ঢাকার ওয়াইডব্লিউসিএ কনফারেন্স হল রুমে সোমবার বাদাবন সংঘ আয়োজিত একটি গোল টেবিল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এখানে পরিচালিত নীতি গবেষণার সুপারিশ এর আলোকে একটি গোল টেবিল আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। সভায় আলোচনার মূল বিষয় ছিল ‘নারীর ভূমি মালিকানা স্বত্বপ্রাপ্তিতে সীমাবদ্ধতা ও করণীয়’। উক্ত সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী এবং নিজেরা করি’র সমন্বয়ক, খুশি কবীর। এছাড়াও আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন এসোসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) এর নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্র এর সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. ঈশানী চক্রবর্তী, এসোসিয়েশন ফর ল্যাান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) এর উপ নির্বাহী পরিচালক রওশন জাহান মনি, এছাড়া নারী অধিকারের সাথে সংশ্লিষ্ট বিশিষ্ট ব্যক্তিগত, উন্নয়ন কর্মী, মানবাধিকার কর্মী, নারীর ভূমি অধিকার জোটের নেতৃবৃন্দ এবং প্রান্তিক নারীরা যারা ভূমির মালিকানার জন্য লড়াই করছেন।
বাদাবন সংঘ ২০১৬ সাল থেকে স্থানীয় পর্যায়ে নারীর সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে, নারীর ভূমি মালিকানার দাবী তন্মধ্যে একটি। নীতি গবেষণাটি উপস্থাপন করেন ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক পক মুমিতা তানজীলা। গবেষণার আলোকে বক্তারা বলেন- বাংলাদেশে নারীর ভূমিতে মালিকানা অনেকটাই পিছিয়ে আছে, ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে উত্তরাধিকার আইন থাকলেও তার বাস্তবায়ন নেই। এছাড়া আইন হলো বৈষম্যমূলক, যা জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সমান নয়, ধর্মীয় প্রথা অনুযায়ী ভিন্নতা রয়েছে। প্রান্তিক নারীদের নেত্রী পারভীন হালিম বলেন- জমির দলিল সহজবোধ্য নয়, ফলে নারীরা অধিকার প্রাপ্তির লড়াই বেশিদূর এগোয় না। সভায় ঈশানী চক্রবর্তী বলেন- ভূমিতে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করা মানে হলো বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। সভার প্রধান অতিথি খুশি কবীর বলেন- বর্তমানে সরকার বৈষম্যবিরোধী রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য বিভিন্ন কমিশন গঠন করেছে। তাদের সাথে একত্রিত হয়ে সংবিধানে মানবাধিকার বিষয়টিকে নিয়ে কাজ করা, যেন পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, নারী, বিভিন্ন বৈচিত্র্যের তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ভূমিতে নারীর অধিকার ধর্মীয় আইন দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে, ফলে দেখা যায় নারী ও সংখ্যা লঘু মানুষেরা বৈষম্যের শিকার হয়। এক্ষেত্রে অভিন্ন পারিবারিক আইন করা সেখানে সকল মানুষ সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। তিনি আরো বলেন, সংগঠনই শক্তি, সংগঠনই মুক্তি। তাই তৃণমূল থেকে সকল পর্যায়ের নারীদের সংঘটিত করে ভূমিতে নারীর সম অধিকার আদায়ের দাবী তুলতে হবে এবং সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায় একদিন বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে। তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ রাখেন তা হলো ভূমিতে নারীর অধিকারের দাবি লিখিত আকারে প্রেস-কনফারেন্স এর মাধ্যমে সরকারি কমিশনে অবগত করা। সকলের স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণে আলোচনা সভাটি সমাপ্ত করা হয়।