জুন ৩, ২০২৪, ১২:০০ পিএম
দীর্ঘ যাত্রায় সড়ক পথের তুলনায় ট্রেনে ভ্রমণ প্রায় সবার কাছেই কাঙ্ক্ষিত। ট্রেন স্টেশনের পাশাপাশি অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার ব্যবস্থা থাকার পরেও প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাবে যাত্রীরা এই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ঈদ ও অন্যান্য উৎসবে টিকিটের জন্য কাউন্টারের সামনে যাত্রীদের অনিশ্চিত অপেক্ষা, এবং টিকিট না পাওয়ার ভোগান্তি ও কান্না দেখা যায় প্রতি বছর।
কম ঝাঁকুনি, প্রয়োজনে হাঁটাচলা করার ব্যবস্থা, চলন্ত ট্রেনে টয়লেটের ব্যবস্থা, আলাদা খাবার ক্যান্টিন, মুসল্লীদের জন্য নামাজ পড়ার জায়গাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধার জন্য ট্রেন যোগাযোগ রয়েছে সবারই পছন্দের তালিকায়।
তা স্বত্ত্বেও যে শংকাটি থেকে যায় তা হলো, টিকিট পাওয়া যাবে তো? বিগত বছরগুলোতে ঈদ বা লম্বা ছুটির সময়গুলোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মানুষকে টিকিটের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এমনকি কালোবাজারিদের কাছ থেকে বেশি টাকা দিয়ে হলেও ট্রেনের টিকিট কেনার প্রবণতা প্রমাণ করে রেলপথে ভ্রমণে মানুষের মানুষের আগ্রহ কী পরিমাণ।
২০২২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভিন্ন অনলাইন সেবাসহ ইন্টিগ্রেটেড টিকেটিং সিস্টেম (বিআরআইটিএস) ডিজাইন, ডেভেলপমেন্ট, সাপ্লাই, ইনস্টল, কমিশন, অপারেট, রক্ষণাবেক্ষণ কাজের ভার চুক্তিভিত্তিক দেওয়া হয় অনলাইনে টিকিট বিক্রিকারী কোম্পানি সহজকে। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিটি টিকিটের জন্য কোম্পানিটি পাবে ২৫ পয়সা করে।
অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটতে হলে আপনাকে ভিজিট করতে হবে সহজ পরিচালিত বাংলাদেশ
রেলওয়ের ই-টিকিটিং ওয়েবসাইট https://eticket.railway.gov.bd/ -এ।
এই ওয়েবসাইটের পাশাপাশি অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহারকারীর গুগল প্লে-স্টোর থেকে রেলসেবা অ্যাপটি ডাউনলোড করে নিতে পারেন। অ্যাপটিতেও ওয়েবসাইটের সব সেবা পাওয়া যাবে। তবে এই নিবন্ধটি লেখার সময় পর্যন্ত আইফোন ব্যবহারকারীদের জন্য কোনো রেলসেবা অ্যাপ তৈরি করা হয়নি।
ওয়েবসাইট ও অ্যাপটিতে যাত্রার ১০ দিন আগে থেকে টিকিট ছাড়া হয়। প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত অনলাইনে টিকিট কাটা যায়।
তবে টিকিট কাটার জন্য একজন যাত্রীকে অবশ্যই বাংলাদেশ রেলওয়ের ই-টিকিটিং ওয়েসবসাইটে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
টিকিট কালোবাজারি ও বেআইনি কার্যক্রম ঠেকাতে একজন রেল যাত্রীকে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কেনার আগে অবশ্যই রেলওয়ের ওয়েবসাইটে কিংবা অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
আপনি জাতীয় পরিচয়পত্র, মোবাইল নাম্বার এবং আপনার একটি ইমেইল অ্যাড্রেস ব্যবহার করতে হবে।
যাদের বয়স ১৮ বছরের কম এমন অপ্রাপ্ত বয়স্ক যাত্রীদের বেলায় জাতীয় পরিচয়পত্রের বদলে জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট ব্যবহার করতে হবে। আর বিদেশি যাত্রীদের ক্ষেত্রে তাদের পাসপোর্টের তথ্য ব্যবহার করে নিবন্ধন করতে হবে।
তবে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র ব্যবহার করে যদি অন্যকেউ রেজিস্ট্রেশন করে থাকে, তা বাতিল করে আপনার নিজের নামে রেজিস্ট্রেশন করতে হলেও আপনাকে support@eticket.railway.gov.bd এই ই-মেইল অ্যাড্রেসে যোগাযোগ করতে হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের ই-টিকিটের ওয়েবসাইট অথবা রেলসেবা ওয়েব সাইটে আপনি যেকোনো ট্রেন তথ্য জানতে পারবেন। তার মধ্যে রয়েছে প্রারম্ভিক স্টেশন থেকে ট্রেনটি ছাড়ার সময়, গন্তব্যে পৌঁছানোর সময়, সাপ্তাহিক ছুটির দিন, যাত্রাপথের সম্ভাব্য সময় এবং দূরত্ব সবই জানা যাবে।
