সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ যে ৫ সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে তাদের নিয়ে দুশ্চিন্তা না করার জন্য অনুরোধ করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
রোববার (২৮ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই অনুরোধ জানান তিনি।
ডিবিপ্রধান বলেন, কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যারা ধ্বংসলীলা চালিয়েছে, বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন লাগিয়েছে, সেই দুর্বৃত্তদের, জামায়াত-শিবির চক্রদের ধরার দায়িত্ব আমাদের কাছে। কেউ যদি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে ও বিভিন্ন জায়গায় বলে, তাদের সঙ্গে যেকোনও সময় যেকোনো কিছু হতে পারে- এটা জানার পর আমাদের নৈতিক দায়িত্ব তাদের নিরাপত্তা দেওয়া। শিক্ষার্থীদের ঘিরে গড়ে ওঠা এই আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে অসাধু একটি চক্র তথা বিএনপি-জামায়াত এই সুযোগে (কোটা আন্দোলনে) অনুপ্রবেশ করে- একটি গণতান্ত্রিক সরকারের পতন ঘটাতে চেয়েছিল। সেই কারণে আমি মনে করি, এই চক্র আবারও শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে কোনওকিছু করে আন্দোলনে কিছু করতে চাইবে। সেজন্যই নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা সমন্বয়কদের ডিবি হেফাজতে নিয়েছি।
তিনি বলেন, “নিরাপত্তার স্বার্থে যাদেরকে আমরা নিয়ে এসেছি, তাদের পরিবারের কাছে অনুরোধ করবো দুশ্চিন্তা করার কোনও কারণ নেই। আমরা মনে করি, তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা দেখছি। তাদের পরিবার যেন নিশ্চিন্ত থাকে সেই বিষয়ে আমরা আশ্বস্ত করতে চাই।”
কোটা আন্দোলনের সমন্বয়কদের ডিবি হেফাজতে কত দিন রাখা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা সমন্বয়কদের সঙ্গে এবং তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলবো।
আরও পড়ুন: ২৮-৩০ জুলাই ১১ ঘণ্টা করে কারফিউ শিথিল
নিরাপত্তার পাশাপাশি সমন্বয়কদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবিপ্রধান হারুন বলেন, “তারা যেহেতু নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদের কাছে রয়েছেন, তারপরও তাদের সঙ্গে আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে কথাবার্তা হচ্ছে।”
আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেবেন প্রধানমন্ত্রী, জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
তিনি আরও বলেন, “আমরা তাদের কাছে জানতে চেয়েছি ঢাবিতে তাদের সুন্দর একটা আন্দোলন ছিল, এই আন্দোলনের সময় তাদের সঙ্গে কারা যোগাযোগের চেষ্টা করেছে বা কারা তাদের উসকানি দিয়েছিল- এসব বিষয়ে আমরা তাদের কাছে জানতে চেয়েছি। তারা কিছু নাম ও নম্বর আমাদের দিয়েছে।”
ডিবি হেফাজতে সমন্বয়কদের মারধর করা হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, “যারা ফেসবুকে লেখালেখি করে তারা অনেকের নাম ধরে বিভিন্ন গুজব ছড়াচ্ছে। আমি বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গেছি- এই গুজবও ছড়িয়েছে। রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নামেও কিন্তু অনেক গুজব ছড়িয়েছে। তাহলে এটাও বিশ্বাসের কোনও কারণ নেই।”
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’র সমন্বয়কদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, “এসব গুজবে আপনারা বিশ্বাস করবেন না। আইনের স্বার্থে আমরা অনেককে বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার করেছি।”
রোববার বিকেলে সমন্বয়কদের পরিবার এবং গতকাল শনিবার বিকেলে ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কে’র প্রতিনিধি দলের দাবি, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’র সমন্বয়কদের যেন পরিবারের কাছে রেখে নিরাপত্তা দেওয়া হয়। এ ছাড়া গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা ডিবিপ্রধান হারুনের সঙ্গে দেখা করতে না পেরে প্রশ্ন তোলেন, আন্দোলনের সমন্বয়কদের কেন পরিবারের কাছে হস্তান্তর না করে ডিবি হেফাজতে রাখা হয়েছে। সংবাদিকরা এই দুই প্রসঙ্গ ওঠালে ডিবিপ্রধান বলেন, “কারা কী বলেছে, আমরা কিছু জানি না। আমাদের কাছে এমন কোনও আবেদন আসেনি। আমাদের কেউ কিছু বলেনি। আমরা নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের নিয়ে এসেছি।”
আরও পড়ুন: চেয়েও ডিবি কার্যালয়ে সন্তানদের দেখা পেলেন না অভিভাবকরা
এ সময় আন্দোলন সম্পর্কে সমন্বয়কদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: এবার সারজিস ও হাসনাতকে নেওয়া হলো ডিবি হেফাজতে
এর আগে গত শুক্রবার নিরাপত্তাজনিত সমস্যা দেখিয়ে নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদারকে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে এবং গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় আরও দুই সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়।