ডিজিটাল বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত করতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার প্রস্তুত করছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তবে এবারের ইশতেহার শুধু আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ নয় বরং সাধারণ জনগণ সরাসরি অংশ নিচ্ছে। ইশতেহার প্রণয়নে এবার জনসাধারণের মতামত চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা জনসাধারণের চিঠি ও মতামত বাছাই করছে দলটির ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির নেতৃবৃন্দ।
“স্মার্ট বাংলাদেশ’ স্লোগান নিয়ে আসছে ইশতেহার”
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহার হচ্ছে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। ডিজিটাল বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের রূপরেখা থাকছে এবারের ইশতেহারে, এমনটি জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার তৈরিতে সম্পৃক্ত নেতারা। তারা আরও বলেন, বড় ধরনের কিছু মৌলিক পরিবর্তনও আসবে এবারের ইশতেহারে। তবে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার সময় হয়নি বলে মনে করছেন নেতারা।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন উপ-কমিটির প্রথম সভার মধ্যে দিয়ে ‘স্মার্ট বাংলাদেশের’ নতুন ইশতেহারে কী কী থাকছে সেই বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় অতীতের ইশতেহারগুলো সার্বিকভাবে পর্যালোচনা করে বিভিন্ন বিষয়ে খসড়া তৈরি করে পরবর্তী বৈঠকগুলোতে কাজের অগ্রগতি জানানো হবে এবং পুরো ইশতেহারের খসড়া তৈরি হলে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা তা চূড়ান্ত করবেন।
“জনগণের মতামত যাচাই করতে গণ বিজ্ঞপ্তি”
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে দেশের বিভিন্ন খাত সম্পর্কে কী কী বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে এবং আবারও সরকার গঠন করলে আওয়ামী লীগ কী কী নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে এ বিষয়ে জনমত চেয়ে গণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে দলটি।
গণ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে ইশতেহার কমিটির সদস্য সায়েম খান বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এ দেশের গণমানুষের দল। জনগণের মত ও পথকে ধারণ করেই তারা রাজনীতি করে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ চায় বিচ্ছিন্ন কোনো প্রতিশ্রুতি নয়, যে আকাঙ্ক্ষা জনগণের মন থেকে উত্থিত হয় যেই আকাঙ্ক্ষার প্রতি জনগণের সংবেদনশীলতা আছে, সেই আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করেই হবে নির্বাচনী ইশতেহার।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু আওয়ামী লীগের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুই জনগণ সেহেতু আওয়ামী লীগ সব সময় জনমতের কথাই প্রত্যাশা করে এবং জনগণ সবসময় আওয়ামী লীগের এই বিষয়গুলোতে উৎসাহিত হয়। সেই জায়গা থেকে আওয়ামী লীগের ইশতেহার প্রণয়নের জনমতকে গুরুত্ব দেয়া এবং জনগণকে সরাসরি সম্পৃক্ত করার জন্য গণ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। আমরা দেখতেছি সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে থেকে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ তাদের মতামত আমাদের কাছে দিচ্ছে এবং এতে ব্যাপক সাড়া মিলেছে।
দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা চিঠিগুলো যাচাই করছে ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সদস্যবৃন্দ।
“কী থাকছে আ. লীগের এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে?”
