কারাবন্দী নেতাদের স্বজনদের নিয়ে কর্মসূচির চিন্তা করছে বিএনপি

অরিন সুলতানা

নভেম্বর ২৭, ২০২৩, ১১:২৩ এএম

কারাবন্দী নেতাদের স্বজনদের নিয়ে কর্মসূচির চিন্তা করছে বিএনপি

ফাইল ছবি

গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে শুরু করে গতকাল শনিবার পর্যন্ত সারাদেশে প্রায় ২০ হাজার নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। এবার কারাবন্দী নেতাদের স্বজনদের নিয়ে কর্মসূচির চিন্তা করছে বিএনপি।  তাছাড়া নির্বাচনের আগে সমমনা ও এর বাইরে থাকা সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে একসঙ্গে মাঠে নামারও সিদ্ধান্ত রয়েছে দলটির।

এদিকে জাতীয় নির্বাচন আসতে আর মাত্র কয়েক ৪১ দিন বাকি । সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের চলমান কৌশল পরিবর্তন করতে চাইছে বিএনপি। খুব শিগগির হরতাল-অবরোধকে আরও কঠোর করার পরিকল্পনা করছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। সম্ভবত আগামী সপ্তাহ থেকেই তা হতে পারে।

বিএনপির দলীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, এ লক্ষ্যে প্রতিটি জেলা-উপজেলায় গঠন করা হবে আন্দোলন কমিটি। সেখানে একজন গ্রেপ্তার হলে ক্রমান্বয়ে পরের জন দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। প্রয়োজন হলে কারাবন্দী নেতাদের স্বজনদের নিয়ে কর্মসূচির চিন্তা রয়েছে বিএনপির। তাছাড়া নির্বাচনের আগে সমমনা ও এর বাইরে থাকা সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে একসঙ্গে মাঠে নামারও সিদ্ধান্ত রয়েছে দলটির।

সূত্র থেকে আরও জানা গেছে, আপাতত হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি নিয়েই থাকবে বিএনপি। তবে ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে সারা দেশে কঠোর বিক্ষোভ মিছিলের কথাও ভাবছে দলটি। এ ছাড়া কারাবন্দী নেতা-কর্মীদের পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের নিয়ে উচ্চ আদালতে একটি কর্মসূচির চিন্তা করা হচ্ছে। খুব শিগগির ঢাকায় এই কর্মসূচি হতে পারে। তবে কর্মসূচিটি কী হতে পারে তা জানা যায়নি। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা তাও নিয়ে চলছে দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে নানা চিন্তাভাবনা ও বিশ্লেষণ।

বিভিন্ন থানা পর্যায়ের নেতাদের সূত্র জানিয়েছে, আন্দোলনে নেতাকর্মীকে নিরাপদে থেকে-গ্রেপ্তার এড়িয়ে মাঠের কর্মসূচি বাস্তবায়নের নির্দেশনা দিয়েছে দলটির প্রধান। তবে পরিস্থিতি বুঝে নিজেদের অস্তিত্বের প্রয়োজনে দেশের গণতন্ত্র আর ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে সর্বশক্তি দিয়ে মাঠে  থাকতে বলা হয়েছে।

প্রয়োজনে সমমনা ও এর বাইরে থাকা সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে নিয়ে মাঠে নামারও পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। নির্বাচন পর্যন্ত আন্দোলনকে টেনে নেওয়ার সব রকমের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা।

অন্যদিকে নির্বাচনকালে আন্দোলন পরিচালনার জন্য প্রতিটি থানা-উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ে আন্দোলন কমিটি গঠন করা হবে। যাতে আন্দোলনের ঢেউ গ্রামেও পৌঁছায়। তবে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরাও আন্দোলন সফল করতে মরিয়া হয়ে রয়েছে।

বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু দ্য রিপোর্টকে বলেন, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তারিখ শেষ হওয়ার পর দেশ স্পষ্ট দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাবে। এক ভাগ নির্বাচনের পক্ষে, অন্য ভাগ অস্বচ্ছ নির্বাচনের বিরুদ্ধে। সেক্ষেত্রে বিরোধীপক্ষের পাল্লা ভারী হয়ে যাবে। নির্বাচনী তরী পার করার জন্য বিএনপিসহ অন্য দলের সমর্থকদের ভোট পাওয়ার আশায় অনেক ক্ষেত্রে কৌশলী হবে। সে সুযোগটাই আন্দোলনকারীদের ব্যবহার করতে হবে। 

এখন যেহেতু শাসক গোষ্ঠী দল এবং বিরোধী জোটকে ভাঙার চেষ্টায় আছে, সে ক্ষেত্রে বিরোধী জোট নিজেদের কর্মীদের প্রতি কঠোর না হওয়ার কৌশল অবলম্বন করতে হচ্ছে। কিন্তু মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তারিখ শেষ হওয়ার পর নিজেদের দলের নেতাকর্মীরা, যারা ফাঁকি দিচ্ছে, তাদের মাঠে থাকার কঠোরতা অবলম্বন করতে পারবে। সেক্ষেত্রে আন্দোলনের নতুন মোড় সৃষ্টি হবে। সরকার তখন দুর্বল হয়ে পড়বে। তখন সরকারের কোনো কূটকৌশলই কাজে আসবে না।

দলটির দপ্তরের এই নেতা জানায় , ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে শুরু করে গতকাল শনিবার পর্যন্ত সারাদেশে সরকারি দল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলায় আহত সাড়ে ৪ হাজারের অধিক নেতাকর্মী। ৪০৭ মামলায় ১৬ হাজারের অধিক নেতাকর্মী আটক,একজন সাংবাদিকসহ ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া গত ২৮ জুলাই থেকে সারাদেশে ৮০০-এর বেশি মামলায় ৬৯ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। প্রায় ২০ হাজার নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৮ হাজারের বেশি।

Link copied!