেও গুদাম রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।
যেখানে বিস্ফোরণ ঘটেছে, তার কাছেই বিআরটিসির বাস কাউন্টার। ব্যস্ত ওই সড়কে যানবাহনের পাশাপাশি প্রচুর পথচারী ছিল সে সময়। বিস্ফোরণে আহতদের মধ্যে ওই ভবনের বিভিন্ন দোকানের কর্মচারীদের পাশাপাশি বাসযাত্রী ও পথচারীরাও রয়েছেন।
বিস্ফোরণে ভবনটির নিচের দুটো ফ্লোরের দেয়াল ভেঙে যাওয়ার পাশাপাশি ভেতরের জিনিসপত্র ছিটকে বাইরে বেরিয়ে এসেছে। ভবনের উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে থাকা সাভার পরিবহনের একটি বাসও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আহত হয়েছেন অনেক যাত্রী।
বিস্ফোরণ থেকে বেঁচে গেছেন ভবনের নিচতলার বাদশা ট্রেডিংয়ের শ্রমিক আনোয়ার হোসেন। তিনি জানান, দোকানের ম্যানেজারের জন্য চা আনতে বাইরে গিয়েছিলেন তিনি। হঠাৎ বিস্ফোরণে বিকট আওয়াজে তিনি চেতনা হারান।
বিস্ফোরণে আগে দোকানের ভেতরে অন্তত তিনজন ছিলেন এবং দোকানের বাইরে ছিলেন স্যানিটারি দোকানের ৭-৮ জন শ্রমিক। চেতনা ফেরার পর দোকানের বাইরে থাকা শ্রমিকদের হাসপাতালে নিতে দেখলেও ভেতরে থাকা মহাজন ও বাকিদের বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান বাদশা।
ওই ভবনের সামনে রাস্তার ওপর ভ্যানে করে বেল বিক্রি করছিলেন দিলীপ দাস। বিস্ফোরণে তিনিও আহত হয়েছেন। দিলীপ বলেন, বিস্ফোরণের সাথে সাথে ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে যায় আশপাশের এলাকা। পথচারীদের ওপর বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে পড়তে দেখেছেন তিনি। বিস্ফোরণে তার এক ক্রেতাও আহত হয়েছেন।
অনেকে জানান, ভবনের নিচতলা, দোতলা এবং তৃতীয় তলার ছাদের অংশ ধসে আন্ডারগ্রাউন্ডে পড়েছে। আশপাশের রিক্সা ও ভ্যান বিস্ফোরণের ভেঙে পড়া দেয়াল ও কংক্রিটের নিচে চাপা পড়েছে।
পাশের সাকি প্লাজা নামের পাঁচ তলা ভবনের ওপরে চারটি ফ্লোরে ব্র্যাক ব্যাংকের গুলিস্তান শাখা এবং ব্র্যাক ব্যাংকের এসএমই সার্ভিস সেন্টার রয়েছে। বিস্ফোরণের ধাক্কায় কাচ ভেঙে ব্যাংকের অফিস কক্ষগুলোর পর্দা ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে।
এতবড় বিস্ফোরণের কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, বিশেষজ্ঞরা তদন্ত করে দেখছেন বিস্ফোরণের ঘটনা নাশকতা না দুর্ঘটনা। আপনারা জানেন যে গ্যাস জমে বিস্ফোরণ হতে পারে। আমাদের বিশেষজ্ঞরা তদন্ত করে বলতে পারবেন আসলে কী ঘটেছে।