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে যুবসমাজের কর্মসংস্থানের বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলটির নির্বাচনী ইশতেহার কমিটির আহ্বায়ক ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতির তালিকায় থাকছে যুবসমাজের কর্মসংস্থান।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য বলেন, ‘আগামীতে এসডিজি গোলকে (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) সামনে রেখে দেশকে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর করতে চাই। সেই লক্ষ্যে নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন করব। দারিদ্র্য কতটুকু নেমে আসবে? মুদ্রাস্ফীতি কততে নিয়ে আসব— এগুলো বিবেচনায় নিয়ে সার্বিক চাঙা অর্থনীতি বিষয়ে আমাদের আগামী ইশতেহার প্রণয়ন করা হবে।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, নির্বাচনী ইশতেহারের কয়েকটি লক্ষ্য থাকছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর মধ্যে একটা হলো— ২০৪১ সালের লক্ষ্য। আরেকটা ১০০ বছরের পরিকল্পনা। আরও আছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতি ইত্যাদি।
ইশতেহার কমিটির সদস্য ও আ. লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে জানায়, সবচেয়ে বড় বিষয় হলো এই যে বৈশ্বিক সংকট চলছে এই সংকটের মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক যে ধারাবাহিকতা এটিকে কিভাবে ধরে রাখা যায়, এই সংকটের নেতিবাচক প্রভাব যেন আমাদের ওপর এসে না পড়ে, সেটা কিভাবে রোধ করা যায়। সেই লক্ষ্যে অর্থনৈতিক নীতিমালাগুলো কিভাবে গঠন করা হবে। এটি থাকবে এবারের ইশতেহারে।
যে বিষয়টি আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সেটি হলো কর্মসংস্থান। অধিকাংশ ভোটার তরুণ, এই তরুণদের ঘিরে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করা।
সায়েম খান আরও বলেন, স্মার্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থা যখন তৈরি হবে, তখন রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যে এক ধরনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা দেখা দিবে। প্রত্যেকটা মানুষ জবাবদিহি করতে বাধ্য হবে সে ক্ষেত্রে দুর্নীতি কমে আসবে।
সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের যে আদর্শিক অবস্থান, সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত হওয়া বাংলাদেশকে জিরো টলারেন্স দিয়ে সেটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে এটি সমূলে কীভাবে উৎখাত করা যায় এ বিষয়গুলো এবারের ইশতেহারে ঠাঁই পাবে।
“বড় পরিবর্তন আসছে এবারের ইশতেহারে”
দ্বাদশ নির্বাচনী ইশতেহারে একটি বড় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ স্লোগান মাথায় রেখে এই ইশতেহারে কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক মুক্তির দিকে জোর দিতে যাচ্ছে দলটি। এই ধরনের বড় পরিবর্তন দেখা গিয়েছিল ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে। ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগের স্লোগান ছিল ‘দিনবদলের সনদ’। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ইশতেহার দেওয়া হয়েছিল, যা ছিল অতীতের ইশতেহারগুলোর থেকে একেবারেই ভিন্ন। তাতে খাতভিত্তিক ডিজিটালাইজেশনের রূপরেখা ছিল।
২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের ইশতেহারের স্লোগান ছিল ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’। এদিকে ২০১৮ নির্বাচনী ইশতেহারে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’। এই দুটিতে মূলত ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে উন্নয়ন ও অগ্রগতি তুলে ধরার পাশাপাশি খাতভিত্তিক আরও কী কী করা হবে, সেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ছিল ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’। সেসময় ২০৪১ সালে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ এবং ২১০০ সালে নিরাপদ ব-দ্বীপ পরিকল্পনার রূপরেখা প্রদান করা হয়েছিল। উন্নত বাংলাদেশের অভিযাত্রায় প্রথম ধাপ হিসেবে ইতিমধ্যে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি।
২০২২ সালের ২৪ ডিসেম্বর টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্লোগানকে সামনে আনা হয়। এরপর থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশকে সর্বক্ষেত্রে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের কথা বলতে থাকেন সংসদ সদস্য-মন্ত্রীরা।
সময়ের চাহিদা অনুযায়ী, এবার ডিজিটাল বাংলাদেশের চূড়ান্ত পর্যায় হিসেবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করা হবে। এতে সবক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশনের অগ্রগতি ও সুফল তুলে ধরার সঙ্গে স্মার্ট সেবা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে। দলের জাতীয় সম্মেলন এবং ঘোষণাপত্রে সেই ধারণা দেওয়া হয়েছে।
“কারা থাকছেন নির্বাচনী ইশতেহার কমিটিতে”
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার কমিটিতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাককে আহ্বায়ক এবং তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।
ইশতেহার কমিটির সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন- ড. মসিউর রহমান, ড. অনুপম সেন, ড. সাত্তার মন্ডল, ড. বজলুল হক খন্দকার, অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ড. শামসুল আলম, ডা. দীপু মনি এমপি, ড. হাছান মাহমুদ এমপি, অ্যাডভোকেট শম রেজাউল করিম এমপি, শেখর দত্ত, ড. মাকসুদ কামাল, ড. মাহফুজুর রহমান, অধ্যাপক খায়রুল হোসেন, অধ্যাপক সাদেকা হালিম, সাজ্জাদুল হাসান এমপি, অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, ওয়াসিকা আয়েশা খান এমপি, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, জুনায়েদ আহমেদ পলক এমপি, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি, অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাত এমপি, অ্যাডভোকেট সায়েম খান, সাদিকুর রহমান চৌধুরী, সাব্বির আহমেদ এফসিএ।