তা জানার জন্য আপনাকে ট্রেন ইনফরমেশন বাটনে ক্লিক করে ট্রেনের নাম লিখে সার্চ করতে হবে। সার্চ করলেই আপনি আপনার কাঙ্খিত ট্রেনের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন।
ট্রেনের ব্যাপারে জানার পর টিকিট কাটার জন্য আপনাকে ওয়েবসাইট কিংবা অ্যাপের হোম পেইজে আপনার যাত্রা শুরুর স্টেশন, গন্তব্য, যাত্রার তারিখ এবং ভ্রমণের জন্য তাপানুকুল (এসি), শোভন চেয়ার, শোভন, কিংবা সুলভের মতো সম্ভাব্য একটি শ্রেণি দিয়ে সার্চ দিতে হবে।
তারপর ওয়েবপেইজে সেইদিন আপনার অভীষ্ট গন্তব্যে যাওয়া সবগুলো ট্রেনের তালিকা ভেসে উঠবে। সেইসঙ্গে ট্রেনগুলোর ছেড়ে যাওয়া, পৌঁছানো এবং যাত্রাপথের সময়য়ের পাশাপাশি প্রতিটি ট্রেনের কোন কোন ভ্রমণ শ্রেণির (ক্লাস) কতগুলো টিকিট সেইমুহূর্তে (অনলাইন ও কাউন্টার মিলিয়ে) অবিক্রীত রয়েছে তা আপনি দেখতে পারবেন।
• তারপর আপনি ড্রপ-ডাউন ম্যানু থেকে সেই ট্রেনটির কোন বগিতে কতটি সীট ফাঁকা রয়েছে তা দেখতে পাবেন।
• আপনার পছন্দমত ফাঁকা বগিতে ক্লিক করলে সি বগির আসন বিন্যাস দেখতে পাবেন।
• রঙিন চিহ্নিত আসনগুলো ইতোমধ্যে বিকরি হয়ে যাওয়া, আর সাদা গুলো তখনও অবিক্রীত রয়ে গেছে।
• আপনার পছন্দসই এক বা একাধিক আসনকে বাছাই করে, ওয়েবে পেইজের বাম পাশে কন্টিনিউ পারচেজ বাটনে ক্লিক করুন।
• একাধিক যাত্রীর জন্য তাদের নাম পরিচয় পত্র প্রদান করেতে হবে। এর জন্য মোট পাঁচ মিনিট সময় পাওয়া যাবে।
• তারপর পেমেন্ট মেথড থেকে মোবাইল ব্যাংকিং কিংবা অনলাইন ব্যাংকিং নির্ধারণ করুন।
• পেমন্ট মেথড বাছাই করলে, আপনি যে নাম্বারটি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করেছেন সেই নাম্বারে একটি চার সংখ্যার ওটিপি (OTP) কোড আসবে। পুরো ট্রানজেকশনটি সম্পন্ন করতে আপনি ১৫ মিনিট সময় পাবেন।
• আপনার বিকাশ, নগদ, রকেট কিংবা উপায় অ্যাকাউন্ট কিংবা অনলাইন ব্যাংকিং মাধ্যম দিয়ে পেমেন্টটি সম্পন্ন করুন।
• পেমন্ট সম্পন্ন হলে আপনার ইমেইল এড্রেসে অনলাইনে কেনা টিকিটের সফট কপি পাঠানো হবে। আপনার ইমেইলের ইনবক্সে সরাসরি টিকিটটি পাওয়া না গেলে জাংক বা স্মাপ বক্স কাউন্ট করুন।
• টিকিটটি ডাউনলোড করে সংরক্ষণ করুন।
• ১৫ মিনিটের মধ্যে পেমেন্ট না করলে আপনার বুকিংটি বাতিল হয়ে যাবে। তারপর আবার প্রথম থেকে শুরু করতে হবে।
• অনলাইনে ট্রেনের টিকিট ফেরত দিতে হলে আপনাকে বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইটে লগ-ইন করে পারচেজ হিস্ট্রিতে যেতে হবে।
• পারচেজ হিস্ট্রি থেকে আপনার কেনা টিকিটটিতে ক্লিক করে ক্যানসেল করতে হবে।
• তারপর আপনার ফোনে একটি ওটিপি (OTP) কোড আসবে। কোডটি ওয়েবসাইটে দিলে আপনার বুকিংটি বাতিল হয়ে যাবে, এবং অনলাইনে অন্যান্যদের অবমুক্ত হয়ে যাবে।
• তবে ঈদের স্পেশাল টিকিট ফেরত দেওয়া যাবে না।
• কোনো কারণে অনলাইনে পেমেন্ট হয়ে যাওয়ার পরও টিকিট পারচেজ না হলে আট কার্যদিবসদের মধ্যে মোবাইল ব্যাংকিং এবং অনলাইন ব্যাংকিং কর্তৃপক্ষ টাকা ফেরত প্রদান করবে।
• তবে টিকিটের সবধরণের অনলাইন ট্র্যানজেকশন ফি অফেরতযোগ্য।
• রিফান্ডের জন্য বিকাশ গ্রাহকের ১৬২৪৭, নগদ গ্রাহকেরা ১৬১৬৭, রকেট বা ডিবিবিএল নেক্সাস গ্রাহকেরা ১৬২১৬ এবং উপায় গ্রাহকেরা ১৬২৬৮ এই নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারেন।
• টিকেট রিফান্ডের ক্ষেত্রে যাত্রার কত আগে বুকিং বাতিল করা হয়েছে তার তুলনায় প্রয়োজনীয় ফি-কেটে নেওয়া হবে।
অতীতে যেখানে কখনও কখনও টিকিট কাটার জন্য টানা কয়েকদিন স্টেশনে লাইনে অপেক্ষা করতো যাত্রীরা। তারপরও টিকিট না পেয়ে যাত্রীদের আহাজারির চিত্র অহরহ আসতো গণমাধ্যমে। সেখানে এখন হাতের মুঠোয় পাওয়া যাচ্ছে অনলাইনে ট্রেনের টিকিটসহ রেলের বেশীরভাগ সেবা। যা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের মাধ্যমে আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে টেকশই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে।