ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে এক দফা দাবির মুখে পদত্যাগ করে গত সোমবার দেশ ছেড়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তার পদত্যাগ এবং দেশত্যাগের পর গত দুদিনে দেশজুড়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত অনেক মন্ত্রী, এমপি ও নেতাদের বাড়িতে হামলা হয়েছে।
এরই জেরে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য ও হুইপ মাশরাফি বিন মোর্ত্তজার বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
সোমবার (৫ আগস্ট) বিকেল ৫টার দিকে মাশরাফির বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা।
তবে মাশরাফীর বাড়ি পোড়ানো এবং ভাঙচুর হলেও ভারতে একটি মহল সেটিকে প্রচার করেছে জাতীয় দলেরই আরেক ক্রিকেটার লিটন দাসের বাড়ি পোড়ানোর ঘটনা বলে। ভারতের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে এটি।
যদিও পরবর্তীতে ভারতের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম এবং পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ডন’ ফ্যাক্টচেক করে আসল তথ্য তুলে ধরেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে হিন্দুত্ববাদ নিয়ে কাজ করা ‘হিন্দুত্ব নাইটস’ নামে একটি পেইজ মাশরাফির বাড়ি পোড়ানোকে লিটন দাসের বাড়ি বলে প্রচার করছে। পেইজটিতে মাশরাফির বাড়ি পোড়ানোর দৃশ্য এবং লিটন দাসের ছবি কোলাজ করে দিয়ে লিখেছে, ‘বাংলাদেশি হিন্দু ক্রিকেটার লিটন দাসের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।`
পোস্টটি ৫ আগস্ট দেওয়া হলেও গত দুই দিনেই ‘ভিউ’ হয়েছে ১৬ লাখেরও বেশি। এই পেইজ থেকে গত দুদিনে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর আক্রমণ বলে অনেক ছবি ও ভিডিও ছড়ানো হচ্ছে।
এক্সে সুনন্দা রয় নামে আরেকটি পেইজ থেকে একই ছবি প্রচার করে লেখা হয়েছে, ‘ইনি লিটন দাস, বাংলাদেশের ক্রিকেটার। বাংলাদেশে তিনি জাতীয় নায়ক, তার বাড়ি ইসলামপন্থীরা পুড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশে একজন এলিট শ্রেণির হিন্দুর এই অবস্থা, তাহলে সাধারণ হিন্দুদের কী অবস্থা ভাবুন!’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে ভারতীয় অনেক অ্যাকাউন্ট থেকে এই তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।
তবে ফ্যাক্টচেক করে আসল তথ্য তুলে ধরেছে ভারতীয় দৈনিক দ্য ইকোনমিক টাইমস এবং পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।
দ্য ইকোনমিক টাইমস জানিয়েছে, পুড়তে থাকা বাড়ির যে ছবি ছড়িয়ে পড়েছে, সেটি লিটন দাসের নয়, মাশরাফির বাড়ি। তাদের প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, ‘বাংলাদেশি ক্রিকেটার লিটন দাসের বাড়ি আন্দোলনকারীরা পুড়িয়ে দিয়েছে? ভাইরাল ভিডিওর পেছনের সত্যিটা এখানে’।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দ্য ডনও সঠিক তথ্য তুলে ধরে জানিয়েছে, বাংলাদেশে সহিংসতায় মাশরাফির বাড়ি পুড়েছে, লিটন দাসের নয়।
পরবর্তীতে এসব প্রতিবেদন শেয়ার দিয়ে সত্য তথ্য জানানোর চেষ্টা করেছেন অনেকেই। আবার অনেকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে হিন্দু-মুসলিম রাজনীতি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।