আলোচিত জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া আর নেই। সোমবার (২৪ জুন) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জল্লাদ শাহজাহানের বোন ফিরোজা বেগম বলেন, “বেশ কিছুদিন ধরে ঢাকার উপকণ্ঠে হেমায়েতপুরে থাকতেন আমার ভাই। গতকাল রোববার রাতে হঠাৎ তার বুকে ব্যথা ওঠে। পরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।”
তিনি আরও বলেন, “ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে আমার ভাইয়ের মৃত্যু হয়। হাসপাতালে আমি তার লাশ নিয়েছি। আইনি প্রক্রিয়া শেষে শাহজাহানের লাশ নরসিংদীর পলাশের ইছাখালী গ্রামে দাফন করা হবে।”
‘জল্লাদ’ শাহজাহানের পুরো নাম শাহজাহান ভূঁইয়া। নরসিংদীর পলাশের গজারিয়া ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামের মৃত হাছেন আলীর ছেলে তিনি। তার মায়ের নাম মেহের। তিন বোনের মধ্যে বর্তমানে এক বোন বেঁচে আছেন।
১৯৫০ সালের ২৬ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন শাহজাহান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। যৌবনসহ জীবনের দীর্ঘ সময় কারাবন্দী ছিলেন তিনি। কারামুক্তির পর এক তরুণীকে বিয়ে করেন। কিন্তু সেই সংসার টেকেনি। এই নিয়ে আইনি জটিলতার সম্মুখীন হন তিনি।
দীর্ঘ ৪৪ বছর কারাভোগের পর ২০২৩ সালের ১৮ জুন মুক্তি পান শাহজাহান। বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো ব্যক্তির সবচেয়ে বেশি দিন কারাভোগের রেকর্ড এটি। ১৯৫০ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে জন্মগ্রহণ করলেও জীবনের বেশির ভাগ সময় পরাধীন জীবনযাপন করেন তিনি।
১৯৭৯ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ৩৬টি মামলায় তার ১৪৩ বছরের সাজা হয়। পরে ৮৭ বছর মাফ করে তাকে ৫৬ বছরের জন্য জেল দেয়া হয়। ফাঁসি কার্যকর ও সশ্রম কারাদণ্ডের সুবিধার কারণে সেই সাজা ৪৩ বছরে নেমে আসে। দুটি মামলায় ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে ছয় মাস করে অতিরিক্ত ১ বছর জেল খেটে ৪৪ বছর পর মুক্ত আকাশে নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ পান জল্লাদ শাহজাহান।
ছাত্রজীবনে স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন শাহজাহান। অপরাধ জগতে ঢুকতেও বেশি সময় নেননি। ডাকাতি ও খুনের মতো ভয়ংকর সব অপরাধ করেন তিনি। ১৯৯১ সালের ১৭ ডিসেম্বর প্রথম গ্রেপ্তার হয়ে মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে আসেন। কারাগারে তার কয়েদি নম্বর ছিল ২৫৮৯/এ।
সাজা কমাতে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে জল্লাদ হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন শাহজাহান। এরপর সহযোগী হিসেবে গফরগাঁওয়ের নূরুল ইসলামকে ফাঁসি দিয়ে জল্লাদ জীবন শুরু করেন। এক সময় মানিকগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে ঢাকা সেন্ট্রাল কারাগারে আসেন। সেখানে প্রধান জল্লাদের দায়িত্ব পান তিনি।
কারাগারের নথি অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুর ৬ ঘাতক (বজলুল হুদা, মুহিউদ্দিন, সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মহিউদ্দিন আহমেদ, আবদুল মাজেদ), ৪ যুদ্ধাপরাধী (জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের বা সাকা চৌধুরী, মীর কাসেম আলী), কুখ্যাত সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদার, জঙ্গি নেতা বাংলা ভাই ও আতাউর রহমান সানী, শারমীন রীমা হত্যার আসামি খুকু মনির ও ডেইজি হত্যা মামলার আসামি হাসানসহ আলোচিত ৪০ জনের ফাঁসি কার্যকর করেন শাহজাহান।