চলতি সপ্তাহে তফসিল ঘোষণার পরপরই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। ভাষণে ভোটের দিনক্ষণ জানানোর পাশাপাশি বিএনপিসহ সব দলকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানানো হবে। যদিও বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো তফসিল ঘোষণার পরপরই অবরোধের পাশাপাশি অসহযোগ ও অবস্থান কর্মসূচি দেবে বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার বিশেষ বৈঠকের সম্ভাবনা
মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের বৈঠক ডাকা হতে পারে বলে জানিয়েছে ইসির সংশ্লিষ্টরা। ওই বৈঠকে তফসিল চূড়ান্ত করা হবে। মঙ্গলবার ইসির সভা হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও তা চূড়ান্ত নয়। কারণ, এ বৈঠক পিছিয়ে বুধ বা বৃহস্পতিবার যেতে পারে। তবে পরিস্থিতির নাটকীয় কোনো পরিবর্তন না হলে এ সপ্তাহের যে কোনো দিন তফসিল ঘোষণা নিশ্চিত।
ভাষণ প্রস্তুত সিইসি’র
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তফসিলের পরপরই সিইসির ভাষণটি সম্প্রচার করা হবে। সিইসির ভাষণ রেকর্ডের জন্য ইতোমধ্যে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। ইসি সভায় তফসিল চূড়ান্ত করার পরপরই ভাষণ রেকর্ড হবে, ওই দিনই তা জাতির উদ্দেশে প্রচার করা হবে।
এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলমান উত্তপ্ত পরিস্থিতি আমলে নিতে চাইছে না ইসি। ইসির মতে, নির্বাচনী পরিবেশ অনুকূলে না থাকলেও সংবিধান রক্ষায় তাদের নির্বাচন আয়োজনের কোনো বিকল্প নেই। সিইসিসহ একাধিক কমিশনার ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছেন, এ সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করা হবে এবং জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোটের দিন ধার্য করা হবে।
ইসি-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার জন্য ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যেই নির্বাচন করতে হবে ইসিকে। ১ নভেম্বর থেকে জাতীয় নির্বাচনের ক্ষণগণনাও শুরু হয়েছে। তফসিল ঘোষণার জন্য ইসির হাতে খুব বেশি সময় বাকি নেই।
ইসি ঘেরাও কর্মসূচি নেই দলগুলোর
তফসিল ঘোষণার পরপরই চলমান অবরোধের পাশাপাশি অসহযোগ, অবস্থান ধর্মঘট বা ঢাকা ঘেরাওয়ের কর্মসূচি নিয়ে আন্দোলনরত দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে নির্বাচন কমিশন অফিস ঘেরাওয়ের কর্মসূচি নেই দলগুলোর। তবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ একমাত্র দল যারা তফসিলের দিন ইসি ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দিয়েছে।
রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া এবং সবার জন্য সমান সুযোগ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) তৈরির আগে কোনো অবস্থাতেই তফসিল ঘোষণা না করার দাবি জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন এ দলটি এতদিন বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে মিলে কোনো কর্মসূচি পালন করেনি। ১০ নভেম্বরের মধ্যে সংসদ ভেঙে ‘জাতীয় সরকারের’ কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য সরকারকে আলটিমেটাম দিয়েছিল। তবে রবিবার ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর রেজাউল করিম সমঝোতা ছাড়াই ইসি একতরফা নির্বাচন করতে চাইলে তফসিল ঘোষণার দিন ঢাকায় ইসি অভিমুখে গণমিছিল করা হবে বলে ঘোষণা দেন।
ভোটের টুকিটাকি
ইসি ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী, ভোটের প্রস্তুতি হিসেবে ইতোমধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে। বর্তমানে ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩। ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকাও প্রকাশিত হয়েছে। এতে কেন্দ্রের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ১০৩। আর ভোটকক্ষের সংখ্যা ২ লাখ ৬১ হাজার ৯১৪। ভোট- সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণসহ আরও কিছু কাজ চলমান। তফসিল ঘোষণার পর ভোটকেন্দ্রের চূড়ান্ত তালিকা, আসনওয়ারি ভোটার তালিকার সিডির শেষ করা হবে। নির্বাচন সামনে রেখে পর্যবেক্ষক নিবন্ধন প্রাথমিক ধাপ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে আরও কিছু পর্যবেক্ষক সংস্থাকে নিবন্ধন দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। চূড়ান্ত হয়েছে বিদেশি পর্যবেক্ষক নীতিমালাও।
ইসি সূত্র জানায়, এবার নির্বাচনী দায়িত্বে থাকবেন ৯ লাখের বেশি সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা। নির্বাচনী সরঞ্জাম কেনাকাটা, নির্বাচনে বিভিন্ন দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের ভাতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ভাতা মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা খরচ হবে। এর বাইরে প্রশিক্ষণে খরচ হবে ১০০ কোটি টাকার বেশি।
সংঘাত ও শোডাউন কমাতে ইসির অ্যাপ
রবিবার নির্বাচন ভবনে ‘অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা ও স্মার্ট নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা’ অ্যাপ উদ্বোধন করা হয়। এই অ্যাপের মাধ্যমে ভোটার তার কেন্দ্র থেকে শুরু করে আসনের সীমানা দেখতে পারবে। এদিকে দুই ঘন্টা পর পর ভোটের আপডেটও জানা যাবে এর মাধ্যমে। তবে অনলাইনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে জোর দিচ্ছে ইসি। শোডাউনসহ বিভিন্ন সংঘাত এড়াতে এই অ্যাপ কাজ করবে বলে জানায় সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল।
অ্যাপ উদ্বোধনকালে তিনি বলেন, নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে শোডাউন সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। এটা করতে গিয়ে আচরণবিধি ভঙ্গ হতে পারে। অনেক সময় হতে পারে সংঘাত। তিনি মনে করেন, অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পদ্ধতির মধ্য দিয়ে এ ধরনের অনাচার কমে আসতে পারে।
অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান বলেন, মনোনয়ন জমা দিতে শত শত মোটরসাইকেল নিয়ে প্রার্থীরা আসেন। এতে তারা শক্তি দেখানোর মাধ্যমে প্রথম দিনেই নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গকারী হয়ে পড়েন। এ অ্যাপের মাধ্যমে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার প্রচলিত সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে নতুন ধারা সৃষ্টি হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আনিছুর রহমান বলেন, এই স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্টে জন্মতারিখ ও মোবাইল নম্বর দিয়েই রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। এ অ্যাপ অধিকতর জবাবদিহি এবং স্বচ্ছতার টুল হিসেবে ব্যবহার হবে। এ কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই সবকিছু স্বচ্ছভাবে করে আসছে বলেও দাবি করেন তিনি।