অক্টোবর ১২, ২০২৩, ০৯:৪০ পিএম
মুক্তিযুদ্ধের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিচারের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন বিএনপি নেতা ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. এম ওসমান ফারুককে। তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অনুসন্ধান শুরুর সাত বছর পর তদন্ত শেষে সম্প্রতি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। কঠোর গোপনীয়তায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন শাখায় এই প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত সংস্থা।
অন্যান্য আসামির ক্ষেত্রে প্রতিবেদন দাখিলের আগে সংবাদ সম্মেলন ডেকে তা গণমাধ্যমকে জানানো হয়। তবে বরাবরের মতো সংবাদ সম্মেলন নয়, বরং ড. ওসমান ফারুকের বিষয়ে অনেকটা গোপনীয়তা অবলম্বন করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
এমনকি এ বিষয়ে জানতে চাইলেও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক এম সানাউল হক।এ মামলায় নিয়োগ পাওয়া প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন বলেন যুদ্ধাপরাধের প্রমান মিলেছে ওসমান ফারুকের বিরুদ্ধে। পর্যালোচনার পর পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।
একটি সূত্র জানিয়েছে, মামলাটি তদন্ত করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান। তদন্ত শেষে দুটি অভিযোগে গত ৩ অক্টোবর চিফ প্রসিকিউটর বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এখন প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে ওসমান ফারুককে গ্রেপ্তার করতে পরোয়ানা জারির জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করা হবে। আর গ্রেপ্তার না হলেও তাঁর অনুপস্থিতিতেই চলবে বিচারকাজ।
জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের দায়িত্ব থাকা সৈয়দ হায়দার আলী বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা প্রতিবেদন পেয়েছি। এখন এ বিষয়ে একজন প্রসিকিউটরকে দায়িত্ব দেব। তিনি আদালতে গ্রেপ্তারের জন্য ওয়ারেন্ট (পরোয়ানা) চাইবেন।’
জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তদন্ত শুরুর পর গোপনে দেশ ছাড়েন ওসমান ফারুক। ২০১৬ সালের মে মাসে সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারত হয়ে যুক্তরাষ্ট্র চলে যান তিনি। বিমানবন্দর দিয়ে দেশ ছাড়তে গেলে বাধার সম্মুখীন বা গ্রেপ্তার হওয়ার আশঙ্কা থেকেই সীমান্তপথ বেছে নেন ওসমান ফারুক।
একটি সূত্র জানিয়েছে, বিশ্বব্যাংকের সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ড. ওসমান ফারুক সে সময় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কোন্নয়নে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার এড়াতে বিএনপির হাইকমান্ডের পরামর্শেই ওই সময় দেশ ছাড়েন তিনি।
এর আগে ২০১৬ সালের ৪ মে তদন্ত সংস্থার সংবাদ সম্মেলনে ওসমান ফারুকের বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের তদন্ত শুরু করার কথা জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তদন্ত সংস্থা থেকে বলা হয়, ১৯৭১ সালে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে যুক্ত ছিলেন এমন ১১ জনের একটি তালিকা নিয়ে কাজ করছে তারা। তাঁদের অধিকাংশই সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা কর্মকর্তা ছিলেন। ওসমান ফারুক তখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রিকালচার ইকোনমি অনুষদের রিডার ছিলেন। ১১ জনের তালিকায় তাঁর নামও রয়েছে।
তবে সে সময় ওসমান ফারুকের বিরুদ্ধে তদন্ত সংস্থার অভিযোগটি হাস্যকর বিষয় বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই অভিযোগ আনা হয়েছে। আমরা এ ধরনের কর্মকাণ্ডের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের শিক্ষামন্ত্রী ড. এম ওসমান ফারুকের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের মে মাসে প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। পরের বছরের ৪ জানুয়ারি থেকে শুরু হয় তদন্ত।
২০১৫ সালের অক্টোবরে ময়মনসিংহ-৭ আসনে জাতীয় পার্টির এমপি এম এ হান্নানের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে ওসমান ফারুকসহ ১১ জনের সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া যায়।
ওসমান ফারুকের বাড়ি কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার হাইধনখালী গ্রামে। তিনি করিমগঞ্জ-তাড়াইল নির্বাচনী এলাকার বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য।
একটি সূত্র জানিয়েছে, বিশ্বব্যাংকের সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ড. ওসমান ফারুক সে সময় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কোন্নয়নে যোগাযোগ রক্ষা করতেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার এড়াতে বিএনপির হাইকমান্ডের পরামর্শেই ওই সময় দেশ ছাড়েন তিনি।