হিজলার জানপুরের ৩ নম্বর খালের মুখে কমপক্ষে আড়াই হাজার জেলেনৌকা রয়েছে। ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু চললেও নদ-নদীতে অবাধে মা ইলিশ ধরা হচ্ছে।
বরিশালের হিজলা, মুলাদি, মেহেন্দীগঞ্জ ও চাঁদপুরের হাইমচর থেকে শুরু করে ভোলার তেঁতুলিয়া পর্যন্ত নদ-নদী, এর অববাহিকা ও শাখানদীগুলোয় কয়েক হাজার ছোট নৌকায় ইলিশ শিকার করা হচ্ছে।
কিছু এলাকায় রাতের বেলা হাটও বসে। এসব হাট থেকে ইলিশ স্পিডবোট ও ট্রলারে সরবরাহ করা হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে। শরীয়তপুর ও ভোলার জেলেরা রাতে মাছ ধরে তীরেই বিক্রি করেন। এসব ইলিশ ১৮টি স্পিডবোটে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে শরীয়তপুর ও মাওয়ায়।
স্থানীয় জেলেদের অভিযোগ, পুরো এলাকায় ইলিশ নিধন কার্যক্রমের নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে হিজলা থেকে। আওয়ামী লীগের তিনজন নেতা নিষেধাজ্ঞা চলার সময় ইলিশ ধরার সাথে জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তাঁরা হলেন হিজলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক ও বড়জালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন হাওলাদার এবং সহসভাপতি ও হিজলা-গৌরব্দি ইউপির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম। তাঁরা তাঁদের প্রতিনিধিদের দিয়ে এসব নিয়ন্ত্রণ করছেন।
ইলিশ নিধন কার্যক্রমে নেতৃত্ব দেন হিজলার কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা। তাঁদের থামানো না গেলে ইলিশ রক্ষার উদ্যোগ কাজে আসবে না। এছাড়াও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চাঁদপুর-সংলগ্ন মেঘনার হাইমচর, বরিশালের হিজলা, মুলাদি, মেহেন্দীগঞ্জ-সংলগ্ন মেঘনা, এর শাখানদী ভোলার তেঁতুলিয়া, মেঘনাসহ এলাকায় জেলেরা ছোট ছোট অসংখ্য নৌকা নিয়ে ইলিশ ধরছেন।
জেলেরা বলছেন, দিনে সাইরেন বাজিয়ে নদীতে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের অভিযান চালানো হলেও রাতে অভিযান থাকে না। তখন জেলেরা দলে দলে নৌকা নিয়ে নদীতে নেমে পড়ে। ছোট ফাঁসের জাল দিয়ে নির্বিচারে শিকার করছে মা ইলিশ ও ছোট ইলিশ।
মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল সদর উপজেলার কালাবদর নদের হবিনগর পয়েন্ট থেকে মেহেন্দীগঞ্জের বামনীরচর পয়েন্ট পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার, মেহেন্দীগঞ্জের গজারিয়া নদীর হাট পয়েন্ট থেকে হিজলা লঞ্চঘাট পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার, হিজলার মেঘনার মৌলভীর হাট পয়েন্ট থেকে মেহেন্দীগঞ্জ-সংলগ্ন মেঘনার দক্ষিণ-পশ্চিম জাঙ্গালিয়া পয়েন্ট পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার এলাকাটি ইলিশের অভয়াশ্রম।
২০১৯ সালে সরকার দেশের ষষ্ঠ অভয়াশ্রম হিসেবে এলাকাটি গেজেটভুক্ত করে। এই সীমানার মধ্যে কালাবদর, আড়িয়াল খাঁ, নয়ভাঙ্গুলী, গজারিয়া ও কীর্তনখোলা নদ-নদী আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্তত ছয়জন জেলে জানান, হিজলা উপজেলার জানপুরের ৩ নম্বর খালের মুখে কমপক্ষে আড়াই হাজার জেলে নৌকা রয়েছে। রাতে শরীয়তপুর ও ভোলার জেলেরা এখানে জড়ো হন। রাতভর মাছ ধরে তীরেই চলে বেচাকেনা। ধরে আনা এসব ইলিশ ১৮টি স্পিডবোটে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে শরীয়তপুর ও মাওয়ায়। আশুলিয়া আবুপুরের অস্থায়ী হাটে শরীয়তপুর মাদারীপুরসহ বিভিন্ন এলাকার পাইকারেরা মাছ বেচাকেনা করেন।
অবৈধভাবে ইলিশ ধরার কাজে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে হিজলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ সিকদার বলেন, ‘আমি রাজনীতি করি। মাছের ব্যবসা কোনো দিনই করিনি। কীভাবে আমার নাম এল, বুঝতে পারছি না। আমি প্রশাসন ও পুলিশকে কঠোরভাবে এসব দমনের অনুরোধ করেছি। কিন্তু আমার নাম জড়ানোটা দুঃখজনক।’
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত হোসেন হাওলাদার বলেন, তিনি এসবের কিছু জানেন না। আপনার দুটি ঘাট আছে এবং আপনার স্বজনেরা আপনার প্রতিনিধিত্ব করছে—এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, দুটি ঘাট নিয়ে মামলা-হামলা নানা কিছু হয়েছে। যারা এসব করছে, তারা সত্য বলছে না।
এ বিষয়ে হিজলা–গৌরব্দি ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এর সাথে আমি জড়িত নই। যাঁরা আমার কথা বলেন, তাঁরা রাজনৈতিক দূরত্ব বা প্রতিহিংসা থেকে বলেন।’