সেনা কর্মকর্তাদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়েই সরকারের সঙ্গে মতপার্থক্য: ইকবাল করিম ভূইয়া

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৫, ১২:১৫ পিএম

সেনা কর্মকর্তাদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়েই সরকারের সঙ্গে মতপার্থক্য: ইকবাল করিম ভূইয়া

ছবি: প্রতীকী

আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনামলে গুম-খুনসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়া সেনা কর্মকর্তাদের কোন প্রক্রিয়ায় বিচার হবে তা নিয়েই অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সেনা নেতৃত্বের দূরত্ব তৈরি হয়েছে বলে দাবি করেছেন সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূইয়া।

তার ভাষ্যে, “অন্তর্বর্তী সরকার ও সেনা নেতৃত্বের দূরত্বের প্রধান কারণ হলো, দীর্ঘ ১৫ বছরের ফ্যাসিস্ট শাসনামলে সংঘটিত গুম, খুন ও দুর্নীতির মতো ভয়ংকর অপরাধে জড়িত সেনা কর্মকর্তাদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে মতপার্থক্য।

“চূড়ান্ত বিচারে সেনাবাহিনী জনগণের পক্ষেই থাকবে, তাই যে অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে তা দূর করা সেনা নেতৃত্বের মূল কর্তব্য।”  

বুধবার বিকালে ‘উপযুক্ত আদালতেই বিচার হতে হবে শিরোনামে দেওয়া এক ফেইসবুক পোস্টে তিনি এ কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ‘গুমের’ ঘটনা তদন্তে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে কমিশন গঠন করে পটপরিবর্তনে আসা অন্তর্বর্তী সরকার। ‘গুমের’ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর মধ্যে কার কী ভূমিকা ছিল, তা গত ৪ জুন জমা দেওয়া কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়।

সেখানে বলা হয়, গুমের বেশির ভাগ ঘটনাই ঘটেছে পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে। গুমের শিকার ব্যক্তি, তার পরিবারের সদস্য ও প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশ, র‌্যাব এবং পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটকে ‘মূল অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

এর বাইরে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) অধিদপ্তর ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার ‘সত্যতা’ পাওয়ার কথা বলেছে কমিশন। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।  

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই বিভিন্ন ‘ব্ল্যাক সাইট’ পরিচালনা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে কুখ্যাত হচ্ছে ‘আয়নাঘর’, যেখানে বন্দিদের সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রেখে চরম নির্যাতন চালানো হত।

এ প্রতিবেদন দেওয়ার দুই সপ্তাহ বাদে সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভুইয়াকে উদ্ধৃত করে কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেছিলেন, সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা এবং র‌্যাবে দায়িত্ব সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গুমে জড়িত থাকার অভিযোগ এলেও সেনাবাহিনী ‘প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এ অপরাধে জড়িত ছিল না। তবে তারা গুমের বিষয়টি ‘জানত’।

আইকেবি নামে পরিচিত ইকবাল করিম ভূইয়া বুধবার বলেছেন, “ফ্যাসিস্ট শাসনের দায় পুরো বাহিনীর নয়; কিছু অফিসার তাদের হীন স্বার্থসিদ্ধির জন্যই এমন অপকর্মে জড়িয়ে পুরো বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। যেহেতু এসব অপরাধ দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে ঘটেছে, তাই জনগণের সত্য জানার ও ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে।

“আস্থা ও সুসম্পর্ক পুনরুদ্ধারে সশস্ত্র বাহিনী এসব অপরাধীর দায় নিজের কাঁধে নেবে না।”

পটপরিবর্তনের পর জেনারেল ইকবাল করিম ভুইয়া তার কর্মজীবনের স্মৃতিচারণা করে নিজের ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে ধারাবাহিকভাবে লিখছেন। তার মধ্যে আওয়ামী লীগের শাসনামলের বিভিন্ন ‘অপকর্ম’, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’সহ বাংলাদেশ সংশ্লিষ্ট সমসাময়িক নানা বিষয় উঠে আসছে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চতুর্দশ প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম বলছেন, “একটি পেশাদার বাহিনী এ ধরনের অপরাধের সাথে যুক্ত হওয়ার কথা নয়। কিন্তু সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থে কাজ করা কিছু অফিসার বাহিনীর সম্মান ক্ষুণ্ন করেছে এবং দেশবাসীর আদালতে প্রতিষ্ঠানটিকে অপরাধী হিসেবে দাঁড় করানোর ঝুঁকি তৈরি করেছে।

“তাই রাষ্ট্রের এত বড় ক্ষতির জন্য দায়ীদের যথাযথ বিচারে রাজি হয়ে সশস্ত্র বাহিনীকে দায়মুক্ত করতে হবে। জনগণের সাথে বিশ্বাস ও ভরসার সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে সমগ্র বাহিনী উদগ্রীব বলে আমি বিশ্বাস করি।”

এ বিষয়ে আরও জানতে ইকবাল করিম ভুইয়ার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

Link copied!