কুমিল্লায় বীর মুক্তিযোদ্ধাকে জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪, ১২:১৪ পিএম

কুমিল্লায় বীর মুক্তিযোদ্ধাকে জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা

ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় এক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করার ঘটনা ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

রবিবার দুপুরে উপজেলার কুলিয়ারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার ১ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সেদিন রাতে ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এ ঘটনায় ইতোমধ্যেই প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনকে ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দেয়া হয়।

ভুক্তভোগী ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম আবদুল হাই ওরফে কানু (৭৮)। তিনি ঘটনাস্থলের পাশের লুদিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা। আবদুল হাই কৃষক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও একই সংগঠনের কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার সাবেক সহসভাপতি।

তার পরিবারের অভিযোগ, লাঞ্ছিতকারীরা সবাই স্থানীয় জামায়াত-শিবিরের নেতা–কর্মী। আবদুল হাইকে এলাকা ছাড়ার জন্য হুমকি দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগেই ওসি সাহেব আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে এভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনা মেনে নেওয়ার মতো না। আমরা ঘটনাটির খোঁজখবর নিয়ে দেখছি। জামায়াত ও শিবিরের কোনো নেতা–কর্মী এই ঘটনায় জড়িত হয়ে থাকলে আমরা অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।’

এদিকে চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি এটিএম বলেন, “বীর মুক্তিযোদ্ধাকে যারা লাঞ্ছিত করেছে, তাদের বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।”

স্থানীয়রা বলছেন, মুক্তিযোদ্ধা কানু কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মুজিবুল হকের রোষানলে পড়ে বিগত ৮ বছর এলাকায় যেতে পারেননি। বাড়িঘরে হামলা করাসহ একাধিক মামলা দেওয়া হয় ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে।

রবিবার দুপুরে বাড়ির পাশের গ্রামে তাকে একা পেয়ে স্থানীয় অন্তত ২০ জন ব্যক্তি তাকে হেনস্তা করে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয়। পরে যারা তাকে লাঞ্ছিত করা হয়। তাদেরই একজন ঘটনার ভিডিও করে।

ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একজন ব্যক্তি মুক্তিযোদ্ধার কানুর হাত টেনে সামনে নিয়ে যাচ্ছেন। কানুর গলায় রশি দিয়ে বাধা কয়েকটি জুতা দেখা যায়। তার আশপাশে ঘিরে ছিল আরো জনা পনের লোক।

এক পর্যায়ে কানু জুতার মালা সরিয়ে এলাকায় থাকার আকুতি জানালেও তাকে এলাকা ছাড়ার হুমকি দিতে থাকেন ঘিরে থাকা লোকজন।

ওই ব্যক্তিদের একজনকে বলতে শোনা যায়– “এক গ্রাম লোকের সামনে মাফ চাইতে পারবেন কিনা?” তখন কানুকে দুই হাত উপরে তুলে মাফ চাইতে দেখা যায়।

ঘটনার পর অসুস্থ অবস্থায় ওই মুক্তিযোদ্ধাকে ফেনীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “স্থানীয় জামায়াত সমর্থক প্রবাসী আবুল হাসেমের নেতৃত্বে অহিদ, রাসেল, পলাশসহ ১০ থেকে ১২ আমাকে একা পেয়ে জোর করে জুতার মালা গালায় দিয়ে ভিডিও করে। আমি বিগত সময়ে তাদের কোনো ক্ষতি করিনি।”

চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি এটিএম আক্তারুজ্জামান বলেন, “ঘটনার পর ওই মুক্তিযোদ্ধা মোবাইল ফোনে বিষয়টি আমাকে জানিয়েছিলেন। তবে এ বিষয়ে তিনি লিখিত অভিযোগ করবেন না বলেও জানিয়েছেন। রাতে ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার আবারও তাকে অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে।”

“আমরা ঘটনায় জড়িতদের নাম-পরিচয় সংগ্রহ করছি। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

অভিযোগ কেন দিতে চাইছেন না– এই প্রশ্নে আব্দুল হাই কানু বলেন, “বিচার কার কাছে চাইব, মামলা দিয়ে আর কী হবে? এমন বাংলাদেশের জন্যই কি জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলাম?”

যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই আবুল হাসেম বা অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফার ডটকম।

তাদের জামায়াত সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন করলে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের আমির মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, “আমরা খোঁজ নিচ্ছি৷ জামায়াতের কেউ জড়িত থাকলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Link copied!